পদ্মাসেতুতে একই দিনে সড়ক ও রেলপথ চালু নিয়ে সংশয়
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:৫৫
ঢাকা: গ্যাস লাইন বসানোর কাজ শেষ না হওয়ায় পদ্মাসেতুতে রেললাইন স্থাপনের কাজ এখনই শুরু করা যাচ্ছে না। পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কবে নাগাদ কাজ শুরু করতে পারবেন, তা আগামী এপ্রিলের শেষে জানাবে সেতু বিভাগ। এ অবস্থায় পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে একইদিনে গাড়ি ও রেল চলাচল শুরুর যে পরিকল্পনা ছিল, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
এদিকে গাড়ি চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হলে পাথরবিহীন রেলপথ স্থাপনের ‘সার্ভে বেইস লাইন’ নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ওই পরিস্থিতিতে শতভাগ সঠিকভাবে রেল অ্যালাইনমেন্ট বসানো যাবে না। যে কারণে গাড়ির স্পিড এক তৃতীয়াংশে নামিয়ে চলাচলের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সঙ্গে ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জ ও পদ্মাসেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে এবং তা ২০২৪ সালে শেষ করার কথা। এই প্রকল্প তিনভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরমধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত মোট ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। এরমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আগামী জুনের মধ্যে পদ্মাসেতুর সড়ক পথের সঙ্গে সঙ্গে রেলপথে মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার অংশ চালু করা হবে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, এই পরিকল্পনা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন সম্ভব না। কারণ পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে রেল লাইন স্থাপনে অন্তত ছয় মাস আগে থেকে উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। যা সেতু বিভাগ অনুমতি দেয়নি।
এ প্রসঙ্গে পদ্মাসেতু রেল লিংক প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেইন বলেন, বিষয়টি নিয়ে সেতু বিভাগের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সেতু বিভাগ জানিয়েছে এপ্রিলের শেষে তারা পদ্মাসেতু রেল লাইন স্থাপনে অনুমতি দেবে। এপ্রিলে অনুমতি পাওয়ার পর বলতে পারবো কবে কাজ শুরু করা যাবে। তবে আমাদের টার্গেট রয়েছে ডিসেম্বরে শেষ করার।
তিনি জানান, সেতুতে এখন গ্যাস লাইন বসিয়ে তাতে ফিটিং ফ্যাক্সিং করা হচ্ছে। সেতু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা থাকবেন তাদের চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ের কাজ চলছে। এ সকল কাজ শেষ হলে অনুমতি রেল লাইন স্থাপনের কাজ শুরুর অনুমতি পাওয়া যাবে।
এদিকে পদ্মাসেতু রেলপথের সব স্ল্যাব বসানো শেষ হয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল সেতুকে দুই হাজার ৯৫৯টি কংক্রিট স্ল্যাবের মাধ্যমে জোড়া দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেতুর ওপর রেলপথ তৈরির নির্দিষ্ট অংশে এখন গ্যাস লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। এই কাজ শেষ করতে এপ্রিল পর্যন্ত সময় লাগবে। আর এই সময়ের মধ্যে রেল লাইন স্থাপনের জন্য কোনোভাবেই অনুমতি দিতে চায় না সেতু বিভাগ। অন্যদিকে পুরো রেলপথ স্থাপনে সময় লাগবে অন্তত ছয় মাস। সেজন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও অনুমতি দেয়নি সেতু বিভাগ।
এদিকে জুন মাসে যানবাহন চলাচলের জন্য পদ্মাসেতু খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। জুনে যানবাহন চলাচল শুরু হলে সেতুর নিচের অংশে রেলপথ স্থাপন কঠিন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পদ্মাসেতু রেল লিংক প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেইন। তিনি বলেন, ভারী যানবাহন চলাচল করলে ঝাঁকি বা কম্পনের সৃষ্টি হবে। সেটা রেল লাইন স্থাপন কাজ বাধাগ্রস্ত করবে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে সেতু বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জবাবে সেতু বিভাগ জানিয়েছে কোনো সমস্যা হবে না।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল বিশিষ্ট দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রতীক্ষিত পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে চলবে সড়ক যানবাহন আর নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেল লাইন স্থাপনের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
সারাবাংলা/জেআর/এএম
সারাবাংলা/এএম