চট্টগ্রামের ডিসি’র অপসারণ চায় আইনজীবী সমিতি
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:৪৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে ‘চট্টগ্রামবিদ্বেষী’ উল্লেখ করে তার অপসারণ দাবি করেছে জেলা আইনজীবী সমিতি। চট্টগ্রামের আইনজীবীদের নিয়ে জেলা প্রশাসক মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছেন বলেও অভিযোগ সমিতির। তবে সমিতির অভিযোগ নাকচ করে জেলা প্রশাসক বলছেন, তিনি কোনো ধরনের অপপ্রচার বা মিথ্যাচারের সঙ্গে যুক্ত নন।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবি করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন।
চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণে লালদিঘী এলাকায় ‘পরীর পাহাড়’ নামে পরিচিত একটি পাহাড়ে আদালত ভবনের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের কার্যালয় আছে। সেই পাহাড়ে জেলা আইনজীবী সমিতি সম্প্রতি আইনজীবীদের চেম্বারের জন্য নতুন দু’টি ভবন নির্মাণেরর উদ্যোগ নিলে আপত্তি তোলে জেলা প্রশাসন। সমিতির ওই দুই নতুন স্থাপনাকে জেলা প্রশাসন বলছে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। আর সমিতির দাবি, নিয়ম মেনে ‘অনুমোদন’ নিয়েই তারা ভবন করছেন। এরই মধ্যে পাহাড়ে নতুন স্থাপনা নির্মাণ না করতে এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে তাতে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পাহাড়টিকে ‘পরীর পাহাড়’ হিসেবে উল্লেখ করে সেটি সংরক্ষণের জন্য সব স্থাপনা উচ্ছেদে অনড় অবস্থানের কথা জানায়। আইনজীবী সমিতি জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বিবাদ গড়ায় আদালতেও। গত বছরের ৭ নভেম্বর আদালতে প্রতিনিধিত্বমূলক একটি মামলা দায়ের করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন।
মামলায় জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে বলা হয়, বর্তমান জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামে যোগদানের আগে সব সরকারি নথিতে পাহাড়টিকে ‘কোর্ট হিল’ হিসেবে উল্লেখ করা হতো। কিন্তু সম্প্রতি সেটি পরিবর্তন করে ‘পরীর পাহাড়’ লেখা হচ্ছে। পরীর পাহাড় নামকে বেআইনি ঘোষণা করে এই নাম ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে প্রতিনিধিত্বমূলক মামলাটি করা হয়।
এ অবস্থায় গত ৩১ জানুয়ারি আইনজীবী সমিতি ‘একুশে ভবন’ নামে নতুন একটি বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে। কিন্তু জেলা প্রশাসনও তাদের বিরোধিতায় অনড় আছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভবন নির্মাণের জন্য গাছ কাটার সময় জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে পুলিশ চার শ্রমিককে আটক করে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জেলা প্রশাসক আইনজীবী সমিতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। সমিতির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আইনজীবীদের সম্মান ক্ষুণ্ন করছেন। আইনজীবী সমিতির ভবনগুলোকে অবৈধ উল্লেখ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভুল তথ্য দিচ্ছেন জেলা প্রশাসক। এগুলোর বৈধতার বিষয়ে যাবতীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করা হলে ডিসি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলেন। এত সব অভিযোগে কিছু করতে না পেরে আইনজীবী সমিতির ভবনের কারণে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন নির্মিত হয়েছে সমিতির ভবন নির্মাণের পর। বাংলাদেশ ব্যাংক সংলগ্ন আরও ভবন আছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ভবন, নিউমার্কেট, জিপিও এমনকি সম্প্রতি জেলা প্রশাসক নির্মিত কালেক্টরেট মসজিদও আছে। বাকিগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন নির্মাণ হওয়ার আগের ভবন। এ থেকে বোঝা যায়, জেলা প্রশাসক আইনজীবী সমিতির সঙ্গে বিদ্বেষবশত সমিতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা বিষয়ে কেপিএ নীতিমালা হয় ২০১৩ সালে।
আইনজীবী নেতারা বলেন, ১৩০ বছরে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতি পাশাপাশি সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে অবস্থান করে আসছিল। এর আগে ভবন নির্মাণের সময় সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াসহ অন্যান্য প্রশাসকরা সমিতির ভবন নির্মাণে সহযোগিতা করেছেন। বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রশাসনের সম্পর্কোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এসময় এক প্রশ্নের জবাবে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি আইনজীবী সমিতিকে ভবন নির্মাণের জন্য ভূমি ইজারা দিয়েছিলেন। পরে ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেন সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে। ‘কোর্ট হিল’ বা আদালত ভবনকে ‘পরীর পাহাড়’ না লিখতে বা বলতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। এরপরও ডিসির বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে এবং বিভিন্ন সাইনবোর্ডে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘কোর্ট হিল’কে ‘পরীর পাহাড়’ লেখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের অবৈধ কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় আইনি পথে হাঁটছি আমরা। কিন্তু জেলা প্রশাসক এই আইনি মোকাবিলাকে দুর্বলতা মনে করেছেন, যা ভাবার সুযোগ নেই।’
এদিকে, আইনজীবী সমিতির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আইনজীবী কিংবা তাদের ভবনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপপ্রচার কিংবা মিথ্যাচারের সঙ্গে জড়িত নন বলে জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রাম আদালত ভবন পরীর পাহাড় নামে পরিচিত। এটিকে, হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণের জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। সরকার যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছে সেভাবে কাজ করা হচ্ছে। এখানে তার ব্যক্তিগত কোনো কিছু নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোহাম্মদ হাশেম, বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, বর্তমান সদস্য মুজিবুল হক, সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মো. শফিক উল্লাহ, সহসভাপতি মো. আজিজুদ্দিন হায়দার, সহ-সাধারণ সম্পাদক এরশাদুর রহমান রিটু, অর্থ সম্পাদক সালাউদ্দিন মনসুর রিমু, পাঠাগার সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক লাইলা নুর, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. মেজবাহ উদ্দিন, নির্বাহী সদস্য এ এন এম রুকনুজ্জামান মুন্না, শ্যামল চৌধুরী, সেলিনা আকতার, মো. খোরশেদ কামাল, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আইনুল কামাল, বিলকিছ আরা মিতু, মিনহাজ উদ্দিন, তৌহিদুল বারি চৌধুরী, তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জেলা প্রশাসক