সরকারবিরোধী বলয় গড়তে সিপিবি ব্যর্থ যেসব কারণে
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:৪৯
ঢাকা: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছে ঢিলেঢলা। সাংগঠনিক কাজ না করে নিজেকে নেতা হিসাবে দাবি করছে সবাই। অধিকাংশ নেতাকর্মীদের মধ্যে পেটি বুর্জোয়া প্রবণতা বিরাজ করছে। এতে করে দলটি দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফলে দলটি কাঙ্ক্ষিত গতিতে আগাতে পারছে না। ইচ্ছা থাকলেও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য বাম গণতান্ত্রিক জোটের বাইরে গড়ে তুলতে পারছে না আরেকটি বৃহত্তর বলয়। কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্ট থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৬৯ পৃষ্ঠার কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্ট কংগ্রেসে শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) উত্থাপন করা হয়েছে। এই রিপোর্টের ওপরে প্রতিনিধিরা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করে বিকেলে সর্বসম্মতিতে রিপোর্টটি পাস করা হতে পারে।
তারা আরও বলছেন, সাংগঠনিক করণীয় সম্পর্কে কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমান দেশের বিরাজমান সংকট থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করতে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমূল বিপ্লবী পুনর্গঠনে প্রয়োজন একটি সার্বিক সমাজবিপ্লব এবং এই লক্ষ্যে বিপ্লবী আন্দোলনের একটি জোয়ার গড়ে তোলা। এজন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী কমিউনিস্ট পার্টির অস্তিত্ব ও অগ্রগণ্য উদ্যোগী ভূমিকা।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সুনির্দ্দিষ্ট মুহূর্তে সাময়িক সময়ের জন্য বৃহত্তর বলয় গড়ে তোলার কর্মকৌশল কমিউনিস্ট পার্টির রয়েছে। সামজিক ও রাজনৈতিক শক্তি ভারসাম্যের সুনির্দ্দিষ্ট বাস্তবতায় চলমান ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের পাশাপাশি বৃহত্তর বলয় গড়ে তোলার প্রায়াসে একটি আন্তঃসর্ম্পক রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে বলয় গড়ে তোলার যে প্রয়োজনীয়তা ছিল, তা কার্যকর হয়নি। যদিও বাস্তবতার কারণেই তা সম্ভব হয়নি। তবু বলতে হয়, এক্ষেত্রে আরও উদ্যোগী হওয়ার সুযোগ ছিল। বৃহত্তর বলয় গড়ে তোলার জন্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলই নয়, সম্ভাবনাপূর্ণ ও উপযুক্ত বিভিন্ন শক্তি বর্গকে নিয়ে এই উদ্যোগ এগিয়ে নিতে হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে বর্তমান কমিউনিস্ট পার্টির সাংগঠনিক ও অর্থনৈতিক শক্তি অনেকটাই দুর্বল। পার্টি অভ্যন্তরীণ কোন্দল, পকেট কমিটি, আত্মীয়করণ ও পরিবারতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কারণে কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম ঢিলেঢালা ও নানা জটিলতার সৃষ্টি করেছে। দলটির মধ্যে কানকথা, দলাদলি ও অসুস্থ পরিস্থিতির অবসান হয়নি।
দলটির মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে শক্তিশালী করতে কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টে বেশ কিছু প্রস্তাবনা আনা হয়েছে। এতে বলা হয়, পার্টি অভ্যন্তরে কঠোর শৃঙ্খলা, সুউচ্চ নৈতিক মান, সততা, মানবতা, প্রগতিবাদী, বিপ্লবী মানসিকতা ও আচরণ সমুন্নত রাখতে হবে। পার্টির কাঠামোর অভ্যন্তরে সমালোচনা-আত্মসমালোচনায় চর্চায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে যে অসুস্থ সংস্কৃতি বিরাজ করে, তার প্রভাব থেকে পার্টিকে মুক্ত রাখতে হবে। পার্টি শৃংখলার ফ্রি স্টাইল কাজকর্ম, কথাবার্তা, উপদলীয় তৎপরতা অনুপ্রবেশ ইত্যাদির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, অলস আড্ডা, কানকথা প্রয়োগ, তত্ত্ব চর্চা, কূটতর্ক, দলাদলি ও কথা চালাচালির মতো অসুস্থ প্রবণতা কঠোর হাতে দমন করতে হবে। পার্টির সমর্থকদের সহযোগী সদস্যপদ প্রদান, প্রবীণ ও নবীনের সমন্বয়ে নেতৃত্বের টিম গঠন, তরুণ নেতৃত্বকে নিয়ে আসা এবং একইসঙ্গে তাদেরকে পার্টির বিপ্লবী ঐতিহ্য অভিজ্ঞতায় শিক্ষিত ও দক্ষ করে তোলার প্রয়াস জোরদার করতে হবে। ‘গ্যালাক্সি অফ লিডার্স’ গড়ে তোলা এবং ‘রিজার্ভ অফ লিডার্স’ রেখে চলার বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
সকল অবস্থায় পার্টির কাজ চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। আন্দোলন সংগ্রামের পথে আরও জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে জেলজুলুম নির্যাতন হামলা আরও বাড়বে, এগুলো মোকাবিলা করে পার্টিকে এগিয়ে নেওয়ার মানসিকতায় অগ্রসর হতে হবে। নিজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের বাস্তবতার ছাঁচে সংগঠনের কাজের ধারা পরিচালনার আত্মগত বা সাবজেক্টিভ পরিহার করতে হবে। বাস্তব চাহিদায় পার্টির যে ধারার কাজ দাবি করে, তার সঙ্গে যথাসম্ভব সম্পূর্ণভাবে ব্যাক্তিজীবন ও পারিবারিক জীবন পরিচালনায় সচেষ্ট হতে হবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এএম