৩৭ বছর পর ডিডিটি অপসারণ শুরু, নেওয়া হবে প্যারিসে
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:১৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মেডিকেল গুদামে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক ডাইক্লোরো ডাফেনাইল ট্রাইক্লোরেথেন (ডিডিটি) পাউডার অপসারণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তত্ত্বাবধানে গুদাম থেকে ডিডিটি নেওয়া হচ্ছে প্যাকেটে। প্যাকেটজাত শেষ হলে ডিডিটি তোলা হবে কনটেইনারে। পরে, জাহাজে ডিডিটি পাঠানো হবে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরীর আগ্রাবাদে সাব মেডিকেল ডিপো প্রাঙ্গনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ডিডিটি সরানোর কাজ শুরু হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ‘ডিডিটির মশা মারা ছাড়া আর কোনো উপকারিতা নেই। এটা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটা কোনোভাবেই নষ্ট হয় না, অপরিবর্তিত থেকে যায়। মানবদেহে নানান রোগের সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে একসময় শুধু সীতাকুণ্ডে একটি সরকারি কারখানায় ডিডিটি উৎপাদন করা হত। ৩৬-৩৭ বছর আগেই সেখানে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। সেখানে যেগুলো ছিল সেগুলো তারা সাব মেডিকেল ডিপোতে জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশে এখন একমাত্র এখানেই (মেডিকেল গুদাম) ডিডিটি আছে।’
‘বাংলাদেশের কাছে এমন কোনো যন্ত্রপাতি নেই যে চাইলেই সেগুলো আমরা ধ্বংস করতে পারব। সিটি করপোরেশনের পক্ষে সেগুলো কোথাও নিয়ে ফেলে দেয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এগিয়ে এসেছে। তারা সেগুলো ফ্রান্সের প্যারিসে নিয়ে নিউট্রাল করবে। আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ দিই।’- বলেন সচিব
ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশা নিধনের জন্য ১৯৮৫ সালে পাকিস্তান থেকে ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৫০০ মেট্রিকটন ডিডিটি আমদানি করা হয়েছিল। মানবদেহ, জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিচেনায় ১৯৮৯ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ হয় এই রাসায়নিক। কিন্তু ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় গুদাম প্লাবিত হয়ে কিছু রাসায়নিক ভেসে যায়।
অবশিষ্ট ডিডিটি তখন থেকেই চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে সরকারি সাব মেডিকেল ডিপোতে চারটি আলাদা-আলাদা গুদামে রাখা আছে। সম্প্রতি সরকার ডিডিটি পরিবেশসম্মতভাবে অপসারণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের নাম পেস্টিসাইট রিস্ক রিডাকশন ইন বাংলাদেশ। পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক ফরিদ আহমেদ প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পান।
বক্তব্যে প্রকল্প পরিচালক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ফায়ার কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী ও শ্রমিকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে বীমার ব্যবস্থা আছে। পরিবেশ অধিদফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ল্যাবের গবেষণা ও ঝুঁকি হ্রাসকরণ সংক্রান্ত সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সুতরাং এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের একটা সক্ষমতা তৈরি হবে যে, দেশে যদি কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক আসে সেটা আমরা ডিটেক্ট করতে পারব।’
ফরিদ আহমেদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, এপ্রিল মাসের মধ্যে সব ডিডিটি প্যাকেটজাত করে কনটেইনারে তোলার কাজ শেষ হবে। এরপর ধাপে ধাপে কয়েকটি জাহাজে করে ডিডিটিগুলো পাঠানো হবে ফ্রান্সে। ডিডিটি কনটেইনারে তোলার পর সব গুদামসহ সাব মেডিকেল ডিপোর সকল অফিস, স্থাপনাসহ পুরো প্রাঙ্গন পানি দিয়ে ধোয়া হবে। ধোয়ার পর সেই পানিও ডিডিটির সঙ্গে পাঠানো হবে ফ্রান্সে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১২টি দেশের বন্দরের ওপর দিয়ে যাবে ডিডিটিবাহী জাহাজ। এসব বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে।
এদিকে পুরো প্রকল্পের বাজেট ধরা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। জাতিসংঘের সংস্থা গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) পুরো অর্থায়ন করছে।
সচিব মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘থ্রি মিলিয়ন ডলারের মতো খরচ হবে। পুরো টাকাই জিইএফ দিচ্ছে। এটা তারা দিচ্ছে অনুদান হিসেবে, ঋণ নয়।’
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, ডিডিটি অপসারণের কাজে নিয়োজিত ফাও-বাংলাদেশের কর্মকর্তা সেসো মার্টিনভ, মার্ক ডেভিস, রবার্ট ডি সিম্পসন বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/আরডি/একেএম