Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফেব্রুয়ারি মাসে কাশিমপুরে ৫ জনসহ কারা হেফাজতে ১৪ মৃত্যু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:৩১

ঢাকা: চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে পাঁচ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে। দেশের বাকি কারাগারগুলো মিলিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে কারা হেফাজতে মৃত্যুর মোট সংখ্যা ১৪। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে দেশে কারা হেফাজতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

ফেব্রুয়ারি মাসের মাসিক মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ জরিপে এ তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে সংস্থাটি। এমএসএফ বলছে, ১২টি জাতীয় দৈনিক ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারদের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা এই জরিপ করেছে।

বিজ্ঞাপন

জরিপের ফলাফলে এমএসএফ বলছে, কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে এক নারী ও দুই পুরুষ বন্দির মৃত্যু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা কারাগারে মৃত্যু হয়েছে এক নারী ও এক পুরুষ বন্দির। এছাড়া দেশের আরও তিন জেলা কারাগারে আরও তিন বন্দির মৃত্যু হয়েছে।

এমএসএফের তথ্য বলছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলা কারাগারে থাকা মাদক মামলার হাজতি বিল্লাল হোসেন (৫০) গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য রোগে অসুস্থ বোধ করলে প্রথমে তাকে গাইবান্ধা পুলিশ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে পরদিন তাকে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। অন্যদিকে, এদিন দুপুরে ফরিদপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন শুনানির একর্পযায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে শাহজাহান মৃধা নামে এক জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- বছরের প্রথম মাসেই কারাগারে ৫ মৃত্যু, র‍্যাব ও পুলিশি হেফাজতে ২

৩ ফেব্রুয়ারি সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বুকে ব্যথা অনুভব করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি কালাম (৪৫)। প্রথমে তাকে কারা হাসপাতাল ও পরে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

৮ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের কয়েদি রমিজ উদ্দিনকে (৫৩) অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

১০ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকাকালীন মারা যান হালিমা বেগম (৬৫)। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে থাকাকালীন অসুস্থ বোধ করলে তারা হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ও ঢাকা মেডিকেলে একজন মারা যান। তারা দু’জনেই কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের কয়েদি ছিলেন। তাদের মধ্যে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বিএসএমএমইউতে মারা যান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার (৭৭)। একই দিন হঠাৎ অসুস্থ হলে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয় তিন মাসের সাজাপ্রাপ্ত মাদকাসক্ত ইকবাল হোসেন ইকবালকে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

১৪ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মারা যান নজির আহমদ (৫৫) নামে এক রোহিঙ্গা কয়েদি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এদিন সকালে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে সিলিং ফ্যানে গামছায় ঝুলন্ত অবস্থায় জহুরুল ইসলাম (১৬) নামে এক কিশোর বন্দির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

১৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের মোছা. ফুলজান বেগম (৫৮) অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে কারা অভ্যন্তরের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

১৮ ফেব্রুয়ারি মারা যান দুই কারাবন্দি। ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের শামসুদ্দিন শেখ (২৬) অসুস্থবোধ করলে ঢামেকে আনার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিন গাজীপুরের কাশিমপুরের কেন্দ্রীয় কারাগারের শামীম আহমেদকে অসুস্থ অবস্থায় (৪৪) শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়।

২৩ ফেব্রুয়ারি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে নুর ইসলামকে (৬০) কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে র্কতৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হাশেম আলীর (৩০) বুকে ব্যথা উঠলে কারাগারে তার ইসিজি করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে র্ভতি করা হয়। পরে দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে হাজতি ফজর আলী (২৮) জেলখানায় হঠাৎ অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।

এসব ঘটনার ওপর ভিত্তি করে ফেব্রুয়ারি মাসের কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনার পর্যবেক্ষণে এমএসএফ মনে করছে, কারা অভ্যন্তরে অপর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থার কারণেই এত বেশি বন্দির মৃত্যু হচ্ছে। কারাগারে চিকিৎসাব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে তাদের বাইরের হাসপাতালে নিতে হচ্ছে। কারা অভ্যন্তরে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাগুলো যথাযথ তদন্ত করে তার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা উচিত বলে এমএসএফ মনে করে।

সারাবাংলা/আরএফ/সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

এমএসএফ কারা হেফাজতে মৃত্যু মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর