Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে পারবি না, আবরারের মতো মরবি’

জাককানইবি করেসপন্ডেন্ট
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:০০

জাককানইবি: ছাত্রলীগের রাজনীতি না করায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক সাধারণ শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। এসময় ওই শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ না করার হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘বেশি কথা বললে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে পারবি না, আবরারের মতো মরবি।’

এ নিয়ে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, গতকাল রোববাররাতে সদ্য চালু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে নির্যাতিত ওই শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত অবস্থায় ত্রিশাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।

সহপাঠীরা বলেন, নিহাদকে রাত দেড়টার পর ধরে নিয়ে গিয়ে পিঠে ও মাথায় গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। অত্যাচারের শিকার হয়ে সে বেশ কয়েকবার বমিও করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র উপদেষ্টা তপন কুমার সরকার বলেন, ‘নিহাদ এখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছে।’

জানা যায়, রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদকে নির্যাতন করা হয়।

নিহাদ বলেন, ‘আমি কেন ছাত্রলীগের গ্রুপভিত্তিক রাজনীতি করি না এ অভিযোগেই মূলত আমাকে ডাকা হয়। এরপর আমাকে নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে আমার হাতে রামদা দিয়ে ছবি তোলা এবং আমার ফেসবুকে খালেদা জিয়ার ছবি আপলোড দেয়ানো হয়। এরপর আমার একটা ভিডিও ধারণ করে জোরপূর্বক তাদের ইচ্ছেমতো কথা বলতে বাধ্য করা হয়।’

এসব ঘটনায় ওয়ালিদ নিহাদ রেজিস্ট্রার বরাবর একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। যেখানে বলা হয়, ‘সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পলাশ ভাই আমাকে হলে নিয়ে যায় এবং যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে থাপ্পড় মারে নাট্যকলা বিভাগের হিমেল ভাই। এরপর আমার বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তুহিন ভাই, ২০১৪-১৫ সেশনের মুমিন ভাই, ইইই বিভাগের অ্যালেক্স সাব্বির ভাই, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের তানভীর ভাইসহ আরো ৫/৬ জন টানা লাথি ঘুষি মারতে থাকেন। সঙ্গে ফোকলোর বিভাগের যাযাবর নাঈম (আবু নাঈম আব্দুল্লাহ) ভাই লাথিঘুষি মারতে থাকেন। গলায় ও বুকের ওপর দাঁড়িয়ে অনেক মেরেছে নাঈম ভাই। আমি পড়াশোনা নিয়েই থাকতে চাই। কিন্তু আমাকে ক্যাম্পাসে থাকতে হলে রাজনীতি না করে উপায় নাই। একপর্যায়ে নাট্যকলার হিমেল ভাই আমার হাতে রামদা দিয়ে আমাকে যাযাবর নাঈম ভাইয়ের কাছে রাজনীতি করবো বলে পা ধরে মাফ চাইতে বলে। এরপর আমার ফেসবুক প্রোফাইলে খালেদা জিয়ার ছবি আপলোড দেয়ানো হয়, যা আমি পরে ডিলিট করি। এসময় তারা একটি ভিডিও বানায়। যেখানে আমার হাতে রামদা দিয়ে জোরপূর্বক তাদের ইচ্ছেমতো কথা বলানো হয়।’

পরে তারা এসব ঘটনা প্রকাশ না করার হুমকি দিয়ে বলে, ‘কোনো শিক্ষকের কাছে বিচার নিয়ে যাবি না। রাকিব ভাই চাইলে ভিসি পরিবর্তন হয়। বেশি কথা বললে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে পারবি না, আবরারের মতো মরবি।’

এনিয়ে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের দরজা আটকে আন্দোলন করছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারীরা।

হল প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার বলেন, ‘এ ঘটনাটি আমি সকালে জানতে পেরেছি। আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো। হল সম্পর্কিত আমার এখতিয়ারের মধ্যে যা আছে সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করবো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছে ২৪ ঘণ্টা সময় চাওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী আমরা যা করতে পারবো তা আগামীকাল দুপুরের মধ্যেই করা হবে।’

সারাবাংলা/এমও

আবরার ছাত্রলীগ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় টপ নিউজ নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর