Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছয় ভাইয়ের মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যা’ বলছে ঐক্য পরিষদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৬:৫৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কক্সবাজারের চকরিয়ায় গাড়িচাপায় ছয় ভাইয়ের মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। একইসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, এটি শতভাগ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। নিহতদের পরিবারের পক্ষে নিকটাত্মীয় অ্যাডভোকেট রঘু মণিসহ কয়েকজন এসময় উপস্থিত ছিলেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া মালুমঘাট এলাকায় একটি পিকআপ একই পরিবারের আটজনকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলে চার ভাই মারা যান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন- অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৪)। গত ২২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান আরেক ভাই রক্তিম সুশীল (২৮)।

একই ঘটনায় আহত হয়ে মালুমঘাট ক্রিশ্চিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের বোন হীরা সুশীল। আরেক ভাই প্লাবন সুশীলও সামান্য আহত হন। চোখের সামনে ভাইদের মৃত্যু দেখে প্লাবন মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন বলে তার পরিবার জানিয়েছে। এই ঘটনার দশদিন আগে মারা যায় তাদের বাবা সুরেন্দ্র সুশীল।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঘটনার ১১ দিন আগে গত ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় চকরিয়ার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের সদস্য রফিক বাহিনীর সর্দার এমরান ও তার দল সুরেন্দ্র সুশীলের বাড়িতে হামলা করে। সুরেন্দ্র’র ছেলে চম্পককে মারধর করে হুমকি দেয়, এলাকায় মন্দির নির্মাণের চেষ্টা করলে সবাইকে ওপরে পাঠিয়ে দেবে। একইদিন মধ্যরাতে আবারও এমরানের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ জন সন্ত্রাসী তাদের বাড়িতে হামলা চালায়, সুরেন্দ্রকে এলোপাতাড়ি লাথি মারে এবং চম্পক ও প্লাবনকে মারধর করে। মন্দির নির্মাণ করা হলে বসতঘর থেকে উচ্ছেদের হুমকি দেয়।

হামলায় সুরেন্দ্র’র শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। কিন্তু রফিক বাহিনীর সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়ির চারপাশে অবস্থান নেয়ায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া যায়নি। ৩০ জানুয়ারি তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান। প্রয়াত বাবার পারলৌকিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সাত ভাই ও দুই বোন বাড়িতে ফেরার পথে পিকআপ তাদের চাপা দেয়।

এ ঘটনায় পুলিশ ‘গুরুতর অপরাধকে লঘু দেখিয়ে’ মামলা নিয়েছে অভিযোগ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘চোখের সামনে ভাইদের মৃত্যু দেখে উন্মাদপ্রায় প্লাবন সুশীল। অথচ পুলিশ বলছে তিনি নাকি ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে চকরিয়া থানায় হাজির হয়ে এজাহার দিয়েছেন, যেখানে তিনি তার ভাইদের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে মৃতদেহ বিনা ময়নাতদন্তে হস্তান্তরের জন্য নাকি আবেদন করেছেন। অথচ প্লাবনের কাকা সন্তোষ সুশীল আমাদের বলেছেন, এজাহারটি হাইওয়ে পুলিশের নিজেদের লেখা। সেখানে কী লেখা আছে সেটা তাদের পড়তে দেওয়া হয়নি। ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তরের আবেদন প্লাবন করেনি।’

এছাড়া ঘটনা ভোর ৬টা থেকে সোয়া ৬টার মধ্যে দিনের আলোতে হলেও এজাহারে সেটা ভোর ৫টায় অন্ধকারে ঘটেছে বলে উল্লেখ আছে, এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘কেন ও কোন উদ্দেশে, কাদের প্ররোচনায়, কাদের মামলা থেকে বাঁচানোর বদ উদ্দেশে গুরু অপরাধের মামলা লঘু অপরাধের মামলা হিসেবে দায়েরের অপকর্ম পুলিশ করেছে, সেটা তদন্ত করে বের করা হোক।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়েছে, পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যুর পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি উজ্জ্বল সুশীল নামে তাদের এক আত্মীয়কে ‘জামায়াত ইসলামীর লোক’ পরিচয়ে মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে তিনটি অডিও ভয়েস ক্লিপ পাঠান। এতে ‘আল্লাহর হুকুমে মৃত্যু হয়েছে’ উল্লেখ করে ঘটনাকে রটনা না বানানোর হুমকি দেওয়া হয়।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আমি নিহতদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলে আমি যা বুঝেছি, ঘটনার পেছনে ঘটনা আছে। ঘটনার আগে হুমকি আছে। হামলাও আছে। আবার অডিও ক্লিপ পাঠিয়েও হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাদের পরিবার তো কোনো সংগঠন বা ব্যক্তির নাম কখনও বলেনি। তাহলে একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের (জামায়াত ইসলামী) নাম উল্লেখ করে কেন তাদের বলতে গেল যে- আমরা না, আমরা এ কাজ করিনি। আমি আরও জানতে পেরেছি, পিকআপটি নাকি তাদের দুই বার চাপা দিয়েছিল। সব দেখে মনে হয়েছে এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়।’

‘আমরা বলতে চাই, একই পরিবারের সাতজনকে একইসঙ্গে গাড়িচাপা দেওয়া কোনো দুর্ঘটনা নয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’

হামলার ঘটনার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে নিহতদের পিসতুতো ভাই আইনজীবী রঘু মণি বলেন, ‘হামলার পর ঘর থেকেই বের হতে দেয়নি। এছাড়া এক সপ্তাহের মধ্যে সামাজিকভাবে মীমাংসার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এজন্য তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়নি।’

এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড মনে করেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখে মনে হচ্ছে, এটি শতভাগ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’

মামলাটির বর্তমান তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে নির্মোহ তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন এবং জড়িতদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন ঐক্য পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের নেতাদের মধ্যে পরিমল চৌধুরী, তাপস হোড়, নিতাই প্রসাদ ঘোষ, শ্যামল কুমার পালিত, রুবেল পাল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/এমও

ছয় ভাইয়ের মৃত্যু টপ নিউজ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৫০-এ ‘এমন যদি হতো’
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৩০

আদালতে হিরো আলমের ওপর হামলা
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:২৯

সম্পর্কিত খবর