Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিগারেটে বছরে রাজস্ব ফাঁকি ৫ হাজার কোটি টাকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:৪৩

ঢাকা: দেশে সব পণ্য সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে বিক্রি হলেও সিগারেট ও বিড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করছে না উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সিগারেট কোম্পানিগুলো খুচরা মূল্যে বিক্রেতাদের কাছে সিগারেট বিক্রি করছে। অথচ বিক্রেতারা তার চেয়ে বেশি মূল্যে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে। এছাড়াও দেশের সবখানে প্যাকেটের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে ভোক্তাদের কাছে সিগারেট বিক্রি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃত বিক্রয়মূল্যের ওপর কর আদায় সম্ভব হলে চলতি অর্থবছরেই প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতে পারত। এভাবেই প্রকারান্তরে বছরের পর বছর তামাকজাত পণ্যে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো।

‘তামাকজাত দ্রব্যের (সিগারেট ও বিড়ি) খুচরা ও পাইকারি বিক্রয়মূল্যে জাতীয় বাজেটে মূল্য ও কর পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণে একটি সমীক্ষা’ শীর্ষক একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিইআর ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে এ গবেষণা করেছে।

রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর (বিইআর) সম্মেলন কক্ষে এ গবেষণার ফলাফল জানানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক গবেষণার ফল ও গবেষণা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

ড. রুমানা বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে— অতি উচ্চ স্তরের সিগারেটের ২০ শলাকার প্যাকেটে মুদ্রিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২৭০ টাকা হলেও বিক্রি করা হয় গড়ে ২৯৪ টাকা ২৯ পয়সায়। এছাড়া উচ্চ স্তরের সিগারেট ২০৪ টাকার পরিবর্তে গড়ে প্রায় ২২৯ টাকা ৮৮ পয়সা, মধ্যম স্তরের সিগারেট ১২৬ টাকার পরিবর্তে ১৩৫ টাকা ৮৬ পয়সা ও নিম্ন স্তরের সিগারেট ৭৮ টাকার পরিবর্তে ৯৫ টাকা ১৫ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, একইভাবে সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বিড়ি। এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট-বিড়ি বিক্রি অব্যাহত থাকায় প্রতিবছরই হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

পাইকারি দোকানেও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট ও বিড়ি বিক্রি হয় বলে এ গবেষণায় উঠে এসেছে বলে জানান ড. রুমানা।

গবেষকরা জানান, গবেষণাটি মূলত পরিমাণগত উপাত্তের ভিত্তিতে সম্পন্ন করা হয়েছে। ঢাকা, বরিশাল, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে বিভাগীয় শহরসহ আরও দু’টি জেলা শহর মিলে মোট ১২টি শহর থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি শহর থেকে চারটি করে মোট ৪৮টি খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে সংজ্ঞায়িত পাবলিক প্লেসের খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র থেকে এ তথ্য নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া উল্লিখিত ১২টি শহর থেকে দু’টি করে মোট ২৪টি পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্রের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান গবেষকরা।

গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকারের রাজস্ব বাড়াতে এবং ফাঁকি বন্ধ করতে অ্যাড ভ্যালোরেম করারোপ পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি প্রতিটি দ্রব্যের বাজার ও বিক্রয় পর্যবেক্ষণে এবং কর আদায়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করতে হবে; সিগারেটের চার স্তরভিত্তিক কর কাঠামো ধারাবাহিকভাবে এক স্তরে নিয়ে আসতে হবে; এবং সিগারেট ও বিড়ির খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে।

সুপারিশে আরও বলা হয়, কর ফাঁকি রোধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সামগ্রিক সমস্যা মোকাবিলা করতে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে একটি জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরুদ্দীন আহমেদ, ভাইটাল স্ট্যাটেজিসের প্রোগ্রাম হেড মো. শফিকুল ইসলাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ড. সৈয়দ মাহফুজুল হক, দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, দ্য ইউনিয়নের টেকনিকাল কনসালট্যান্ট মো. হামিদুর রহমান খান, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ড. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, সিটিএফকে’র প্রোগ্রাম অফিসার আতাউর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম আব্দুল্লাহ।

এ ছাড়াও দেশে কর্মরত তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে গবেষণার ওপর প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

টপ নিউজ তামাকপণ্য রাজস্ব ফাঁকি সিগারেট-বিড়ি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর