Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চাকরির আশ্বাস দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেফতার ৩

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:১৮

ঢাকা: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

এরা হলেন দিনাজপুরের মো. সামসুজ্জোহা ওরফে জুয়েল (৪০), নাটোরের শামীম হাসান তালুকদার (৩৮) ও নাটোরের মো. আলমগীর হোসেন (৪০)। এ সময় আসামিদের কাছ থেকে ভুয়া সেনাবাহিনীর পরিচয়পত্র, দুইটি ভুয়া বিজিবি’র পরিচয়পত্র, তিনটি ভুয়া নিয়োগপত্র, ১৬ পাতা ব্যাংক স্টেটমেন্ট, একটি ব্যাংক চেক ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ছয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪ টায় কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-১ এর সিইও লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন এই ব্রিফিং করেন।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে সামসুজ্জোহা জুয়েল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাকরি প্রত্যাশী ও তাদের পরিবারের সাথে সুকৌশলে পরিচিত হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে তার পরিচিত কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার মাধ্যমে সেনাবাহিনী অথবা বিজিবিতে চাকরি দিতে পারবে মর্মে জানায়। ভিকটিমদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে সেনাবাহিনী অথবা বিজিবিতে বেসামরিক বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কৌশলে বিশ্বাস অর্জন করে এবং একপর্যায়ে সেনাবাহিনী অথবা বিজিবিতে বেসামরিক পদে চাকরির জন্য ভিকটিমদের ৫/৭ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানায়। ভিকটিম ও ভিকটিমের পরিবার তার কথায় সরল বিশ্বাসে ৫/৭ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়।’

ভিকটিমদেরকে তাদের গ্রামের বাড়ি হতে মেডিকেল চেকআপ করার কথা বলে সেনাকর্মকর্তার পিএ পরিচয় প্রদানকারী প্রতারক মো. আলমগীর হোসেনের মাধ্যমে অপরজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা ( লে. কর্নেল) পরিচয়দানকারী প্রতারক মো. শামীম হাসান তালুকদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানোর জন্য ঢাকা সেনানিবাস সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

এরপর ভিকটিমকে একটি ভুয়া নিয়োগপত্র প্রদান করে, যাতে সেনাবাহিনী অথবা বিজিবি’র মনোগ্রাম সম¦লিত বেসামরিক পদে চাকরির নিয়োগপত্র শিরোনাম মুদ্রিত থাকে। নিয়োগপত্রে ভিকটিমের নাম-ঠিকানা, স্বাক্ষরসহ নিয়োগপত্রের পেছনে আঙুলের ছাপ নেয় এবং কাউকে কিছু না বলে ভিকটিমদেরকে চুপচাপ বাড়ি চলে যেতে বলে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মো. সামসুজ্জোহা জুয়েল এই চক্রের মূল হোতা। প্রাপ্ত তথ্যমতে তার নামে ইতোপূর্বে অস্ত্র আইন, নারী নির্যাতন, প্রতারণা ও মাদকসহ মোট ৮ টি মামলা রয়েছে। সে বর্তমানে ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি। ২০১৫ সালের দিকে চক্রের অপর দুই সদস্যের সাথে তার পরিচয় হয়। প্রতারক আলমগীর ও প্রতারক শামীম দুইজনই কম্পিউটার প্রিন্ট, ফটোকপি, অনলাইন জব এপ্লিকেশনের দোকান এর মালিক। তাদের দোকানে অনলাইনে চাকরির জন্য আবেদন করতে আসা ব্যক্তিদের মাধ্যমেই তারা বিভিন্ন বাহিনী/সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির তথ্য সংগ্রহ করত। সেখান থেকে প্রাপ্ত চাকরি প্রার্থীদেরকেই তারা প্রাথমিকভাবে টার্গেট করত। এছাড়াও, প্রতারক মো. শামসুজ্জোহা জুয়েল শুরু থেকেই নিজেকে বিজিবি’র সদস্য (হাবিলদার মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট) হিসেবে ভুয়া পরিচয় প্রদান করে আসছিল।

ফলে অনেকেই তার সঙ্গে চাকরি পাওয়ার আশায় যোগাযোগ করত বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। মূলত এই চক্রটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদরিদ্র পরিবারের লোকজনকে বাহিনীতে চাকরির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার উদ্দেশ্যে টার্গেট করত। উল্লেখ্য, চাকরি প্রার্থীদেরকে নিয়োগ পরীক্ষা, নিয়োগপত্র প্রদান ইত্যাদি সংক্রান্ত ভুয়া এসএমএস পাঠানোর এই চক্র পৃথক সিম ব্যবহার করে আসছিল।

প্রতারক মো. শামীম হাসান তালুকদারকে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক দলের সক্রিয় সদস্য। সে ভিকটিমদের নিকট সেনাবাহিনী/বিজিবিতে বেসামরিক বিভিন্ন পদে চাকরির আশ্বাস দেখিয়ে নিজেকে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (লে. কর্নেল পদবীর অফিসার) হিসেবে পরিচয় দেয়। সামসুজ্জোহা জুয়েল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাকরি প্রত্যাশীদের সেনাবাহিনীর অফিস করণিক, বাবুর্চি, মেসওয়েটার, স্টোরম্যান ইত্যাদি পদে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেখিয়ে ধৃত আসামি মো. শামীম হাসান তালুকদার এর কাছে নিয়ে আসত।

আসামি মো. আলমগীর হোসেন শামীমকে প্রতারণার কাজে সহযোগিতা করে আসছিল। প্রতারক চক্রটি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাকরি প্রত্যাশীদের ঢাকায় এনে সেনাবাহিনী/বিজিবি’র বিভিন্ন বেসামরিক পদে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেখায় এবং ভুয়া নিয়োগপত্র প্রদান করে।

পরবর্তীতে ভিকটিমরা নিয়োগপত্র নিয়ে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে যোগদান করতে গেলে ভুক্তভোগীরা জানতে পারে তাদের নিয়োগপত্র ভুয়া। এভাবে তারা সেনাবাহিনী/বিজিবি’র ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করাসহ আনুমানিক প্রায় দুই কোটির অধিক টাকা আত্মসাৎ করেছে।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

চাকরির আশ্বাস প্রতারক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর