Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রভাতফেরির সঙ্গী সবাই, গন্তব্য শহিদ মিনার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৫৯

ঢাকা: পরনে সাদা-কালো পোশাক। হাতে ফুল। খালি পা। এই বেশে ভোরেই যেন গোটা শহর নেমেছে পথে। তাদের সবার গন্তব্য এক— শহিদ মিনার। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলার মানুষের মুখের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার লড়াইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই আয়োজন। আলো ফোটা সকালে শহিদ মিনার অভিমুখে এই যে পদযাত্রা, প্রভাতফেরি নামে সেই পদযাত্রা বয়ে নিয়ে চলেছে অগ্রজদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।

সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ঢাকায় প্রভাতফেরির মিছিল শুরু হয় ভোর থেকেই। এর আগে একুশের প্রথম প্রহরেও শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। শ্রদ্ধা জানায় গুরুত্বপূর্ণ সব রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এরপরই সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে।

সকালে শহিদ মিনার চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, ভাষা শদিদদের শ্রদ্ধা জানাতে শিশু-যুবক-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের ভিড়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এসেছেন নিজেদের ভাষার অধিকার যারা ছিনিয়ে আনতে গিয়ে প্রাণ বলিদান দিয়েছিলেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে তাই বেশ সকালেও প্রভাতফেরির লাইন বেশ লম্বা। সেখানে হাতে হাতে ফুল, ফুলের তোড়া। সংগঠনের পক্ষ থেকে যারা এসেছেন, তাদের হাতে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড। এসব সংগঠনের বাইরেও রয়েছে রাজধানীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়েই এসেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব দল।

প্রভাতফেরিতে জনতার এই ঢলকে সুশৃঙ্খলভাবে বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ দিতে কাজ করে যাচ্ছে স্কাউটস ও বিএনসিসি সদস্যরা। তারা বলছেন, প্রতি বছর এই দিনটিতে তারাই শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার কাজটি করে থাকেন। এ কাজে তাদের কোনো ক্লান্তি নেই। বরং সবাই খুব উৎসাহের সঙ্গে প্রতিবছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। তারা সুযোগ পান, নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন।

পাশাপাশি শহিদ মিনার চত্বরে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। তবে তাদের মূল কাজটি নিরাপত্তা তল্লাশি। এর বাইরে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরা মাস্ক ও হাত ধোয়ার বিষয়য়ক সচেতনতামূলক কাজগুলোতে নিয়োজিত।

এ বছর করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ জন প্রতিনিধি, ব্যক্তি পর্যায়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ দু’জনকে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ রাখা হয়েছিল। বাস্তবে দেখা গেছে, এই নিয়মগুলো বলতে গেলে কেউই মানছেন না। ব্যক্তিগত পর্যায়েও যেমন অনেকে দলবেঁধে এসেছেন, তেমনি সংগঠনগুলোকেও পাঁচ জনের বিধিনিষেধ মানতে দেখা যায়নি।

স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের অংশ হিসেবে শহিদ মিনারের প্রতিটি প্রবেশমুখেই দেওয়া হয়েছে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও তরল সাবান। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পলাশী মোড় থেকে শহিদ মিনার পর্যন্ত রাস্তায় তিন ফুট পরপর চিহ্ন দেওয়া আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে স্বেচ্ছাসেবকেরা হ্যান্ড মাইক দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি সার্বক্ষণিক বলে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ হচ্ছে কি না, সেটিও তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে সেটি যে যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে না, সেটি স্পষ্টিই দেখা গেল বেশিরভাগ জায়গাতেই।

রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে। সব জায়গাতেই একুশের প্রথম প্রহরেই শুরু হয়েছে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোকে দিবসটি পালন করতে বলা হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষা শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ প্রার্থনারও আয়োজন করা হয়েছে।

ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান গঠন হলেও পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ছিল যোজন যোজন বৈষম্য। পশ্চিম পাকিস্তানিরা শোসকগোষ্ঠীতে পরিণত হলে এই ভূখণ্ডের মানুষকে নিজেদের ভাষার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করে। ১৯৫২ সালের এই দিনে (২১ ফেব্রুয়ারি, ৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) সেই বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের জন্য ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্র-জনতা মিছিল বের করলে তাতে গুলি চালায় পাকিস্তানি পুলিশ বাহিনী। সেই গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ কয়েকজন প্রাণ হারান। এরপর থেকে দিনটি শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।

পরে মাতৃভাষার অধিকার আদায়ে দিবসটির গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের সব দেশই দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করছে।

ছবি: সুমিত আহমেদ

সারাবাংলা/টিএস/টিআর

একুশে ফেব্রুয়ারি টপ নিউজ প্রভাতফেরি শহিদ দিবস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর