Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একুশে জমজমাট অমর একুশে গ্রন্থমেলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:৫০

ঢাকা: স্বাভাবিকভাবে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হয়ে থাকে অমর একুশে গ্রন্থমেলার একুশতম দিন। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দেরিতে শুরু হওয়ায় এবারে এই দিবসটি ছিল বইমেলার সপ্তম দিন। দিনের হিসাবে ব্যতিক্রম হলেও অন্যান্য বছরের মতো এ বছরেও এই দিনটিতে জমে ওঠে বইমেলা। দিনের শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত মেলায় ছিল পাঠক-ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়। তাতে হাসি ফুটেছে প্রকাশকদের মুখে। ক্রেতারাও পছন্দমতো বই ব্যাগে ভরে বাড়ি ফিরেছেন। বিশেষ করে এদিন শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি মেলাকে করেছে আরও প্রাণবন্ত।

বিজ্ঞাপন

এ বছর মেলা প্রতিদিন শুরু হচ্ছে বিকেল ৩টায়। তবে মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মেলার দ্বার খুলেছে সকাল ৮টাতেই। প্রকাশকরা জানালেন, সকাল থেকেই প্রভাতফেরিতে অংশ নিয়ে অনেকেই এসেছেন বইমেলায়। দুপুর ১২টা বাজতে না বাজতেই প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে মেলা। বিকেল-সন্ধ্যা নাগাদ জনসমাগম রীতিমতো ভিড়ে রূপ নেয়।

জাগৃতি প্রকাশনির প্রকাশক রাজিয়া রহমান জলি জানালেন, এ বছর মেলা শুরুর পর আজই (সোমবার) সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবছরই ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ মিনার থেকে সরাসরি বইমেলা চলে আসেন অনেকেই। এই জনসমাগম দেখতেও ভালো লাগে। তারা যে পোশাকে একুশকে ধারণের চেষ্টা করছেন, সেটিও ব্যক্তিগতভাবে আমার ভালো লাগে।

দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে মোহাম্মদপুর থেকে বইমেলা এসেছিলেন শিক্ষক সনিয়া চৌধুরী। বড় ছেলে এসএসসি দেবে, ছোটজন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। দুই ছেলের হাতেই কয়েকটি বইয়ের ব্যাগ। জানা গেল, প্রতিবছরই তারা বইমেলা আসেন। ২১ ফেব্রুয়ারিই যে আসেন, তা না। তবে চেষ্টা করেন একুশে ফেব্রুয়ারি মেলায় বা শহিদ মিনারে আসতে। করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত বিধিনিষেধের কারণে গত বছর আসেননি। তবে এবারে আর ঘরবন্দি হয়ে থাকতে পারেননি।

সনিয়া চৌধুরী মনে করেন, যুগের সঙ্গে তালমিলিয়ে এখনকার ছেলেমেয়েরা ডিভাইসমুখী হবে, সেটিই স্বাভাবিক। তবে তাদের বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব অভিভাবকদেরই। সে কারণেই তিনি প্রতিবছর ছেলেদের বইমেলায় নিয়ে আসেন, তাদের পছন্দের বই কিনে দেন। এভাবেই তাদের মধ্যেও বই নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে বইমেলা এসেছে পাঁচ বন্ধুর দল। তারা সবাই পুরান ঢাকার বংশালের বাসিন্দা। প্রতিবছরই বইমেলা আসেন। এবার বইমেলার বাড়তি পরিসরে সন্তুষ্টির কথা জানালেন তারা।

বিজ্ঞাপন

এ বছর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের প্রায় পুরোটাজুড়েই হচ্ছে বইমেলা। সঙ্গে বাংলা একাডেমির মূল প্রাঙ্গণ তো আছেই। স্টল ও প্যাভিলিয়নের পাশাপশি বিস্তৃত জায়গা পেয়েছে লিটল ম্যাগ চত্বর। বড় করে সামিয়ানা ঢাকা মঞ্চ পেয়েছে ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ। এই মঞ্চ থেকেই মেলায় প্রকাশিত বইয়ের লেখকের সঙ্গে পাঠকদের পরিচিত করিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও খোলামেলা মেলা প্রাঙ্গণে একাধিক স্থানে বসার জন্য কাঠের চেয়ার রাখার পাশাপাশি রাখা হয়েছে খাবার পানির ব্যবস্থা। ঢাকা ওয়াসার উদ্যোগে একাধিক পানির ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর আলাদা কর্নার, আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তাদানের জন্যও রয়েছে আলাদা জায়গা। মেলায় ঘুরতে আসা ব্যক্তিরা চাইলে এখান থেকে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারছেন।

আবার মেলা চত্বরেই কয়েকটি স্থানে ১০ মিনিটে পোর্ট্রেট আঁকার জন্য বসে আছেন শিল্পীরা। ৫০০ টাকা দিয়ে সরাসরি ছবি আঁকিয়ে নিচ্ছেন মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা।

একুশের দুপুরে সুপরিসর মেলায় দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেলেও ক্রেতা কমই দেখা গেলে। বিশেষ করে লিটল ম্যাগ চত্বরে একদমই পাঠক ছিল না বললেই চলে। এখানকার বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও তেমনটাই জানা গেল। তারা বলছেন, মেলার শুরু থেকেই লিটল ম্যাগ চত্বরে দর্শনার্থীর আনাগোনা কম।

মেলায় অন্যান্য প্রকাশনীতেও যে অনেক ক্রেতা, তেমন নয়। বিভাস প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রাম শংকর দেবনাথ এখন পর্যন্ত ক্রেতার সাড়ায় খুব একটা সন্তুষ্ট না হলেও আশাবাদী। আজ ভিড় বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি বাড়বে বলেও আশা করছেন। বিভাস এবার মেলায় ৫০টি নতুন বই এনেছে বলে জানালেন তিনি।

জাগৃতির প্রকাশক রাজিয়া রহমান বলেন, ‘যে পরিমাণ লোক সমাগম হয় সেই অনুপাতে বিক্রি হয় না। এটি আসলে একদিনের চিত্র নয়। প্রায় এক দশক ধরেই বইয়ের পাঠক কমে যাচ্ছে। তারপরও বইমেলায় এই লোকসমাগম আশা জাগায়।’ জাগৃতি থেকে এবার ৩৬টি বই নতুন বই এনেছেন তারা। রাজিয়ার প্রত্যাশা, পাঠক তাদের রুচি অনুযায়ী পছন্দের বইটি খুঁজে নেবে।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

অমর একুশে গ্রন্থমেলা একুশে ফেব্রুয়ারি বইমেলা বইমেলা ২০২২

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর