ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মিলনমেলায় সম্প্রীতির বাণী
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:২০
রাজশাহী: রাজশাহীতে বাংলাদেশ-ভারত পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা শুরু হয়েছে। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতৃকতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যে দিয়ে মিলনমেলার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তারপর অনুষ্ঠিত হয় নাগরিক সংবর্ধনা। অনুষ্ঠানে দু’দেশের অতিথিদের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে সম্প্রীতির বাণী।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর ৫০ বছর পূর্তিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ এই মিলনমেলার আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে ভারতের মন্ত্রী, অভিনেতা, কবি, শিল্পী, সাংবাদিকসহ মোট ৩৬ জন ইতোমধ্যে রাজশাহী এসে পৌঁছেছেন। সকালে সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুসহ স্থানীয় রাজনীতিকেরা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী রামপ্রসাদ পালসহ দেশটির অন্য অতিথিদের নিয়ে জাতির পিতার ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর নগরীর কাদিরগঞ্জে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এর আগে, নগর ভবনের প্রধান ফটক থেকে শিশুদের নৃত্য আর গানের তালে তালে অতিথিদের মঞ্চে নিয়ে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেওয়া হয়। দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের জনগণ ও সরকার নিস্বার্থভাবে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছেন, আত্মত্যাগ করেছেন। ভারত অনেক বড় দেশ, অর্থনৈতিকভাবে ও সামরিকভাবে শক্তিশালী দেশ। কাজেই তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক গভীর, আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার হওয়া উচিত। সাংস্কৃতিক মিলনমেলা দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত করবে, শক্তিশালী করবে।’
সভাপতির বক্তব্যে মেয়র লিটন বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সাংস্কৃতিক মিলনমেলার আয়োজন করতে পেরে রাজশাহীবাসী আনন্দিত ও গর্বিত। এই সুযোগে সমবেত সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সাংস্কৃতিক মিলনমেলার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল বলেন, ‘৫ বছর ধরে দুই দেশের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশের মানুষের মাঝে সম্পর্ক আরো যেন গভীর হয়, সেক্ষেত্রে এই ধরনের মিলনমেলা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘এই সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন দুই দেশের সম্পর্কে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে সংস্কৃতির বিনিময় আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।’
স্বাগত বক্তব্য দেন ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের (কো-অর্ডিনেটিং চ্যাপ্টার) প্রধান সমন্বয়ক এসএম সামছুল আরেফীন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে এই সাংস্কৃতিক মিলনমেলার উভয় দেশে আয়োজন করা হচ্ছে। রাজশাহীর এই পঞ্চম আসরের দুই দেশের সম্পর্ক আরো সমন্নুত হবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।’
অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগের সংসদ সদস্য, ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিচারক, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশিষ্ট নাগরিক, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, বিভাগের বিভিন্ন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা, স্থানীয় ব্যবসায়ী, আইনজীবী এবং রাজশাহী সিটি করপোরশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিকাল থেকে রাজশাহী কলেজ মাঠে শুরু হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সোমবার পর্যন্ত মিলনমেলা চলবে। এতে অংশ নিতে ভারত থেকে মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল ছাড়াও তার সহধর্মিণী মঞ্জু পাল, খ্যাতিমান কবি ও শিল্পী মৌসুমি রায় চৌধুরী, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা চক্রবর্তী সেনগুপ্ত, সুভপ্রসন্ন ভাট্টাচার্য, ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের (ইন্ডিয়া চ্যাপ্টার) সহ-সভাপতি সত্যম রায় চৌধুরী, ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের (ইন্ডিয়া চ্যাপ্টার) কার্যকরী সভাপতি রাধা তমাল গোস্বামী, দৈনিক আজকাল পত্রিকার সাংবাদিক তরুণ চক্রবর্তী, খ্যাতিমান অভিনেতা ও শিল্পী সুভ্রনীল চ্যাটার্জী, শিল্পী সান্তনু রায় চৌধুরী, নবনিতা রায় চৌধুরী, মানদাবী চক্রবর্তী, আর্টিস্ট সিতাংশু মজুমদারসহ ৩৬ জন ভারত থেকে এসেছেন।
সারাবাংলা/এমও