সার্চ কমিটিতে নিরপেক্ষ কেউ নেই: ড. কামাল
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১২:২০
ঢাকা: নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে সার্চ কমিটিতে নিরপেক্ষ কোনো ব্যক্তি নেই বলে অভিযোগ করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) নাগরিক সমাজ আয়োজিত বর্তমান জাতীয় সংকট এবং সমাধানের নাগরিক ভাবনা শীর্ষক সেমিনারে ড. কামাল হোসেন এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার এবং আমরা একত্রিত হয়ে গেছি। ফলে সার্চ কমিটি বলুন আর অনুসন্ধান কমিটি বলুন কেউ নিরপেক্ষ খুঁজে বের করতে পারবে না।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দেশ আজ সর্বগ্রাসী সংকটে নিমজ্জিত। রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আজ ভগ্নদশা। জনগণের দাবি যখন নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন করা, ঠিক তখন সরকার দেশ ও জাতির বিবেককে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তড়িঘড়ি করে আইন প্রণয়ন করেছে সার্চ কমিটি গঠনের জন্য। যা নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন বলে প্রচার করা জাতির সঙ্গে তামাশা ও এক মহা প্রহসনমাত্র।’
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বেলার প্রধান নিবার্হী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
কামাল হোসেন বলেন, ‘রাজনীতি অর্থনীতি শিক্ষা সামাজিক সংস্কৃতি অস্থিরতা। স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার, জানমালের নিরাপত্তা অধিকারসহ মানুষের মৌলিক মানবাধিকারসমূহ প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী দুর্নীতি সন্ত্রাস চাঁদাবাজি দ্রব্যমূল্য লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি গুম খুন ধর্ষণ নির্যাতন ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড প্রশাসনের নির্লজ্জ দুই হাজার কুড়ি কারণে রাষ্ট্র সাধারণ নাগরিক দিশেহারা।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে এবং সঠিক বৈদেশিক নীতির অভাব ও দুর্নীতির জন্য আমাদের শ্রমবাজার ক্রমান্বয় সংকুচিত হয়ে আসছে।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হয় না, অস্তিত্ব থাকে না। জনগণের ক্ষমতার রোহিত হয়ে যায়, যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা পরিপন্থী।’
তিনি বলেন, ‘দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ৭২ সালে সংবিধান রচিত হয়েছিল দুঃখজনক হলেও সত্য যে দেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সে সংবিধান বহুলাংশে উপেক্ষিত। আজ দেশের সেই মালিকগণ তাদের মালিকানা হারিয়েছেন। দেশের জনগণ একটি অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন চায় তারা তাদের সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ কর্তৃত্ববাদী ও গণতান্ত্রিক শাসনের অবসান চায়। আমাদের একটি অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নয় জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। জনগণ নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনোভাবেই জানেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও সরকার কোন রোগ বা বিশ্বাস করতে না পারে তা নিশ্চিত করা। স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কেউ করতে পারবে না তাহলে নির্বাচন কমিশন নতজানু মানসিকতা ও সরকারের আজ্ঞাবহ তা পরিত্যাগ করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে।’
ড. কামাল হোসেন, ‘পাড়ায় পাড়ায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানান। আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য জনগণকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণ ঐক্যবদ্ধ না হলে এই অব্যবস্থাপনার নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবেন।’
ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ব্যবস্থা পুনর্গঠিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতে পারে না।’
ড. আকবর আলি খান আমেরিকার নির্বাচন পদ্ধতিসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নিরপেক্ষতা তুলে ধরে বলেন, ‘বর্তমান সমস্যা রাতারাতি করা সম্ভব নয়। সংবিধান সংশোধন করতে হবে। জাতীয়তাবাদ গড়ে তুলতে হবে। সরকার এবং আমাদের মধ্যে সাহস আনতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে। দেশের রাজা দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই অবৈধ’ সরকারের জবাবদিহিতা নেই। যখন রাষ্ট্রপরিচালনায় অবৈধ সরকার থাকে তখন লুটপাট অরাজকতা সৃষ্টি হবে।’
তিনি বলেন, ‘অতীতে বিএনপি সরকার খারাপ ছিল। তবে বর্তমান সরকারের মত এত জঘন্য ছিল না।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই সরকার আগামীতে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সার্চ কমিটি গঠন করেছে তাদের অনুগত ব্যক্তিদের নিয়ে। এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হতে পারে না। রাষ্ট্র ক্ষমতায় শেখ হাসিনা থাকলে সে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে না।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে