Monday 21 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শৃঙ্খলা ফেরাতে আসা নগর পরিবহনেই এখন চরম বিশৃঙ্খলা

আনিস মণ্ডল, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর
১ মার্চ ২০২২ ১০:৩৭

ঢাকা: রাজধানীর গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা দূর করতে বাস রুট র‍্যাশনালাইজেশনের অংশ হিসেবে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু হয় ঢাকা নগর পরিবহনের। শুরুতে অনেক সংকট থাকলেও কাউন্টার ছাড়া যাত্রী ওঠানামা না করা এবং টিকিট ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট ভাড়া আদায়ে প্রথম মাসেই আস্থার জায়গা অর্জন করে সিটি করপোরেশন পরিচালিত এই বাস কোম্পানি। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই ভেঙে পড়েছে শৃঙ্খলা। বরং উল্টো চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে ঢাকার বাস যাত্রীদের আশার প্রতীক হয়ে ওঠা নগর পরিবহন।

বিজ্ঞাপন

কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটারের রুটে মাত্র ৫০টি বাস নিয়ে যাত্রা শুরু করে নগর পরিবহন। প্রতিশ্রুতি ছিল, শিগগিরই বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। কিন্তু বাসের সংখ্যা না বাড়িয়েই এই রুটে চলাচলকারী রজনীগন্ধ্যা পরিবহনের দুই/আড়াইশ বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে গণপরিবহনের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে কয়েক লাখ অফিস যাত্রীর এই রুটে।

নগর পরিবহনের যাত্রী ও কাউন্টারম্যানরা বলছেন, নগর পরিবহনের মাত্র ৫০টি বাস একদমই অপ্রতুল এই বিশাল রুটের জন্য। আগে বাসগুলো যাত্রী তুলেও আরও যাত্রীর জন্য মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকত। এতে যাত্রীদের অনেক সময় পথেই নষ্ট হতো। আর বর্তমানে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস কাউন্টারেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সময়ভেদে এই অপেক্ষা ১০-১৫ মিনিট থেকে শুরু করে এক-দেড় ঘণ্টা ছাড়িয়ে যায়। তবে এখানেই মুক্তি নেই। অনেক সময় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যাত্রীরা বাসে উঠতে পারছেন না। সকাল ও বিকেলে কানায় কানায় পূর্ণ থাকে নগর পরিবহন। দাঁড়ানোর মতো সুযোগও থাকে না। নিয়মিতই কাউন্টারম্যানদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন যাত্রীরা।

বছিলা র‌্যাব অফিসের সামনে অবস্থিত নগর পরিবহনের কাউন্টারম্যান সারাবাংলাকে বলেন, সকালের প্রথম বাস আসে সাড়ে ৭টায়। এর আগেই কাউন্টারের সামনে জমে যায় অর্ধশত যাত্রী। বিকল্প উপায় না থাকায় যাত্রীদের দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। কখনো কখনো এক/দেড় ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। প্রথম প্রথম অনেক ভালো ব্যবহার পেলেও বর্তমানে অনেক যাত্রীই মারমুখী আচরণ করছেন। তবে যাত্রীদের অপেক্ষায় রাখতে আমাদেরও ভালো লাগে না। কিন্তু কিছুই করার নেই। দ্রুত বাসের সংখ্যা না বাড়ালে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই সার্ভিস ক্ষতির মুখে পড়বে।

বিজ্ঞাপন

নগর পরিবহনের নিয়মিত যাত্রী শফিক ইসলাম। মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে মতিঝিল যাতায়াত করেন তিনি। শফিক সারাবাংলাকে বলেন, প্রথম প্রথম দুইতলা বাসগুলোতে সিট পাওয়া যেত। এখন বসিলাতেই বাসগুলো ওভারলোড হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অন্তত সিটি কলেজ পর্যন্ত যেতে হয়। এরপর সেখানে কিছু যাত্রী নামলে সিট পাওয়া যায়। এত কমসংখ্যক বাস দিয়ে এত বড় একটি রুট পরিচালনার সিদ্ধান্ত আহাম্মকি ছাড়া আর কিছু না।

অফিস শেষে ঘরে ফেরার পথে সংকট আরও ভয়াবহ। গত কয়েকদিন শাহবাগ ও রমনা কাউন্টারে বিকেলে উপস্থিত হয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাউন্টারম্যান টিকিট বিক্রি করতে চান না। কারণ বাস এলেও যাত্রীরা ওঠার সুযোগ পান না। রজনীগন্ধ্যা বাস না থাকায় অন্য দুইটি বাস কোম্পানি মালঞ্চ ও মিডনাইটও যাত্রীতে পূর্ণ থাকে। বেশিরভাগ যাত্রীই জানেন না, তিনি আদৌও গাড়িতে উঠতে পারবেন কি না।

নগর পরিবহনের নিয়মিত যাত্রীরা আরও বলছেন, শুরুতে নির্দিষ্ট কাউন্টার ছাড়া যাত্রী ওঠানামা বন্ধ রাখার বিষয়টি ছিল সাধুবাদ পাওয়ার মতো। মাস দুয়েকের ব্যবধানে ভেঙে পড়েছে সেই শৃঙ্খলাও। এখন কাউন্টারের বাইরেও অনেক জায়গাতেই যাত্রী নামানো হয়। আর বিশেষ বিশেষ সময়ে সুযোগ পেলে যাত্রীও ওঠান বাসের চালক-হেলপাররা। সাধারণত এই সুযোগটা তারা নিয়ে থাকেন ফেরার পথে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায়। এসময় যাত্রীসংখ্যা কম থাকায় বাসচালকরা বাড়তি উপার্জন করতে নিয়মের বাইরে গিয়ে এভাবে যাত্রী তুলছেন।

এই বাসে চড়ে নিয়মিত বসিলায় ফেরা লালন নামে একজন বললেন, অন্য বাসগুলোর মতোই চার রাস্তা বেড়িবাঁধ এলাকায় এসে যাত্রী তোলে নগর পরিবহন। অন্য বাসগুলোর অভিজ্ঞতায় মনে হচ্ছে, আর কিছুদিন পর নগর পরিবহনও সব জায়গা থেকেই যাত্রী তুলবে। নতুন যারা আসে, শুরুর দিকে ভালোই সার্ভিস দেয়। কিন্তু একসময় দেখা যায়, সবাই একই রকম আচরণ করছে।

এদিকে, বাস রুট র‍্যাশনালাইজেশন কর্তৃপক্ষ একের পর এক মিটিং করলেও বাসের সংখ্যা বাড়ানোর কোনো সুখবর পাওয়া যাচ্ছে না। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সবশেষ অনুষ্ঠিত হয় একবিংশতিতম সভা, যাতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

ওই মিটিং শেষে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর, শংকর, শাহবাগ হয়ে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটে এই একক কোম্পানির বাস চলছে। যেখানে নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে টিকেট কেটে বাসে উঠছেন যাত্রীরা। রাজধানীর গণপরিবহন চলাচলে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টায় চালু হওয়া এই পরিবহনের বাস আরও তিনটি রুটে নামতে যাচ্ছে।

মেয়র তাপস জানান, এখন ঘাটারচর থেকে আসাদগেট দিয়ে ফার্মগেট, পল্টন হয়ে ভুলতা পর্যন্ত নগর পরিবহনের বাস নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও ঘাটারচর থেকে আসাদগেট দিয়ে সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, পল্টন, কমলাপুর সায়দাবাদ হয়ে মেঘনা ঘাট পর্যন্ত আরেকটি রুটেও বাস চলবে।

মেয়র তাপস বলেন, এসব রুটে আরও ভালো সেবা দিতে কী ধরনের পরিকল্পনা নিতে হবে, কী কী অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে, এজন্য পরামর্শকরা কাজ শুরু করেছেন। আগামী সভায় তারা এ নিয়ে কমিটির কাছে সুপারিশ জমা দেবেন। পরে ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করতে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এই কাজটি করতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে।

চালু হওয়ার রুটে অন্য বাস চলাচল বন্ধের বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, অনুমোদনহীন বাস জব্দ করার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনে তারা আরও কঠোর হবেন।

সারাবাংলা/এএম/টিআর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর