শিল্পীর তুলিতে ‘বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম থেকে অর্জনের ইতিহাস’
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:৫০
ঢাকা: ১৫০ ফুট দীর্ঘ স্কল পেইন্টিংয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈচিত্র্যময় ও বহুমাত্রিক জীবন নিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শিল্পীর তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠেছে আমাদের বাংলাদেশের সংগ্রাম থেকে অর্জনের ইতিহাস। শুধু বর্ণমালার উপরেই না শিল্পীর তুলিতে মানুষ এটি দেখতে পারবে, উপলব্ধি করতে পারবে, জানতে পারবে, শিখতে পারবে। মাটি থেকে তৈরি বিশুদ্ধ রঙে এই চিত্রকর্মটির প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত চিত্রকর্ম ( স্ক্রল পেইন্টিং) ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: মহাজীবনের পটপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।
দেশের প্রতিটি অর্জন-সংগ্রামে শিল্পীদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যে একটা অনন্য সৃষ্টি করলেন আমাদের শিল্পী যেটা আমি মনে করি শাহজাহান আহমেদ বিকাশ তার অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে যে তথ্যগুলো দিলেন, সেটিই কিন্তু আমাদের জন্য অনেক কিছু জানার। বিশেষ করে আমি যখন বিভিন্ন শিল্পীদের বিভিন্ন চিত্রকর্ম দেখি, আমার মনে হয় প্রত্যেকেই যেন এক একটা রঙয়ের প্রতি একটা বিশেষ তাদের আগ্রহ থাকে।’
‘আমি কয়েকবার জিজ্ঞেসও করেছিলাম, এই রঙটা যেটার নাম আমার জানা ছিল না আজকেই আমি বলতে গেলে শুনলাম বা শিখলাম যে বান্ড অ্যাম্বার। যেটা মাটি থেকে আসে, মাটি পুড়িয়ে যে রঙটা করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতিটি চিত্রকর্মই কিন্তু বিকাশ সবসময় এই রঙটা দিয়েই একেছে। আমি একবার তাকে জিজ্ঞাসাও করেছিলাম এই কথাটা। আজকে যে তিনি এর ব্যাখাটা দিলেন। তিনি মাটি থেকে উঠে আসা রঙ দিয়েই যে মানুষটি এই বাংলার মাটি ও মানুষের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, তাকেই তিনি তুলে ধরেছেন এবং তাকেই তিনি মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছেন, এই রঙটা দিয়ে।’
কাজেই ধন্যবাদ জানাই আমাদের শিল্পীকে। অন্যান্য শিল্পীদের প্রতিও ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আফজাল সাহেবকে হয়ত সবাই জানেন, তিনি নাটক করেন, সিনেমা করেন তিনি কিন্তু যে একজন এতো বড় চিত্র শির্পী সেটা কিন্তু অনেকের বোধহয় ধারণাই ছিল না। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তার সেই শিল্পী মন আমাদের কাছে প্রকাশ হয়েছে।’
শিল্পীর শিল্পকর্মের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তিনি দীর্ঘদিন থেকে নয় মাস এর উপর কাজ করেছেন। প্রতিদিন আট নয় ঘণ্টা কাজ করেছেন, নিজের সব কাজ ছেড়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর উপরে তিনি একটা স্ক্রল পেইন্টিং করবেন এবং তার ভিতর থেকে বর্ণমালাহীন শুধু শিল্পীর তুলির আঁচড়ে লেখা একটা ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন।’
যে ইতিহাস একদিন স্বাধীনতা বিরোধী বা জাতির পিতার খুনীরা মুছতে চেয়েছিল সেটাকেই তিনি কোন অক্ষরে বা বর্ণমালায় না এনে শুধুমাত্র শিল্পীর তুলি দিয়েই তিনি যে এই ইতিহাসটাকে তুলে ধরেছেন, সেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনী সাথে সাথে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে সবকিছুই তার মাঝে ফুটে উঠেছে বলে যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কারণ আমাকে পাঠানো হয়েছিল আমি দেখেছি। আমি এবং আমার ছোট বোন রেহানা আমরা সত্যি বিস্মিত হয়েছি যে এতো চমৎকারভাবে কিভাবে একজন শিল্পী করতে পারে , যদি সেই অনুভূতিটা না থাকে। তার ভিতরে সেই ভালবাসা না থাকে, আত্মবিশ্বাস না থাকে। এটা অসাধারণ শিল্প শিল্পী তৈরি করেছেন।
আমাদের দেশে ক্যানভাস আসলে এতো বড় হয় না এবং তিনি সেটা সংগ্রহ করেছেন সেই সূদুর কাশ্মীর থেকে। ইন্ডিয়াতে গিয়ে তিনি অনুরোধ করে এই বিশাল একটা ক্যানভাস তৈরি করা, এটাও একটা অসাধারণ চিন্তা এবং কাজ বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা।
এটি এমনভাবে প্রদর্শন করা উচিত যেখানে সব মানুষ যেন এটা দেখতে পারে। শুধু এয়ারপোর্ট না আমার মনেও একটা আকাঙ্খা আছে, আমি চিন্তা করছিলাম টুঙ্গিপাড়ায় এমন একটা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা হবে, আমি এমন একটা জায়গা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি যেখানে যারা টুঙ্গিপাড়ায় যান বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে যান সেখানেও তারা যেন এই চিত্রকর্মটা দেখতে পারে, তার জন্য একটা স্থান সৃষ্টি করা হবে।
এছাড়া এটাকে আরও আধুনিক প্রযুক্তিতে অর্থ্যাৎ অনলাইনেও যেন মানুষ এটা দেখতে পারে সেই ব্যবস্থাও নিতে হবে। সেটাও আমরা নেব এবং অনলাইনে দেখার ব্যবস্থাটা আমরা জাতির পিতার যে স্মৃতি জাদুঘর সেখানে এটা স্থাপন করব।
পাশাপাশি সমস্ত বাংলাদেশে যাতে প্রদর্শিত হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন এবং প্রবাসেও সাথে প্রদর্শিত করার আশ্বাস দেন।
এখন অবশ্য আমরা সরকারে আছি সরকারিভাবে করতে পারব। আর যখন সরকারে থাকব না তখন হয়ত আমরা ট্রাস্টের থেকেও করতে পারব। কাজেই এটা কোন সমস্যা নাই এবং আম মনে করি এটা আমাদের করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সত্যি খুব আনন্দিত। আমি আবারও বলব, শিল্পীর তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠেছে আমাদের বাংলাদেশের সংগ্রাম থেকে অর্জনের ইতিহাস। শুধু বর্ণমালার উপরেই না শিল্পীর তুলিতে মানুষ এটা দেখতে পারবে, উপলব্ধি করতে পারবে, জানতে পারবে, শিখতে পারবে। কাজেই এই স্ক্রল পেইন্টিং তৈরি এবং সেখানে শিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশ তিনি অনেক কষ্ট করেছেন, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং এতো চমৎকারভাবে এটা তৈরি করেছেন। সেজন্য আমি তাকে আমিসহ আমার ছোট বোন রেহানার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। সকলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই, জাতির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। এতো চমৎকার একটা জিনিস তুলে ধরার জন্য, মানুষের হাতে দেয়ার জন্য।
প্রসঙ্গত, ১৫০ফুট দীর্ঘ জীবনীর উপর যে শিল্পকর্মটা করা হয়েছে চিত্রকর্ম স্কল পেইন্টিংয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈচিত্রময় ও বহুমাত্রিক জীবন নিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশের আঁকা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: মহাজীবনের পট’ শিরোনামে স্ক্রল পেইন্টিংটি বাংলাদেশে সম্পাদিত সর্ববৃহৎ পটভূমিতে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক চিত্রকর্ম। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারীতে প্রদর্শিত হবে। জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সহযোগী সংস্থা ‘মাত্রা’ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে।
স্ক্রল পেইন্টিং শিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশ চিত্রকর্মের প্রেক্ষাপট বলেন, আমি এই শিল্পকর্মটি আঁকার জন্য যে রঙটি বেছে নিয়েছিলাম এই রঙটি হচ্ছে বান্ড অ্যাম্বার। এই রঙটি আসলে মাটি থেকে তৈরি করা একটি রঙ। এই রঙটি পুড়ে পুড়ে খাঁটি একটি রঙ এবং বিশুদ্ধ একটি রঙ। এবং তেলরঙ চিত্রে বিশুদ্ধ এই রঙটি আমি বেছে নিয়েছি এই কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের মাটি থেকে উঠে আসা একজন মানুষ। যিনি নিজেও পুড়ে পুড়ে খাঁটি হওয়া একজন বিশুদ্ধ মানুষ। তাকে অন্য কোন রঙে মিশ্রণ না করে শুধুমাত্র বান্ড আম্বার দিয়ে এঁকেছি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, মাত্রা’র ম্যানেজিং পার্টনার শিল্পী আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের সভাপতি শিল্পী জামাল আহমেদ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি বাস্তবায়নের প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
সারাবাংলা/এনআর/একে
আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেখ হাসিনা