Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আর ‘ফেরানো যাবে না’ কাওসার আহমেদ চৌধুরীকে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:২৩

ঢাকা: ‘আমায় ডেকো না/ ফেরানো যাবে না/ ফেরারি পাখিরা/ কূলায় ফেরে না’— কয়েক দশকের জনপ্রিয় এই গানের রচয়িতা কাওসার আহমেদ চৌধুরী নিজেই আজ না ফেরার দেশের বাসিন্দা। কোনো ডাকেই আর তাকে ‘ফেরানো যাবে না’। রাজধানীর গ্রিন রোডের ধানমন্ডি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এই ক্লিনিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান কাওসার আহমেদ চৌধুরী। তার পরিবারের ঘনিষ্ঠজন এরশাদুল হক টিংকু এ তথ্য সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

এরশাদুল হক টিংকু বলেন, ‘কিডনির জটিলতা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই চিকিৎসাধীন ছিলেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী। এর মধ্যে তিনি কোভিড পজিটিভ আসেন। রাত ১০টার দিকে তিনি গ্রিন রোডের ধানমন্ডি ক্লিনিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।’ দাফন বিষয়ে আগামীকাল বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ধানমন্ডি ক্লিনিকের আইসিইউয়ের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. গোলাম মর্তুজা সারাবাংলাকে বলেন, কোভিড পজিটিভ ছিলেন তিনি। মাল্টিপল কো-মরবিডিটি ছিল তার। রাত ১০টা ২ মিনিটের দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।

বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত কাওসার আহমেদ চৌধুরী অসুস্থ ছিলেন। এর মধ্যে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসা শেষে তাকে ধানমন্ডির ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

দেশের অন্যতম জনপ্রিয় গীতিকবিদের একজন কাওসার আহমেদ চৌধুরী। নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর গাওয়া ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে’, কুমার বিশ্বজিতের ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, আইয়ুব বাচ্চুর ‘এই রুপালি গিটার ফেলে’, লাকি আখন্দের ‘আমায় ডেকো না ফেরানো যাবে না, সামিনা চৌধুরীর ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ফিডব্যাকের মাকসুদের কণ্ঠে ‘মৌসুমি কারে ভালোবাসো তুমি’— দশকের পর দশক ধরে এমন অসামান্য জনপ্রিয় সব গানের রচয়িতা তিনি।

কোনো নিয়মের মধ্যে আটকে না থাকা কাওসার আহমেদ চৌধুরীর পরিচয় গীতিকবি এবং জ্যোতিষী হিসেবেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি একাধারে কবি, লেখক, চিত্রশিল্পী। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধেও রেখেছেন ভূমিকা।

বাউন্ডুলে কাওসার আহমেদ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় ভর্তি হয়ে স্বপ্ন দেখেছেন চিত্রশিল্পী হওয়ার। অনেকগুলো বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন। কবিতা আর জ্যোতির্বিদ্যায় আগ্রহ আরও পুরনো। চিত্রনির্মাতাও হতে চেয়েছিলেন। তবে কবিতা লিখছেন ছোটবেলা থেকেই। কলকাতার দেশ পত্রিকাতেও তার কবিতা ছাপা হয়েছে।

স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে প্রয়াত লাকী আখন্দের সঙ্গে পরিচয় হয় কাওসার আহমেদ চৌধুরীর। কবিতা লেখেন জেনে লাকী তার কাছে গান চান। ওই সময় তার লেখা ‘পলাতক সময়ের হাত ধরে’ এবং ‘বলো না তুমি কোথায়’ গান দুইটি দিয়েছিলেন কাওসার। সুর করে প্রথমটি ফেরদৌস ওয়াহিদ এবং পরেরটি সামিনা চৌধুরীকে দিয়ে গাইয়েছিলেন। দুইটি গানই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এরপর আর থেমে থাকেননি।

একাত্তর মহান মুক্তিযুদ্ধেও ভূমিকা রেখেছিলেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী। অস্ত্র হাতে সম্মুখসমরে অংশ না নিলেও মুজিবনগর সরকারের অধীনে গোয়েন্দাদের হয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করতেন। ভালো ছবি আঁকতে পারতেন বলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটির নকশা এঁকে বিভিন্ন অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যও করতেন।

একটা সময়ে জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার শখের অংশ হিসেবেই রাশিফল লিখতে শুরু করেন। দৈনিক প্রথম আলোতে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে প্রতি শনিবার সাপ্তাহিক রাশিফল লিখে আসছেন। প্রতি সপ্তাহেই এর অপেক্ষায় থাকেন লাখো পাঠক। তাদের সেই অপেক্ষার দিনও ফুরলো।

সারাবাংলা/এসবি/এজেডএস/টিআর

কাওসার আহমেদ চৌধুরী গীতিকবি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর