Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৮ বছর পার হলেও শেষ হয়নি হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার বিচার

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:১২

ঢাকা: লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার ১৮ বছর পার হলেও এখনো শেষ হয়নি বিচার। এতদিনেও বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আসামিপক্ষ ও ভিকটিমের পরিবার।

এ বিষয়ে হুমায়ুন আজাদের ছোট ভাই মো. মঞ্জুর কবির জানান, ভাইকে হারানোর ১৭ বছর পার হয়ে গেলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচার পাইনি। বিচারের আশাও করি না। ভাইকে হারিয়েছি, তাকে তো আর ফিরে পাবো না। তার অভাব তো পূরণ হবে না। তাকে যারা হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। তবে আশা করবো, প্রকৃত দোষীরা যেন সাজা পায়। যারা নির্দোষ তারা যেন সাজা না পায়। হুমায়ন আজাদ যখন সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন তখন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। তাকে জাহাঙ্গীর গেইট আটকে দেওয়া হয়। ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে হেঁটে গিয়ে তাকে দেখে এসেছিলেন। তখন প্রয়োজন ছিল তাই গিয়েছিলেন। এখন তো প্রয়োজন নেই। তাই কিচ্ছু বলেনও না। বললেই তো হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, বিচারের জন্য চাওয়া পাওয়ার কিছু আমাদের নেই। এর চেয়ে বড় চাওয়া তার সমাধিস্থলে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে কিছু একটা করা হোক। যাতে তার একটা স্মৃতি থাকে। মানুষ সেখানে যাবে তাকে স্মরণ করবে। এটাই আমাদের এখন বড় চাওয়া।

সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বিপুল দেবনাথ জানান, আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বিলম্বের কারণে মামলাটির বিচার এতদিন শেষ হয়নি। তবে হত্যা মামলাটি প্রায় শেষের পর্যায়ে। আশা করি, অতি শিগগিরই মামলাটির রায় ঘোষণা হবে।

অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ জানান, দীর্ঘদিন হলেও বিচার শেষ হয়নি। হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় কোনো সাক্ষী আদালতে বলেননি যে আসামিরা জড়িত। আশা করছি আসামিরা খালাস পাবেন।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ঢাকার ৪র্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মাকছুদা পারভীনের আদালতে মামলা দুটি বিচারাধীন। হত্যা মামলায় গত বছরের ১৮ জানুয়ারি চার আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। হত্যা মামলাটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন তা হয়নি। আদালত আগামী ২ মার্চ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের তারিখ ধার্য করেছেন।

একই ঘটনার বিস্ফোরক আইনের মামলাটি গত ১৭ জানুয়ারি সাক্ষ্যের জন্য ধার্য ছিল। ওই দিন সাক্ষী হয়নি। আদালত আগামী ২৮ মার্চ মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন।

এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে হামলার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হন ড. হুমায়ুন আজাদ। হামলার সময় তাকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ওই হামলার পর হুমায়ুন আজাদ ২২ দিন সিএমএইচে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে জার্মানির মিউনিখে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই বছরের ১২ আগস্ট তিনি মারা যান।

ওই ঘটনায় পরদিন তার ছোট ভাই মঞ্জুর কবির বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। পরে তা হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। এছাড়া একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনেও অপর একটি মামলা হয়।

২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর এই মামলার বাদী মো. মঞ্জুর কবির মামলাটির বর্ধিত তদন্তের আবেদন করলে ওই বছরের ২০ অক্টোবর আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। বিভিন্ন সময় মামলাটি তদন্ত করেছেন রমনা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান, সিআইডির পুলিশ ইন্সপেক্টর কাজী আব্দুল মালেক, মোস্তাফিজুর রহমান ও লুৎফর রহমান।

২০১০ সালের ১৮ অক্টোবর আসামি আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ৫ দফায় বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে শেষ পর্যন্ত এ মামলার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল ওই মামলার তদন্ত শেষে সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। একই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ওই পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

এর আগে, ২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটে আবুল আব্বাস ভূইয়া ও গোলাম মোস্তফা নামের দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদের অব্যহতি দেওয়া হয়। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলো- জেএমবির সুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শাউন, আনোয়ার আলম, হাফিজ মাহমুদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু।

আসামিদের মধ্যে সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু (পলাতক) এবং হাফিজ মাহমুদ মারা গেছেন।

সারাবাংলা/এআই/এসএসএ

হুমায়ুন আজাদ মামলা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে তরুণের মৃত্যু
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:১০

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর