Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মার্চ থেকে ডিজিটালাইজড হচ্ছে বিমানের প্যাসেঞ্জার সার্ভিস সিস্টেম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:১০

ঢাকা: মার্চ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্যাসেঞ্জার সার্ভিস সিস্টেম সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, পিএসএস সিস্টেমের ফলে অনলাইনে টিকিটিং, রিজার্ভেশন, বিমানবন্দরে পৌঁছানোর আগে চেকিং সবকিছু অনলাইনে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে পৃথিবীর সব দেশে এই ব্যবস্থা আছে। আমরা এক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে ছিলাম। বিমান সেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। আগামী মার্চ থেকেই এটা চালু করা হবে।

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বলাকা ভবন প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সবসময় একটা লক্ষ্য ছিল যে, আমরা নিজেদের বিমান ব্যবহার করব। এক সময় বিমানের বিধ্বস্ত অবস্থা ছিল। সেজন্য ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তখনই উদ্যোগ নেই। যদিও তখন আর্থিকভাবে খুব সীমাবদ্ধতা ছিল। তার মাঝেও আমরা চেষ্টা করেছিলাম। ওই সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উন্নয়নে আরও কিছু বিমান বহরে যুক্ত করি। আমাদের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক ফ্লাইট চালু করি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার যখন সরকারে আসি তখন দেখি নিউইয়র্ক, ব্রাসেলস, প্যারিস, ফ্রাংকফুর্ট, মুম্বাই, নারিতা এবং ইয়াঙ্গুন রুটে বিমান চলাচল করে। তবে সেগুলোর সবই লোকসানে ছিল। সেজন্য একে একে সব বন্ধ করে দিতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে এই জরাজীর্ণ বিমানে যখন চড়তাম সেখানে ভালো করে গানও শোনা যেত না। আর যদি জানালার কাছের সিটে বসতাম তখন ঝর ঝর করে পানি পড়তো। কোনো মতে কাপড় দিয়ে সেই পানি বন্ধ করা হত। এমনই দুর্দশা ছিল আমাদের বিমানের। বরং আমি পাইলটদের সবসময় ধন্যবাদ জানাতাম, এই ধরনের একটা অবস্থায় তারা যে সাহস করে বিমান চালাচ্ছে, এক একটা এয়ারক্রাফট চালাচ্ছে- এটাই আমার কাছে বড় জিনিস মনে হতো।’

২০০৯ সালে সরকারে আসার পর বিমানের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় কেবল একটা আমাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছিল। কিন্তু একটা স্বাধীনে দেশে কেন একটা মাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকবে? তাই সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করেছি।’

২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারে এসে রাজশাহী, বরিশাল ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে পুনরায় সেগুলো চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে বর্তমানে চারটি বৃহৎ পরিসরের বোয়িং-৭৭৭-৩০০-ইআর, নতুন প্রজন্মের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত চারটি ৭৮৭-৮ ও দু’টি ৭৮৭-৯ সহ মোট ছয়টি ড্রিমলাইনার, ছয়টি ৭৩৭-৮০০ এবং পাঁচটি ড্যাশ-৮-৪০০ উড়োজাহাজ সংগ্রহ করি। এই ২১টি উড়োজাহাজ নিয়ে বিমান চলছে।’

তিনি বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং দক্ষ জনবল দিয়ে অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার রিপ্লেসমেন্ট এবং বোয়িং ৭৮৭’র সি-চেক কার্যক্রম আমরাই করতে শুরু করেছি। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশ বিমানই করছে। এই যে সফলভাবে বিমান প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই কাজগুলো করতে পারল, তাতে কিন্তু আমাদের অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে। কাজেই এটাকে কার্যকর করার দিকে আমাদের আরও বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্র্যান্ড হ্যান্ডলিং একসময় খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল। এখন অনেকটা দক্ষ এবং কার্যকর গ্র্যান্ড হ্যান্ডলিং করার জন্য আমরা একটা আলাদা ইউনিট তৈরি করতে চাই। বিমানকে বলব, এটার জন্য কিছু প্রশিক্ষণের দরকার আছে। লোকবলের দরকার আছে। অত্যন্ত দক্ষতা ও সততার সঙ্গে যেন গ্র্যান্ড হ্যান্ডলিং করতে পারে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে এবং এই ইউনিটটা যত দ্রুত পারা যায়, সেটা করতে হবে। যাতে উপযুক্ত লোকবল দিতে পারি, যাতে যাত্রীসেবাটা আরও উন্নতমানের হয়, আমরা সেটাই করতে চাই।’

চতুর্থ প্রজন্মের বিমানগুলোতে যাত্রীদের ওয়াই-ফাই সুবিধাসহ বিভিন্ন প্রকার ইনফ্লাইট বিনোদন সেবা প্রদান করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই আধুনিক যুগে মানুষ কিন্তু কোথায় গিয়ে বসে থাকতে চায় না। তার নিজের কিছু কাজ করতে হয়। সেই কাজগুলো করার ক্ষেত্রে আমাদের নতুন বিমানগুলোতে সেই সুবিধা আছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিমানের টিকিট কিনতে গেলে সিট খালি থাকলেও বলে দেয় খালি নাই। অথবা নানা ধরনের সমস্যায় ভুগতে হয়। কিন্তু অনলাইনে টিকিট কেনা বা সিট বুকিং করা বা চেকিং করা- এর সবই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছে। আমরা এক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে ছিলাম। বিমান সেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। মার্চ থেকেই সেটা চালু করা হবে।’

‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নতুন টার্মিনালটা হয়ে গেলে বিমানের দক্ষতা আরও বাড়বে বলেও আশাবাদ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন রাডার স্থাপন করছি এবং একেবারে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন রাডার স্থাপন করব। সেই ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। এছাড়া ইতোমধ্যে বিমান বহরে কার্গো জাহাজ কেনার কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। অন্তত দুটো কার্গো বিমান কেনা একান্তভাবে জরুরি বলে মনে করি। নিজস্ব বিমানে কার্গো সার্ভিস চালু থাকলে বিমান আরও অনেক লাভজনক হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় এক কোটি লোক প্রবাসে আছে। ছুটির সময় তারা দেশে আসেন। সেই কথাটা বিবেচনা করে তারা যেন কোনো হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে আমাদের আরও যত্মবান হতে হবে।’ নতুন যে উড়োজাহাজগুলো কেনা হয়েছে সেগুলো যত্ম সহকারে রক্ষণাবেক্ষণের অনুরোধও জানান তিনি।

বিমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যায়। এটা বাংলাদেশের একটা প্রতীক। সেজন্য বিমানকে আরও উন্নত করা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

টপ নিউজ প্যাসেঞ্জার সার্ভিস সিস্টেম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর