নিউইয়র্কে ভ্যাকসিন না নিয়ে চাকরিচ্যুত দেড় হাজার
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:৪৫
করোনা ভ্যাকসিন না নেওয়ায় নিউইয়র্কের প্রায় দেড় হাজার কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন। নগর কর্তৃপক্ষের দেওয়া বাধ্যতামুলক ভ্যাকসিন নেওয়ার চূড়ান্ত সময়সীমা ছিল শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি)।
নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত করোনা ভ্যাকসিন না নেওয়ায় এক হাজার চারশ ৩০ জন কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুত করে নগর কর্তৃপক্ষ। নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষের কার্যালয় সূত্র এ খবর জানিয়েছে।
নগর কর্তৃপক্ষ জানায়, সিটি প্রশাসন শুক্রবার পর্যন্ত সিটির কর্মচারীদের ভ্যাকসিন নেওয়ার চূড়ান্ত সময়সীমা ছিল। সিটির জনশক্তির মধ্যে ভ্যাকসিন না নেওয়া আরও যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী রয়েছেন, যারা চাকুরিচ্যুতির আশঙ্কা করছেন। ভ্যাকসিন না নিলে চাকরি হারাতে হতে পারে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সদ্য সাবেক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। তা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছেন নবনির্বাচিত মেয়র এরিক অ্যাডামস।
অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ ঘোষণা এসেছিল তার প্রতি জোরাল সমর্থন ছিল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের। বাইডেন প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত ছিল ফেডারেল কর্মচারীদের জন্য। এর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন নিতে অনিচ্ছুকরা আদালতে গেলে, এ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপের সুযোগ নেই বলে রায় দেয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে সিটি কর্মচারিদের যারা ভ্যাকসিন নিতে রাজি নন তারা ছাড় পেয়ে যাবেন বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু তা হয়নি, বিষয়টি এখন সিটির অসংখ্য কর্মীর রুটিরুজির ওপর আঘাত হিসেবে আসতে শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সিটিতে তীব্র বিরোধিতার মুখে ভ্যাকসিন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে সংশ্লিষ্ট সিটি প্রশাসনগুলো পিছু হটলেও নিউইয়র্কের ক্ষেত্রে সিটি মেয়র চাপের মুখে ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার ওপর অটল থেকে কর্মী ছাঁটাইয়ের মত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পিছু হটেননি। এমনকি আদালতে মামলা হলেও ধোপে টিকেনি ভ্যাকসিনবিরোধী তৎপরতা।
অরিগন স্টেটের সবচেয়ে বড় সিটি পোর্টল্যান্ডে সেখানকার পুলিশ ইউনিয়ন ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ফলে পুলিশ প্রশাসনকে শেষ পর্যন্ত ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন না করে ভ্যাকসিন নেওয়া সংশ্লিষ্টদের ঐচ্ছিক ব্যাপার বলে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
লাস ভেগাসে ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে চাপের মুখে জানুয়ারি মাসে সেখানকার ভ্যাকসিন ম্যান্ডেট তুলে নেওয়া হয় এবং পুলিশ বিভাগে নতুন পুলিশ অফিসার নিয়োগে লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য ভ্যাকসিন নেওয়ার আবশ্যকতা নেই বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
এদিকে, দেড় হাজার কর্মীর চাকুরিচ্যুতি সম্পর্কে ওয়াশিংটন একাসমিনারের পক্ষ থেকে নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মেয়র অফিস জানিয়েছে, যাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে, তারা ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভ্যাকসিন নিতে অথবা ভ্যাকসিন না নেওয়ার যৌক্তিক কারণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সিটি প্রশাসন এর আগের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পর্যন্ত চাকুরিচ্যুত অধিকাংশ কর্মীকে ছুটিতে রেখেছিল, অনেকের চাকরি আদালতের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত বহাল রয়েছে।
এখন যারা চাকুরিচ্যুত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের কর্মী বলে জানা যাচ্ছে। চূড়ান্ত সময়সীমা ঘনিয়ে আসার আগেই কিছুসংখ্যক শিক্ষক ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকেছেন এবং তারা ভ্যাকসিন না নেওয়ার পক্ষে ধর্মীয় কারণ দেখিয়েছেন, যা আদালত গ্রাহ্য করেনি। বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিমকোর্ট তাদের যুক্তি খারিজ করেছে।
সারাবাংলা/একেএম