Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিপিবির রিপোর্ট— দ্বিদলীয় বৃত্তের ‘সহজ পথে’ বামপন্থি দলগুলো

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:২২

ঢাকা: লুটেরা বুর্জোয়া শক্তির বিপরীতে বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিকল্প শক্তি হিসেবে গড়ে উঠবে— এমন প্রত্যাশা ছিল জনসাধারণের। কিন্তু বামপন্থিরা এখনো সেই সম্ভাবনাকে কার্যকর করতে পারছে না। নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও বামপন্থি শক্তিগুলো এখনো ঐক্যের একক কোনো বৃহত্তর কাঠামো গড়ে তুলতে পারেনি। বরং বামপন্থি বলে পরিচিত একটি অংশও মহাজোটে থেকে ক্ষমতাসীন সরকারের অংশ হিসেবে কাজ করছে। শুধু তাই নয়, নিজেদের মধ্যে ঐক্যশক্তির সমাবেশ গড়ে তোলার কঠিন প্রক্রিয়ায় যাওয়ার বদলে বরং আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেন্দ্রিক দ্বিদলীয় বৃত্তের কোনো একটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সহজ চিন্তাও অনেক বামপন্থি সংগঠনের মধ্যে কাজ করে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) দ্বাদশ কংগ্রেসে উত্থাপন করা রিপোর্টে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সার্বিক বিষয় পর্যালোচনায় এমন বক্তব্য উঠে এসেছে। শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) শুরু হওয়া সিপিবির এই কংগ্রেস চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

সিপিবির এই রিপোর্টে রাজনৈতিক প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, এখনকার রাজনৈতিক কর্তব্য, বৃহত্তর শক্তির বলয় গড়া, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, ফ্যাসিস্ট প্রবণতা প্রতিরোধে বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণমূলক তথ্য উপাত্ত ও করণীয় বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

সিপিবি’র রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বামপন্থিদের মধ্যে সিপিবি বড় শক্তি হলেও একক শক্তিতে বিকল্প হিসেবে দায়িত্ব পালন করার মতো সামর্থ্য সিপিবির নেই। পুরো শক্তিকে একত্রিত করেও দায়িত্ব পালনে সিপিবি সফল হয়নি। এমনকি বামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে গণতান্ত্রিক কিছু দলের যুগপৎ আন্দোলনের একাধিক চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। সিপিবি মনে করছে, নিজেদের মধ্যে এই ঐক্য গড়ে তোলার কষ্টকর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার বদলে বরং বিদ্যমান ধনতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গেই নিজেদের সম্পৃক্ত রাখাতে সহজ মনে করছে বামপন্থি অনেক সংগঠন।

আরও পড়ুন- সরকারবিরোধী বলয় গড়তে সিপিবি ব্যর্থ যেসব কারণে

রাজনৈতিক প্রস্তাবে বামপন্থিদের যুথবদ্ধ হয়ে পথচলার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক পথচলায় একটা সময় সিপিবি-বাসদের ঐক্য গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে বাসদের ভাঙনের ফলে এ ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক বামমোর্চার সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ধারায় সিপিবি ও বাসদসহ আটটি বামপন্থি দল ২০১৮ সালে বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠন করে। সম্ভাবনাপূর্ণ বামপন্থি সব দলকে এ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও এখন পর্যন্ত তা করা যায়নি। অন্যদিকে যারা সমবেত হয়েছেন, তাদের কেউ কেউ আবার বাম-সংকীর্ণতা, বিপ্লবী বাক্যবাগীশতা, জনবিচ্ছিন্নতা ও বিমূর্ত তত্ত্বায়নের জগতে আবদ্ধ থাকার মতো নানা ধরনের দুর্বলতায় আক্রান্ত। এগুলো বামপন্থিদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে অগ্রসর হওয়ার পথে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।

বিজ্ঞাপন

রিপোর্টে সিপিবি আরও বলছে, কেউ কেউ কেবল বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে একদফা ইস্যুতে ঐক্যজোট করার কথা ভাবছে। অগণতান্ত্রিক নির্ভরযোগ্য শক্তির সঙ্গে বাম জোটকে কর্মসূচিভিত্তিক অক্ষের পথে পরিচালিত করার প্রচেষ্টা নিলেও তা কখনো সফল হয়নি। এছাড়া বামপন্থি শক্তির বাইরের শক্তিগুলোর সঙ্গেও মিলিত হয়ে বাম-গণতান্ত্রিক, প্রগতিবাদী, জনদরদি বড় কোনো রাজনৈতিক শক্তি এখনো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। ফলে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উপস্থিতির ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। দেশের রাজনীতির মূল সমস্যা, ঘাটতি ও চ্যালেঞ্জ। অথচ এই অভাব পূরণ ছাড়া সংকট থেকে উত্তরণের পথ নেই। এই চ্যালেঞ্জিং কর্তব্য বিবেচনায় রেখে সিপিবির শক্তি বাড়াবে হবে, সেই হিসাবে রাজনৈতিক রণকৌশল নির্ধারণ করে চলতে হবে।

আরও পড়ুন- ‘বামপন্থী শক্তির উত্থান ছাড়া বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা অসম্ভব’

সিপিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মানুষ আওয়ামী সরকারের শাসন পছন্দ করছে না। আবার বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় ফিরে আসুক— সেটিও মানুষ চাইছে না। জনগণ চায় একটি বিকল্প গণমুখী জনদরদি প্রগতিশীল রাজনৈতিক সরকার। জনগণের মাঝে এ ধরনের শক্তি এখনো তারা দেখতে পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি ছাড়া আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো কার্যকর শক্তি দৃশ্যমান নেই। এ কারণে জনগণের একটি বড় অংশের মধ্যে বিএনপির সমর্থন বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

দেশে জনগণের পছন্দনীয় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সিপিবিকে গণমানুষের সামনে আসার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কমিউনিস্ট পার্টিকে শক্তিশালী হতে হলে সামর্থ্য, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। দেশের সবচেয়ে পরীক্ষিত দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ পার্টি হিসাবে সিপিবির দায়িত্ব অনেক। সেজন্য পার্টিকে সত্যিকার অর্থে বিপ্লব ও শ্রেণিসংগ্রামের পার্টি, শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের পার্টি, জাতীয় স্বার্থ রক্ষার পার্টি, গণভিত্তিসম্পন্ন পার্টি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

আরও পড়ুন- কংগ্রেসের জন্য প্রস্তুত সিপিবি, রিপোর্টের খসড়া চূড়ান্ত

এ প্রসঙ্গে রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনি সংগ্রামের জন্য পার্টিকে প্রস্তুত করে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে এবং পার্টির সব স্তরের সংগঠনকে সেই কাজের জন্য অনেক আগের থেকে প্রস্তুত থাকার মতো করে দক্ষ ও উপযুক্ত করে তুলতে হবে। গণআন্দোলন, গণসংগ্রাম গড়ে তোলার চেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে। কমিউনিজমের দিকে অগ্রসর হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হলে তাকে কাজে লাগাতে হবে।

প্রস্তাবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, দেশ আজ গভীর সংকটে নিপতিত। বহুদিন ধরে চলতে থাকা রাজনীতির বাজারিকরণ, দুর্বৃত্তায়ন, নীতি-আদর্শ নির্বাসিত করে বাজারি লেনদেন, লাভ-লোকসানের আত্মস্বার্থবাদিতার মতো প্রক্রিয়ায় রাজনীতির সর্বনাশ ঘটে চলছে। বিরাজনীতিকরণের ফলে দেশে আজ কার্যত রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রশাসন ও মুষ্টিমেয় লুটেরা ধনীদের এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সিপিবি আরও বলছে, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার নজরদারি বাড়ছে। চলতি রাজনীতির এমন পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে হতাশাও বাড়ছে। ক্ষমতাসীনরা সবকিছু ঠিক আছে বলে দেখানোর চেষ্টা করলেও প্রকৃতপক্ষে দেশের রাজনীতিতে এক ধরনের থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গণতন্ত্রহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির বিপদ বেড়েই চলছে। সামগ্রিক বিবেচনায় দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিপদ আরও বাড়ছে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

টপ নিউজ দ্বাদশ কংগ্রেস রাজনৈতিক প্রস্তাব সিপিবি সিপিবির রিপোর্ট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর