তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধি ও সিগারেটের মূল্যস্তর ২টি করার দাবি
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:৫২
ঢাকা: অ্যাড ভ্যালোরেমের পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি প্রবর্তন এবং সব ধরনের তামাকপণ্যে মূল্য বৃদ্ধি, সিগারেটে বিদ্যমান মূল্যস্তর চারটি থেকে দুইটিতে নামিয়ে আনাসহ ব্যাপকভাবে নিম্নস্তরের সিগারেটের কর ও মূল্যবৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িংয়ের এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধির বিষয়ক আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে।
সভায় ফোরামের সদস্য সংসদ সদস্য অপরাজিতা হক বলেন, তামাকপণ্যে বর্তমান কর কাঠামো খুবই জটিল। অ্যাড ভ্যালোরেম কর পদ্ধতি ও সিগারেটের ও চারটি মূল্যস্তর থাকায় তেমন লাভ হচ্ছে না। আমাদের অবশ্যই সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতিতে আসতে হবে। মূল্যস্তর দুইটিতে নামিয়ে আনতে হবে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, কর বাড়ালে কেবল ওপরের স্তরের সিগারেটের দাম বাড়ে। সেক্ষেত্রে তামাক ব্যবহারকারীরা নিচের স্তরের সিগারেট খাচ্ছে। তাই নিচের স্তরের দাম বাড়াতে হবে।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ফোরামের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, আমরা যত দ্রুত তামাকের কর বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করতে পারব, আমাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনাও তত বাড়বে। কারণ তামাক কোম্পানিগুলো খুবই শক্তিশালী। এই বাজেটে যুক্তিযুক্ত পরিমাণে কর বাড়াতে হলে আমাদেরও এগিয়ে থাকতে হবে। পাশাপাশি, সরকারি কোনো সংস্থা তামাকের কর বাড়ানোর বিপক্ষে কোনো উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নিলে আমাদেরকে অবশ্যই তা প্রতিহত করতে হবে।
ফোরামের কো-চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, তামাকপণ্যে কর বাড়ানোর বিকল্প নেই। কর কাঠামো কেমন হওয়া দরকার, সে ব্যাপারে এই মার্চের মধ্যেই সবার মধ্যে একটা ধারণা তৈরি করে দিতে হবে। পাশাপাশি, তামাক কোম্পানি যেন এবার কর বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা তৈরি না করে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
তামাক নিয়ন্ত্রণে ফোরামের নানা সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত। এসব সাফল্যের মধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১৫৩ জন সংসদ সদস্যের চিঠি, তামাক আইন সংশোধনের দাবিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিকট ১৫২ জন সংসদ সদস্যের চিঠি এবং সবশেষ জাতীয় বাজেটে তামাকের ওপর কর বাড়ানোর সুপারিশ জানিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেওয়া উল্লেখযোগ্য বলে জানান তিনি।
সভায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা রুবিনা আক্তার, শবনম জাহান, হাবিবা রহমান খান এবং হোসনে আরা বেগম। উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সাচিবিক দায়িত্বে থাকা উন্নয়ন সংস্থা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ এবং পরিচালক রফিকুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই মুহূর্তে দেশের ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে। তামাকের কারণে বছরে মৃত্যুবরণ করেন প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ। তামাকের ওপর যুক্তিযুক্ত কর আরোপ এবং তামাকপণ্যের দাম বাড়ানো গেলে প্রায় ৯ রাখ তরুণকে তামাক ব্যবহার থেকে বিরত রাখা যাবে এবং প্রায় সাড়ে ৪ লাখ তরুণকে অকালমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যাবে বলে বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাড়তি ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব বলেও উঠে এসেছে গবেষণায়।
সারাবাংলা/টিআর