Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জিহাদের হাতে ‘বর্ণমালার মানচিত্র’

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:০০

ঢাকা: স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রের রূপ সবারই চেনা। তবে মানচিত্র যদি হয় বাংলা বর্ণমালায় ঠাসা— তা একটু ভিন্নধর্মী আকর্ষণের মাত্রা তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী জিহাদ বিন ফয়েজের হাতে বর্ণমালার সমাহারে চিত্রায়িত হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র। মহান ভাষা আন্দোলনের ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানটিও ক্যালিগ্রাফি শিল্পের আদলে চিত্রায়িত করেছে জিহাদ।

ক্যালিগ্রাফি ও অ্যাম্বোগ্রাফি— জিহাদের হাতে আঁকা মানচিত্রটি উভয় ঘরানার শিল্পের মিলবিন্যাস। ক্যালিগ্রাফি মূলত শব্দ আঁকার অনিন্দ্য সুন্দর একটি শিল্প। এতে বর্ণের নিয়মানুগ ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, অ্যাম্বোগ্রাফি হলো বর্ণ দিয়ে বস্তুর আকৃতি বুঝানো।

জিহাদের আঁকা একটি ছবিতে খালি চোখে গাছের আকৃতি বোঝা গেলেও ভালোভাবে চোখ রাখলে দেখা মিলবে— ‘মধ্যবিত্ত পরিবার’ লেখাটি। এটি একটি অ্যাম্বোগ্রাফি।

এমন অসাধারণ সব শিল্পকর্ম করেন জিহাদ বিন ফয়েজ। জিহাদ চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরানিক সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী। ছোটোবেলায় আরবি ক্যালেন্ডারে কারুকার্যমণ্ডিত চিত্র দেখে অবাক হতেন জিহাদ। সময়ের পরিক্রমায় উচ্চমাধ্যমিকে পড়াকালীন কলম দিয়ে বাংলায় কিছু একটা লিখতে গিয়ে জিহাদ আবিষ্কার করেন— লেখাটি ক্যালিগ্রাফির রূপ ধারণ করে। প্রফেশনালভাবে ক্যালিগ্রাফি শেখার ভূত চাপে জিহাদের মাথায়। তবে চট্টগ্রাম শহরে প্রফেশনালভাবে ক্যালিগ্রাফি শেখায় এমন কারোর খোঁজ না পাওয়ায় বাসায় বসে বসে আরবি হরফগুলো গুগল থেকে দেখে নিজেই অনুশীলন করতে শুরু করেন তিনি।

ক্যালিগ্রাফির মধ্যে জিহাদ খুঁজে পেয়েছেন শিল্পের ভালোবাসা। বাংলা বর্ণ নিয়ে শিল্পের খেলা খেলা খেলতে পছন্দ করেন জিহাদ। ক্যালিগ্রাফি শিল্পে দারুণ মেধাবী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী পেয়েছেন একাধিক স্বীকৃতি। ২০২১ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্প পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় স্থান পায় জিহাদের বাংলা ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছেন জিহাদ। করোনাকালীন বিভিন্ন দেশের ক্যালগ্রাফি শিল্পীদের শিল্পকর্ম নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। ভারতে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় ৩৪টি রাষ্ট্র অংশ নেয়। এতে জিহাদের আঁকা একটি ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং স্থান পায়। এছাড়া ইন্দো-ইরানের আন্তর্জাতিক আর্ট ও ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায়ও তার একটি ক্যালিগ্রাফি স্থান পায়।

দেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্পের ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে মাথায় রেখে ভবিষ্যতে ক্যালিগ্রাফি শিল্প নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় আছে জিহাদ বিন ফয়েজের। এ বিষয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন তিনি। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এ শিল্পের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা দেশে বেড়েই চলেছে দিন দিন। চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতে হচ্ছে। বর্তমানে আরবিসহ বাংলা ও ইংরেজি ক্যালিগ্রাফির চাহিদা অনেক। বিয়ে ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ক্যালিগ্রাফি উপহার হিসেবে দিচ্ছে। প্রিয় ব্যক্তির নাম, প্রিয় প্রতিষ্ঠানের নাম ও লোগো, নতুন দম্পতির নামসহ সুন্দর হাতের লেখার চিঠিও উপহার হিসেবে অর্ডার দিচ্ছে। আমি এই শিল্পের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাই।’

নিজের শিল্পকর্ম-কেন্দ্রিক Zehad’s art নামে একটি পেইজ আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এর মাধ্যমে নিজের ক্যালিগ্রাফি শিল্পের বিষয়াদি মানুষের সামনে তুলে ধরেন জিহাদ।

ক্যালিগ্রাফি কিংবা হস্তশিল্প— এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন জানিয়ে জিহাদ আরও বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এখনো হাতে লেখা সনদপত্র শিক্ষার্থীদের দিয়ে আসছে। জানি না এ ধারাটি কতদিন থাকবে। স্থায়ীভাবে এ শিল্পকে বিকাশিত করতে হলে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। শিল্পী বেঁচে থাকে তার কাজের মধ্যে। আমরা যারা কাজ করছি, বেসরকারি বা নিজস্ব উদ্যোগে, এখানে সরকারিভাবে যদি সহযোগিতা পাওয়া যায়, তাহলে এই শিল্পে মনোযোগী হতে উৎসাহ জোগাবে।’

ক্যালিগ্রাফি ও অ্যাম্বোগ্রাফি জিহাদ টপ নিউজ বর্ণমালার মানচিত্র


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর