জানুয়ারি শেষ, ফেব্রুয়ারিতেও কর্মী পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ!
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৩৩
ঢাকা: তিন বছর আগে দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগে বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো। তবে গত ডিসেম্বরে দুই দেশের মধ্যে এক সমঝোতা সইয়ের মাধ্যমে মালেশিয়ায় কর্মী পাঠানোর পথ উন্মুক্ত হয়। কথা ছিল জানুয়ারি থেকেই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হবে। কিন্তু জানুয়ারি শেষ হয়ে ফেব্রুয়ারিও বিদায় নিতে চলেছে। তারপরও দেশটিতে কর্মী পাঠাতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে এখনো কারিগরি বিষয়ই চূড়ান্ত করা যায়নি। যদিও কর্মকর্তাদের দাবি, এ নিয়ে কাজ করছেন তারা।
এদিকে, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকা কর্মীদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। শেষ হয়ে আসছে পাসপোর্টের মেয়াদও। আবার অনেকের বিদেশ যাওয়ার বয়সের সীমাও পেরিয়ে যাচ্ছে। তবে কর্মী নিতে অনেকটা এগিয়েছে মালয়েশিয়া। দেশটির সরকার নিয়োগদাতাদের কাছ থেকে কর্মী চাহিদার আবেদন নেওয়া শুরু করেছে।
গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার মালেশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা সইয়ের মধ্য দিয়ে সোর্স কান্ট্রি হিসেবে শ্রমবাজারে ফের যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর নতুন বছরের শুরুতেই কর্মী পাঠানোর কথা বলেছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। ওই সময় তিনি বলেন, ‘যে সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সে সিন্ডিকেট এবার সুযোগ পাবে না। দেশের সব নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সিই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে।’
কিন্তু গত জানুয়ারিতে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে ২৫০ এজেন্ট সম্বলিত একটি সিন্ডিকেট গ্রুপের নাম আসে সামনে। আর সেটা পাঠানো হয় মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকেই। এরপর থেকে দেশের সিন্ডিকেটের বাইরে থাকা রিক্রুটিং এজেন্সি ব্যবসায়ীরা নানাভাবে এর প্রতিবাদ করে আসছে। তাদের দাবি, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সিন্ডিকেট থাকলে আগের মতো বাজার শুরু করাই মুশকিল হয়ে পড়বে। বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকরা এরই মধ্যে সিন্ডিকেট ভাঙতে কয়েক দফা দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে। এছাড়া সংবাদ সম্মেলন করেছেন দফায় দফায়।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুধুমাত্র সিন্ডিকেটের কারণেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়। ওই সময়ে অভিবাসন ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি কর্মীরা দেশটিতে যেতে নানা হয়রানিরও শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবারও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী পাঠালে বাজারটি চালু করা নিয়েই সংশয় তৈরি হবে।’
যদিও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ সিন্ডিকেটের বিরোধিতা করেছেন। ইতোমধ্যে এ নিয়ে মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘নিজেদের কর্মীদের র্স্বাথে যতটা সম্ভব দেন-দরবার অব্যাহত রাখব।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রন রাখাই এবার অন্যতম লক্ষ্য।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে কারিগরি বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। এর মধ্যে রয়েছে- মালয়েশিয়া যেতে মাথাপিছু খরচ, ডাটা ব্যাংকে কীভাবে নিবন্ধন করতে হবে, তা কবে থেকে শুরু করা যেতে পারে। আরও রয়েছে, দেশে একটি অনলাইন পদ্ধতি চালু করা এবং তা মালয়েশিয়া সরকারের কেন্দ্রীয় অনলাইন পদ্ধতির সঙ্গে কীভাবে যুক্ত করা যায় তার ব্যবস্থা করা।
এ প্রসঙ্গে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক শহিদুল আলম সারাবাংলাকে জানান, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএমইটির ডাটা ব্যাংক থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো হবে। যদিও এমন কোনো ডাটা ব্যাংক বিএমইটি আগে করেনি। যারা বিদেশ যাচ্ছেন তাদের সব তথ্য রয়েছে বিএমইটির কাছে। কিন্তু যারা যেতে ইচ্ছুক তাদের কোনো তথ্য নেই। এখন এই বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।
এদিকে মালয়েশিয়া সরকারের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, দেশটি নিয়োগ দাতাদের কাছ থেকে কর্মী চাহিদার আবেদন গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩২ জন কর্মীর চাহিদা জানিয়ে নিয়োগদাতারা আবেদন করেছেন। এর মধ্য থেকে ৩০ হাজারের বেশি কর্মীর চাহিদাপত্রে অনুমোদনও দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ পুরনো চাহিদাপত্র নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে মালয়েশিয়া অংশে কর্মী নিয়োগের কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও সমঝোতা স্মারক সইয়ের দুই মাস পার করেও কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে বিমানভাড়াসহ মালয়েশিয়া অংশের সব খরচ নিয়োগদাতার বহন করার কথা। আর বাংলাদেশের অংশে পাসপোর্ট তৈরি, কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কল্যাণবোর্ড সদস্য ফিসহ আনুষাঙ্গিক খরচ কর্মীর বহন করার কথা রয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম