‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রোষানালে পড়েছি’
১ মার্চ ২০২২ ১৬:৪৩
ঢাকা: দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা দিয়েছেন, সেটি বাস্তবায়ন করতে গিয়েই প্রভাবশালীদের রোষানালে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে অপসারিত উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) দুপুরে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে একটি বিভাগীয় মামলায় হাজিরা দিতে এসেছিলেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
শরীফ উদ্দিন বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমি সমস্যায় পড়েছি। প্রভাবশালীদের রোষানালে পড়েছি। আমি দুদকের সহকর্মী, সাংবাদিক ও মানুষের দোয়ার কারণে গুম থেকে রেহাই পেয়েছি। এর চেয়েও বড় বিষয় হলো প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজর। তিনি ন্যায় বিচারের প্রতীক। আমি তার (প্রধানমন্ত্রীর) কারণেই গুম হওয়া থেকে বেঁচে গেছি।
তার বিরুদ্ধে ওঠা সব ধরনের অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে পারবেন দাবি করে দুদক থেকে অপসারিত এই কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমার মা। আজ আমি বড় অসহায়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে আজ পরিবার-পরিজন নিয়ে সমস্যায় পড়েছি এবং সমস্যায় আছি। মা, গত দুই সপ্তাহ ধরে আমি ঘুমাতে পারছি না। মা, আমাকে আপনি সুযোগ দিন। কমিশন আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ তুলেছে, তার প্রতিটির সব ব্যাখ্যা দিতে আমি পারব। আমাকে সরাসরি অপসারণ করে দুদকে আসার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিন কেন দুদকে এসেছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে শরীফ বলেন, আমি অপসারিত হওয়ার পরও আজ একটি বিভাগীয় মামলার হাজিরা দিতে এসেছি। আমার কাছে এটি খুবই বিব্রতকর বিষয়। এই পরিস্থিতি হবে, তা কখনো ভাবিনি। আমার বিরুদ্ধে তিনটি ডিপি চলমান রয়েছে— একটি ব্যাংক হিসাব নো-ডেবিট সংক্রান্ত, দ্বিতীয়টি নথি হস্তান্তরে দেরি হওয়ার কারণ সংক্রান্ত, আরেকটি দেরিতে কর্মস্থলে যোগ দেওয়া সংক্রান্ত। আমার কাছে অবশ্যই সব প্রশ্নের উত্তর আছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই— মা, আমাকে সেসব উত্তর দেওয়ার সুযোগ করে দিন।
এদিন যে বিভাগীয় মামলায় শরীফ হাজিরা দিতে এসেছিলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ— তিনি নথি হস্তান্তরে দেরি করেছেন। শরীফের দাবি— মামলাগুলো অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর হওয়ায় সেগুলো বুঝিয়ে দেওয়া সময়সাপেক্ষ ছিল। কিন্তু পটুয়াখালী থেকে তাকে ফাইল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ঢাকা আসতে দেওয়া হয়নি। গত ২২ আগস্ট নির্দেশনা পাওয়ার পর তিনি পাঁচ দিন ধরে নথিগুলো বুঝিয়ে দেন।
কমিশন তার আবেদন গ্রহণ করবে— এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে শরীফ উদ্দিন বলেন, আমার ঊর্ধ্বতন স্যারদের ভুল বোঝানো হয়েছে। আমি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি চাকরিবিধি অনুযায়ী কমিশন বরাবর আদেশ রিভিউ করার জন্য আবেদন করেছি। আশা করি, কমিশন আমার আবেদন গ্রহণ করবে এবং আমি ন্যায় বিচার পাব।
এর আগে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যানের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে দুদক থেকে অপসারণ করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। তবে শরীর উদ্দিনকে অপসারণের বিরুদ্ধে দুদকের বেশকিছু কর্মকর্তা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা মানববন্ধনও করেছেন।
সারাবাংলা/এসজে/টিআর