Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেড়ে চলেছে ছিনতাই, আতঙ্কে রাজধানীবাসী

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:৪১

প্রতীকী ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: সম্প্রতি রাজধানীতে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন তাদের সঙ্গে পেরে উঠতে পারছে না। একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। দিন-রাতের যেকোনো সময়েই ছিনতাইয়ের শিকার হতে হচ্ছে তাদের। এসব ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। রাজধানীবাসী বলছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ছিনতাইয়ের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, পুলিশের দাবি— ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়লেও তা এখনো ভয়ংকর হয়ে ওঠেনি। তবে সম্প্রতি ছিনতাইয়ের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ ঘটনায় আসামিরা গ্রেফতার হয়েছে। বাকি দুয়েকটি ঘটনায় তদন্তকাজ অব্যাহত রয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আলিমুজ্জামান নামে একজন ব্যবসায়ী ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে আদাবর থেকে রিকশায় করে ধানমন্ডি যাচ্ছিলেন। রিকশাটি মোহাম্মদপুর সাত মসজিদ রোডের ব্যাংক এশিয়ার সামনে পৌঁছালে একটি সুজুকি জিক্সার মোটরসাইকেলে করে তিন জন ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করেন। তারা জোর করে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। পোশাক ও কাগজের ব্যবসায়ী আলিমুজ্জামান এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ছিনতাইয়ের এ ঘটনায় বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।

তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মুজিব পাটোয়ারী ছিনতাইয়ের এ ঘটনা প্রসঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় সারাবাংলাকে বলেন, আমরা বিষয়টি জানার পর থেকেই কাজ শুরু করেছি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেছেন। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই ঘটনার তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।

এর আগে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর মিরপুর বাউনিয়াবাদ ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে রায়হান (২৫) নামে এক পোশাককর্মী নিহত হন। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় পল্লবী থানা পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভোরে মোশারফ হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী রাজধানীর শ্যামবাজারে মালামাল কিনতে যাচ্ছিলেন। সায়েদাবাদ ফ্লাইওভার ঢাল থেকে দয়াগঞ্জের দিকে যেতে সড়কে ছিনতাইকারীর পাল্লায় পড়েন তিনি। তাকে উপুর্যপুরি ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ জানিয়েছে, মোশারফ একজন ভ্রাম্যমাণ হলুদ, মরিচ ও মসলা বিক্রেতা ছিলেন। শ্যামবাজারে মালামাল কিনতে যাওয়ার পথেই ছিনতাইয়ের শিকার হন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে।

ওই রাতেই যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ মোশারফের হত্যাকারী দুই ছিনতাইকারী সজীব (২০) ও শাকিলকে (২০) গ্রেফতার করে। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজাহারুল ইসলাম কাজল সারাবাংলাকে বলেন, মোশারফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা এর আগেও যাত্রাবাড়ীতে একটি ছিনতাইয়ে হত্যা মামলার আসামি ছিল। আদালত থেকে জামিনে তারা বের হয়ে ফের ছিনতাই কাজে নেমেছে। এর পেছনে আর কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

একই দিনে মিরপুরে এক বিদেশি নাগরিক ছিনতাইয়ের শিকার হন। তার কাছ থেকে ছিনতাইকারীরা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ১০ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

এছাড়া গত এক সপ্তাহের মধ্যেই তেজগাঁও, তুরাগ, দক্ষিণ খান, ডেমরা, খিলগাঁও, হাজারীবাগ ও বাবু বাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলছেন, হঠাৎ করে ছিনতাই বেড়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। রাত ১০টার পর সড়কে কোনো পুলিশ থাকে না। টহল পুলিশের গাড়িও চোখে পড়ে না বলে অভিযোগ তাদের। ফলে অরক্ষিত সড়কে রিকশা আরোহীসহ চলাচলরত সাধারণ মানুষজন ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছেন। এসব ছিনতাই ঘটনার বড় একটি অংশ থানা পুলিশের কাছে যাচ্ছেন না।

জাহাঙ্গীর হোসেন নামে একজন ভুক্তভোগী বলেন, রাত ১টার দিকে মোটরসাইকেলে করে মিরপুর থেকে সূত্রাপুর যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময়ে সড়কে কোনো পুলিশকে দেখতে পাননি তিনি। মিরপুর থেকে সূত্রাপুরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এই বিশাল দূরত্বে কোনো টহল পুলিশ না দেখতে পেয়ে অনেকটা ভয়ও পেয়েছিলেন তিনি। সূত্রাপুরে দু’জন ছিনতাইকারী মোটরসাইকেল থামিয়ে ফোন আর মানিব্যাগে থাকা টাকা নিয়ে চলে যান। এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ মামলা করতে বলে। পরে তিনি ‘ঝামেলা এড়াতে’ মামলা করেননি।

সম্প্রতি ছিনতাই বেড়েছে— এর কারণ জানতে চাইলে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইফতেখার উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, সম্প্রতি ওয়ারী বিভাগে যে কয়টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, আমরা তার পুরো রহস্য উদঘাটন করে আসামিদের গ্রেফতার করেছি। এ ধরনের ঘটনা যেন প্রতিরোধ করা যায়, সে বিষয়ে পুলিশ সজাগ রয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, ছিনতাই প্রতিরোধে গোয়েন্দা পুলিশ প্রায় ৭০টির মতো টিম পুরো ঢাকা শহরে দায়িত্ব পালন করছে। এর মধ্যেও দুয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তবে বেশিরভাগ মামলার আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। দুয়েকটি ঘটনায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা শিগগিরই তাদেরও গ্রেফতার করতে পারব।

হঠাৎ করে ছিনতাই বেড়ে যাওয়া এবং ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রাণহানির মতো ঘটনাগুলোর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে— জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান সারাবাংলাকে বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সম্প্রতি সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। মানুষ কোনোরকম জীবনযাপন করছে বলে অনেক আলোচনা-সমালোচনাও হচ্ছে। ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার পেছনে এটিও কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে, যারা ছিনতাই করছে তারা পেশাদার নাকি নতুন কেউ। যদি ছিনতাই চক্রে নতুন নতুন সদস্যের উপস্থিতি বেশি পাওয়া যায়, তাহলে ধরেই নিতে হবে যে এর পেছনে চলমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতির যোগসূত্র রয়েছে। আর পুরনো ছিনতাই চক্রের সদস্যদের এসব অপরাধ সংঘটনে অংশগ্রহণ বেশি থাকলে সেক্ষেত্রে এসব ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

ড. জিয়া আরও বলেন, ছিনতাই বন্ধে টহল পুলিশ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে গভীর রাতে ও ভোরে সড়কে অলিগলিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের উপস্থিতি বাড়াতে হবে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। ছিনতাই বন্ধ না হলে সমাজে ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়বে।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

ছিনতাই ছিনতাই আতঙ্ক ছিনতাইয়ে প্রাণহানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর