Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগাছা-পরগাছা নিয়ে বাঙালিকেই ভাবার আহ্বান শেখ হাসিনার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২০:৩০

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, মহৎ অর্জনের জন্য মহান আত্মত্যাগ দরকার। আর সেটাই আমরা করতে পেরেছি। আমাদের এই মর্যাদা নিয়েই চলতে হবে। জাতির পিতা একটা কথা বলতেন, বাংলাদেশের মাটি এত উর্বর যে, এখানে যেমন অনেক ফসলও হয়, আবার সেখানে আগাছা-পরগাছাও জন্মে। আগাছা থাকবে এটা ঠিক। আগাছার কী করতে হবে, সেটা বাঙালিকেই ভাবতে হবে।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।

ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছয় দফা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুব অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ তা গ্রহণ করল। তারা এমনভাবে গ্রহণ করল যে, এটা তাদের মুক্তির সনদ। এই ছয় দফা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল; ঠিক যেমন ভাষা আন্দোলন মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল।’

বঙ্গবন্ধুর জেল জীবনের কথা স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পরিবারের কেউ জানতেই পারেনি- উনি কেমন আছেন, কোথায় আছেন, বেঁচে আছেন কি না, সেটা জানার কোনো ক্ষমতা আমাদের ছিল না। যখন আগরতলা মামলা শুরু হলো বা মামলা দেওয়া হলো তখনই তার সঙ্গে কোর্টে প্রথম দেখা। তখন জানলাম যে, উনি বেঁচে আছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন এই বাঙালির জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য। মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ের জন্যই সংগ্রাম করে গেছেন তিনি।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সংগঠন এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে আমরা যে সংগ্রাম করেছিলাম তা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে। তখন বাধ্য হয়ে আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে এবং ২২ ফেব্রয়ারি ১৯৬৯ সালে তিনি মুক্তি পান।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারপর তো অসহযোগ আন্দোলন। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। যে ভাষণ আজ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।’ এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এভাবেই কিন্তু একটি জাতিকে ভাষার আন্দোলন থেকে নিয়ে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধ বিধস্ত দেশ গড়ে তুললেন। স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা জাতিসংঘ দিয়েছিল। যেটা অসাধ্য সাধন ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু তারপর ৭৫’-এর ১৫ আগস্ট। ১৫ আগস্টের ঘটনার পরে আমাদের সাংস্কৃতির উপর আঘাত। এই আঘাত যেমন পাকিস্তান আমলে বার বার এসেছে, ৭৫’র পরে ঠিক একইরকম চেহারা দেখলাম। দেখলাম বঙ্গবন্ধুর নাম ভাষা আন্দোলন থেকে মুছে ফেলা হলো। মুছে ফেলা হলো এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস থেকে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালিকে কেউ দাবায়ে পারেনি, পারবেও না। আজ আমাদের ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বের সকল ভাষাভাষী এখন এই দিবসটি পালন করে। এটা বাঙালিরই অর্জন করা একটি মর্যাদায় আসন। আর সেটি আসলে দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই মর্যাদার সঙ্গে দিয়ে গেছেন স্বাধীনতাও।’

আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, যেকোনো রক্তদান এবং সংগ্রাম কখনো বৃথা যায় না। বৃথা যেতে পারে না। যদি সততার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া যায় তাহলে যেকোনো অর্জন সম্ভব। আর সেই অর্জনটা আমরা করতে পেরেছি।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কিন্তু একটি বিষয় সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে- যখনি বাঙালি কিছু পায় বা মর্যাদা অর্জন করে বা বাঙালি এগিয়ে যেতে থাকে উন্নয়নের দিকে, তখনই কিন্তু ফের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারণ পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ থাকতেই তারা পছন্দ করে। একটা শ্রেণিই আছে এমন। যারা কখনো আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে জানে না। তারা আত্মমর্যাদা বিকিয়ে আত্মতুষ্টি পায়। আর সেই শ্রেণিটা এখনো রয়ে গেছে আমাদের সমাজে।’

তিনি বলেন, ‘আজ আমরা স্বাধীন হয়েছি বলেই বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসন পেয়েছি। স্বাধীন হয়েছি বলেই আমাদের ভাষার জন্য যারা রক্ত দিয়েছে সেই রক্তের মর্যাদা তারা পেয়েছে। জাতির পিতাই বলতেন, মহৎ অর্জনের জন্য মহান আত্মত্যাগ দরকার। আর সেটাই আমরা করতে পেরেছি। আমাদের এই মর্যাদা নিয়েই চলতে হবে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা আমাদের স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই। বাংলাদেশের মানুষের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে চাই। শিক্ষায়, দীক্ষায়, সংস্কৃতি চর্চায় সবদিক থেকে এই বাঙালি নিজের মর্যাদা নিয়ে স্বমহিমায়-স্বগৌরবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে- এটাই আমাদের কামনা, এটাই আমরা চাই। আর এই ভাষা শহিদ, স্বাধীনতার শহিদ- সকলের প্রতি এবং জাতির পিতার প্রতি এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী বলার পর তিনি বলেন, ‘এখন আর চিরজীবী লাগবে না। জয় বাংলা বললেই হবে। এরপর তিনি জয় বাংলা স্লোগান ধরেন এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তের উদ্দেশে বলেন, আওয়াজ কই।’ এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা জয় বাংলা স্লোগান ধরেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পুনরায় জয় বাংলা উচ্চারণ করেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রহমান, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং আবু আহমেদ মান্নাফী প্রমুখ। গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর