মালয়েশিয়ায় কর্মী নিতে লাইসেন্সে বৈষম্য হবে না
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:০৪
ঢাকা: কর্মী প্রেরণে সব লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিক্রুটিং এজেন্সির অংশগ্রহণের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন সফররত মালয়েশিয়ার প্লান্টেশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড কমমোডিটিস মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী দাতুক হাজাহ যুরাইদা বিনতি কামারুদ্দিন। তিনি জানান, সরকার অনুমোদিত লাইসেন্স নিয়ে কোনো ধরনের বৈষম্যমূলক নীতিকে তিনি সমর্থন করেন না। এ ছাড়া অভিবাসন নিয়ে যে কোনো ধরনের সিন্ডিকেশনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রূটিং এজেন্সিস’র (বায়রা) সাবেক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী সিন্ডিকেশনের বিরুদ্ধে তার এই অবস্থান তুলে ধরেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বায়রার উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি মোহা. নূর আলী, সাবেক মহাসচিব শামিম আহমেদ চৌধুরি নোমান, সাবেক অর্থ সচিব ফখরুল ইসলাম ও সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান।
বৈঠকে বায়রা নেতৃবৃন্দ মালয়েশিয়ার মন্ত্রীকে বলেন, ‘সব বৈধ লাইসেন্সকে কাজের সমান সুযোগ দিতে হবে। সব লাইসেন্স কাজের সুযোগ পেলে অভিবাসন নিয়ে দুর্নীতির সুযোগ থাকবেন না। গেটওয়ে বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অধিক কর্মী অনেক কম খরচে মালয়েশিয়া যেতে পারবে।’
নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১৯শে ডিসেম্বর দুদেশের মধ্যে সাক্ষরিত সমঝতা স্মারকে উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রী সারাভানান মুরুগান গত ১৪ই জানুয়ারি প্রবাসি কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদকে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির অনুমোদনের জন্য চিঠি দেন। যা দুইদেশেই ব্যাপক সমালোচিত হয়। মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রীর ২৫ এজেন্সির সিন্ডিকেটের প্রস্তাব বাংলাদেশের আইন বহির্ভূত হওয়ায় সে বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে চিঠি দেয় বাংলাদেশ। চিঠির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ও নবায়নকৃত ১৫৩০ লাইসেন্সের তালিকা পাঠানো হয়েছে।
বায়রা নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০১৭-২০১৮ সালে সিন্ডিকেটের দুর্নীতির কারণে কোর্ট কর্তৃক সকল এজেন্সির কাজ করার ব্যাপারে রেফারেন্স রয়েছে। সেক্ষেত্রে আবারো যদি একই মনোপলি ফর্মূলায় কর্মী প্রেরণের ব্যবস্থা হয় তবে যে কোনো সময় প্রতিযোগিতা আইনে মামলা হতে পারে। ফলে কর্মী প্রেরণ আবারো অনির্দিষ্টকালের জন্য অনিশ্চতায় পড়বে। সমঝোতা স্মারকে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির বিষয়ে কোনো কথা উল্লেখ নেই। লাইসেন্স নিয়ে বৈষম্যে করা যাবে না। বাংলাদেশের সব লাইসেন্সের স্ট্যাটাস একই।
বায়রা নেতারা আরও বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার ও বায়রা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রীর ২৫ এজেন্সির সিন্ডিকেটের প্রস্তাব নীতিগত ভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বিধায় বিষয়টি ঝুলে আছে।’
শ্রমবাজার নিয়ে যে কোনো প্রকার সিন্ডিকেশনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের সঙ্গে একমত পোষণ করেন বায়রা নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ বাংলদেশ সরকার অনুমোদিত ও নবায়নকৃত যে ১৫৩০ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠানো হয়েছে তা মালয়েশিয়া সরকার গ্রহণ করলেই যে কোনো সময় কর্মী প্রেরণ সম্ভব বলে জানান।
বৈঠকে মালয়েশিয় মন্ত্রী এ ব্যাপারে তার অবস্থান তুলে ধরে জানান, সরকার অনুমোদিত এজেন্সিদের নিয়ে কোন ধরনের বৈষম্যেমূলক নীতিকে তিনি সমর্থন করেন না। এছাড়া রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়ে যে কোনো ধরনের বৈষম্যেমূলক নীতির বিপক্ষে তার অবস্থান।
তিনি বলেন, ‘দুই দেশকে অবশ্যই সমঝেতা স্মারক অনুযায়ী কর্মী প্রেরণ করতে হবে। সমঝোতা স্মারক বহির্ভূত কোনো প্রক্রিয়াই অনুসরণ করা যাবে না।’
বৈঠকে মালয়েশিয়ার প্লান্টেশন সেক্টরে বাংলাদেশি কর্মীদের দীর্ঘ কয়েক যুগের অবদানের কথা স্বীকার করে মন্ত্রী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এবং বাংলাদেশি কর্মী নির্ভর এই সেক্টরের জন্য বাংলাদেশি কর্মিদের প্রতি তার সরকারের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বায়রার নেতৃবৃন্দকে বলেন, প্লান্টেশন সেক্টরে শুন্য খরচে (জিরো কস্টে) কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। জিরো কস্ট ফর্মুলায় দেশে ও বিদেশের মাটিতে কর্মীর অভিবাসনের সকল খরচ নিয়োগকর্তা বহন করবেন।
নিয়োগকর্তা সংশ্লিষ্ট রিক্রূটিং এজেন্সিকে সার্ভিস চার্জ ও প্রসেসিং ফি প্রদান করবে। মালয়েশিয়ার শ্রম আইন অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত ১২০০ রিঙ্গিট বেতন পাবে ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী কর্মীরা হোস্টেল, চিকিৎসা সেবাসহ অন্যন্য প্রাপ্য সুবিধাদি ভোগ করবে। বৈঠকে বায়রার নেতৃবৃন্দ মালয়েশিয়া সরকারের শূন্য খরচে অভিবাসনের বিষয়টিকে স্বাগত জানান। কর্মীর স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারকে অভিবাসন সংক্রান্ত সকল বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও দেন তারা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে