Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুই বছর ধরে বন্ধ বাংলাদেশ-ভারত রেল চলাচল

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:৩৬

ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন অনেকটিই নিম্নমুখী। যে কারণে এরই মধ্যে তুলে দেওয়া হয়েছে বিধিনিষেধ। শিগগিরই খুলে যাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। এদিকে গণপরিবহন চলাচলও স্বাভাবিক হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে দুইটি ট্রেন চলাচল করত তা পুনরায় চালুর বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতগামী সব ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এখন ভারত সরকারের দিক থেকে সিদ্ধান্ত এলেই শুরু করা যাবে। অনুমতি পেতে এ সপ্তাহেই ভারতের রেলপথ মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র অনুযায়ী— ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’। ওই যাত্রার উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। দীর্ঘ ৪৩ বছর পর দুই দেশের মধ্যে এ ট্রেন যাত্রার সূচনা হয়েছিল। ঢাকা-কলকাতা পথে সপ্তাহে মৈত্রী এক্সপ্রেসের আটটি ট্রেন আসা- যাওয়া করত। এরমধ্যে বাংলাদেশের চারটি, ভারতের চারটি ট্রেন। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মৈত্রী ঢাকা থেকে সপ্তাহে তিন দিন ছেড়ে যায়। মৈত্রী এক্সপ্রেস সপ্তাহে পাঁচদিন চলত।

শুক্রবার, শনিবার, রোববার এবং মঙ্গলবার ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যেত মৈত্রী। আর কলকাতার চিৎপুর এলাকার কলকাতা স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে শুক্রবার, সোমবার, মঙ্গলবার এবং বুধবার।

ঢাকা-কলকাতা এসি কেবিনের ভাড়া প্রতি সিট ২ হাজার ৯৩৫ টাকা সঙ্গে আরও দিতে হবে ভ্রমণ কর ৫০০ টাকা। আর এসি চেয়ার ১ হাজার ৯৫৫ টাকার সঙ্গে ভ্রমণ কর ৫০০ টাকা যোগ করে ২ হাজার ৪৫৫ টাকা। আর কলকাতা- ঢাকা এসি কেবিনের ভাড়া প্রতি সিট ২ হাজার ১৫ রুপি আর এসি চেয়ারে জন প্রতি ভাড়া ১ হাজার ৩৪৫ রুপি। ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড় প্রযোজ্য হবে। তবে তা নির্ধারিত হবে পাসপোর্ট অনুযায়ী।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর খুলনা-কলকাতা পথে ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ চলাচলের সূচনা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করেন।

প্রাথমিকভাবে একদিন করে চালু হলেও পরে বাড়ানো হয় উভয় ট্রেনের ট্রিপ। এটি প্রথম দিকে বাংলাদেশের খুলনা থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার ছেড়ে যেত এবং দুপুরে কলকাতা যাত্রা শুরু করে বন্ধন। এরপর পেট্রাপোল, যশোরের বেনাপোল হয়ে যশোর হয়ে খুলনা পৌঁছায়। এ ছাড়া এই ট্রেনে এক্সিকিউটিভ চেয়ার ও এসি চেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে। খুলনা-কলকাতার এক্সিকিউটিভ চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৪৭০ টাকা সঙ্গে ৫০০ টাকা ভ্রমণ কর রয়েছে। এসি চেয়ার ৯৮০ টাকার সঙ্গে যোগ হবে ভ্রমণ কর ৫০০ টাকা।

আর ঢাকা- জলপাইগুড়ি পথে চলাচল করে মিতালী এক্সপ্রেস। চলাচল শুরু করে। এটিও দুই দেশের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবেই ২০২১ সালের ২৭ মার্চ এই ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়। এটি ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে গিয়ে ভারতের শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুঁড়িতে গিয়ে থামে। এটি তৃতীয় ট্রেন যা বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাতায়াত করে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এ সব পথেই ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে মহামারি করোনাভাইরাসের হানা শুরু হওয়ার সময়েই মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর করোনার সংক্রমণ মাথায় নিয়ে উদ্বোধন হওয়া মিতালী যাত্রাই শুরু করতে পারেনি। সব মিলিয়ে টানা দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচল। কবে নাগাদ শুরু হতে পারে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি রেলপথ মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শিগগিরই এ প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। ১ মার্চের মধ্যেই দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যে কলকাতার পরিস্থিতি জানতে চেয়ে ভারত সরকারের কাছে চিঠি দেবে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। বিধিনিষেধ যদিও আমাদের দিক থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ভারতের পরিস্থিতিও আমাদের দেখতে হবে। তাদের অনুমতি পেতে হবে।’

তিনি জানান, ভারতের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু করতে শিগগিরই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুমতি চেয়ে ভারতের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠানো হবে।

উল্লেখ্য, মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিমানের মতো বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিমান চলাচল শুরুর পর থেকেই ট্রেন চালু করে দেওয়ার দাবি উঠেছিল। কারণ বাংলাদেশের অনেক মানুষ চিকিৎসা, ভ্রমণ, ব্যবসাসহ নানা কাজে ভারতে যাতায়াত করে থাকেন। নিরাপদে যাতায়াতে অনেকেই রেলপথ বেছে নেন।

এদিকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, করোনাকালে ভারত থেকে রেলপথে পণ্য আমদানি অনেকে বেড়েছে। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত থেকে রেলপথে পণ্য আমদানি হয় প্রায় ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে পণ্য আমদানির পরিমাণ বেড়েছে ১২৬ শতাংশ।

সারাবাংলা/জেআর/একে

করোনা করোনাভাইরাস কোভিড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর