১ কোটি প্রয়োগের লক্ষ্যে গণটিকা শুরু, আজ প্রথম ডোজের ‘শেষদিন’
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:৩৩
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলছে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম। ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশের এক কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু হয়েছে গণটিকা কার্যক্রম। এরপরে সীমিত পরিসরে প্রয়োজন বিবেচনায় কিছু কেন্দ্রে প্রথম ডোজ দেওয়া হলেও কার্যত ২৬ ফেব্রুয়ারিই শেষবারের মতো প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। এই ক্যাম্পেইনে ভ্যাকসিন নিতে কোনো ধরনের নিবন্ধন করতে হবে না। এমনকি যারা নিবন্ধন করেও ভ্যাকসিন পাননি, তারাও ক্যাম্পেইনে নিতে পারবে ভ্যাকসিন।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কেন্দ্রগুলোতে একযোগে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনের কার্যক্রম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডা. শামসুল বলেন, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলমান থাকবে। সাধারণত টিকাদান ৩টা পর্যন্ত চললেও আজকে এই কর্মসূচি লক্ষ্যপূরণ না হওয়া পর্যন্ত চলবে।
তিনি বলেন, ক্যাম্পেইনে জন্মনিবন্ধন বা কোনো ধরনের কাগজপত্র লাগবে না ভ্যাকসিন নিতে। সেখানে মোবাইল নম্বর দিয়েই ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে। মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে তাদের তথ্য নথিভুক্ত করে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তাদের একটি করে কার্ড দেওয়া হবে। সেটিই হবে তার ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রমাণ।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই যাদের নিবন্ধন আছে তারাও প্রয়োজনে ভ্যাকসিন কার্ড নিয়ে আসতে পারেন। ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি নিয়মিত ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্রগুলোতে কার্যক্রম চলবে।
আজ সকাল ১০ টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় ভ্যাকসিন নিতে আসা মানুষের ভিড়। কার্যক্রম শুরুর পরে মাত্র ২ ঘণ্টায় চার হাজার জনকে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির ১৬টি বুথের মাঝে ১২টিতে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে।
এ কেন্দ্রে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম দেখতে এসে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন বলেন, প্রথম ডোজের জন্য যে টার্গেট করা হয়েছে সেটা পূরণের জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ চলবে। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ক্যাম্পেইনে যেখানে দেওয়া হচ্ছে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন
ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনে এক কোটি টিকা দেওয়ার জন্য দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে তিনটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এসব স্থান নির্ধারণ করেছেন। স্কুল, ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও হতে পারে। পৌরসভা পর্যায়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে দল থাকবে। নির্ধারিত কেন্দ্রের বাইরেও প্রতি উপজেলায় পাঁচটি, প্রতি জেলায় ২০টি করে ভ্রাম্যমাণ দল থাকছে। যেখানে জনসমাগম বেশি সেখানে যেন তারা গিয়ে ভ্যাকসিন দিয়ে আসতে পারে।
ডা. শামসুল হক জানান, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি জোনে ৩০টি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি জোনে ৪০টি, বরিশাল, সিলেট, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে প্রতিটি জোনে ৬০টি করে এবং খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও রংপুরের প্রতিটি জোনে অতিরিক্ত ২৫টি করে ভ্রাম্যমাণ দল থাকছে।
ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলার প্রতিটি দল ৩০০ জনকে এবং সিটি করপোরেশনের প্রতিটি দল ৫০০ জনকে ভ্যাকসিন দেবে। সূত্র মতে, ৬ হাজার ৫২টি অস্থায়ী এবং সাত শতাধিক স্থায়ী কেন্দ্রে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
২৬ ফেব্রুয়ারি পরে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে সীমিত আকারে প্রয়োজন বিবেচনায়
১৫ ফেব্রুয়ারি দিনে কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার ঘোষণা দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। ওই দিন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারির পর প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হবে না।
তবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে এসেছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি জানান, ২৬ ফেব্রুয়ারির পরে সীমিত পরিসরে প্রয়োজন বিবেচনায় কিছু স্থানে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে কিছুটা দেরি হতে পারে। দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজ নিয়ে কিছুটা ব্যস্ত থাকবে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সারাবাংলা/এসবি/এএম