আদালতে গণধর্ষণ মামলা, পুলিশের বিরুদ্ধে আসামি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ
১ মার্চ ২০২২ ২০:০৪
ঢাকা: গণধর্ষণের অভিযোগে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন করেছেন ৩৩ বছরের বয়সী এক নারী। মামলায় তিন জনের বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ এবং পাঁচ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহয়তার অভিযোগ এনেছেন তিনি। একইসঙ্গে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আসামিদের গ্রেফতার করেও মামলা না নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক জুলফিকার হায়াতের আদালতে ওই নারী এই মামলার আবেদন করেন।
এসময় আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান। ওই ট্রাইব্যুনালের পেশকার ইশতিয়ার আলম জানিয়েছেন, মঙ্গলবার মামলার আদেশ হয়নি। আগামীকাল বুধবার (২ মার্চ) আদেশ দিতে পারেন আদালত।
মামলায় হাতিরঝিল থানার ওসি ছাড়া বাকি যে পুলিশ কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন— হাতিরঝিল থানার ওসি (তদন্ত) মহিউদ্দিন ফারুক, ওসি (অপারেশন) গোলাম আযম এবং দুই উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ও চয়ন। মামলার বাকি আসামিরা হলেন— মোসা. আলেয়া, কাজী তোফাজ্জল হোসেন, জাভেল হোসেন পাপন, মো. জামাল, রাকিবুল হাসান, তানীম রেজা বাপ্পী, পান্নু হাওলাদার ও ইউসুফ রিপন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বাদীর সঙ্গে তার স্বামীর বিচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি বাবার বাসায় বসবাস করছিলেন। এক বছর আগে তার খালাতো বোন রিতা আক্তারের মাধ্যমে তানীম রেজা বাপ্পীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। বাপ্পী তাকে (বাদী) বিয়ের প্রস্তাব দেন। গত বছরের ২২ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সহযোগী আলেয়া, তোফাজ্জল হোসেন, পাপন, জামাল, রাকিবুল হাসান, পান্নু ও রিপনের উপস্থিতিতে বাপ্পী তাকে বিয়ে করেন। এ ঘটনাকে সাজানো নাটক বলছেন বাদী।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, কথিত ওই বিয়ের পর বাপ্পী তার বাবার বাসা ভাড়া নেন এবং সংসার শুরু করেন। এর মাস দুয়েক পর বাপ্পীর কথাবার্তা ও চলাফেরা সন্দেহজনক মনে হয় বাদীর কাছে। তিনি বাপ্পীর কাছে বিয়ের কাবিননামা চাইলে তিনি এ নিয়ে টালবাহানা শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে বাপ্পী তাকে মারধর করেন। পরে তিনি নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী তোফাজ্জল হোসেনের কাজী অফিসে যান এবং কাবিননামা চাইলে বিয়ে পড়াননি বলে তোফাজ্জল হোসেন তাকে বের করে দেন। এসময় তিনি বুঝতে পারেন, বিয়ের নামে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, এরপর তিনি কাবিননামা চাইলে গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাকে কাবিননামা দেওয়ার কথা বলে তার এক কথিত আত্মীয় বাসায় নিয়ে যান বাপ্পী। সেখানে গিয়ে তিনি আরও পাঁচ জন মেয়েকে দেখতে পান। তাদের আত্মীয় বলে পরিচয় দেন বাপ্পী। এরপর বাপ্পী তাকে ওই বাসায় রেখে বের হয়ে দু’জনকে নিয়ে আসেন, যাদের পরিচয় দেন বন্ধু হিসেবে। এরপর প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বাপ্পী তাকে ধর্ষণ করেন। পরে আলেয়ার সহযোগিতায় জাবেল হোসেন পাপন ও মো. জামাল নামে ওই দুই ব্যক্তিও তাকে ধর্ষণ করেন। বাপ্পীর নির্দেশে আলেয়া সে ঘটনার ভিডিওধারণ করেন।
এজাহারে বাদী বলেন, ওই ঘটনায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে একপর্যায়ে কৌশলে সেখান থেকে বের হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। সেখান থেকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের সহযোগিতায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ভর্তি হন হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে। সেখানে চিকিৎসা শেষে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাতিরঝিল থানায় গিয়ে তিনি ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। এসময় মামলায় আসামি হিসেবে নাম উল্লেখ করা থানার পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে থানায় বসিয়ে রেখে আসামিদের ধরতে অভিযানে বের হন। অভিযানে আসামি আলেয়াসহ আরও কয়েকজন নারী এবং বাকি আসামিদের গ্রেফতার করে তারা থানায় নিয়ে আসেন।
বাদী এজাহারে অভিযোগ করে বলেন, এরপর রহস্যজনক কারণে পুলিশ ও আসামিরা তাকে এ ঘটনায় মামলা না করতে অনুরোধ করেন। তিনি রাজি না হলে তারা এক লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে চান। তাতেও তিনি রাজি হননি। পরে পুলিশ কর্মকর্তারা বড় অঙ্কের ঘুষ নিয়ে আসামিদের ছেড়ে দেন। পরে তার কাছ থেকে কয়েকটি সাদা কাগজে সেই নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে থানা থেকে বের করে দেন।
বাদীর অভিযোগ, ১৭ ফেব্রুয়ারি থানা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর ওই দিন দিবাগত রাত ১টার দিকে বাসায় ফেরার সময় খিলগাঁও এলাকায় আসামি পান্নু, রিপন ও পাপনসহ অজ্ঞাতানামা আরও দুই-তিন জন তার গতিরোধ করে তাকে অপহরণের চেষ্টা করেন। এসময় তিনি চিৎকার করলে আশপাশে লোকজন জড়ো হলে আসামিরা পালিয়ে যান। এসময় তারা বলে যান, পরবর্তী সময়ে তাকে ধরতে পারলে তারা গুম করে মেরে ফেলবেন।
সারাবাংলা/এআই/একেএম/টিআর