গুরুত্ব পাচ্ছে নারী স্বাস্থ্য, রেস্টুরেন্টে স্যানিটারি ন্যাপকিন
২ মার্চ ২০২২ ০৯:৩৫
কক্সবাজার: জেলার সদর থানা সড়কে ‘আল-গণি’ রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেতে যান ঢাকা থেকে পেশাগত দায়িত্বপালনে কাজে আসা সাংবাদিক রাজনীন ফারজানা। ওই রেস্টুরেন্টের ওয়াশরুমে গিয়ে ভিন্ন এক চিত্র দেখতে পান তিনি। নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় রাখা ওয়াশরুমে রাখা হয়েছে স্যানিটারি ন্যাপকিন। এর মধ্যে দিয়ে দেশে নারী স্বাস্থ্য গুরুত্ব পাওয়ার বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।
সারাবাংলার এই নারী সাংবাদিকের সূত্র ধরে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, আল-গণি রেস্টুরেন্টের ওয়াশরুমে স্যানিটারি ন্যাপকিনের দেখা মিললেও পর্যটন নগরীর বাকী আরও ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউসে নেই এই ব্যবস্থা। তবে তারকা মানের হাতেগোনা কিছু আবাসিক হোটেলের ওয়াশরুমে স্যানিটারি ন্যাপকিন রয়েছে।
এসব আবাসিক হোটেলের ওয়াশরুমগুলোতে তোয়ালে, স্যান্ডেল, শ্যাম্পু, সাবান, ব্রাশ-পেস্টসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা হলেও স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখা প্রয়োজন মনে করে না। এমনও তথ্য পাওয়া যায়, স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখার বিষয়টি হোটেল পরিচালকের মাথায় নেই। অনেকে এ ব্যাপারে অবগত নন। আবার অনেকে অসচেতনতা ও লজ্জার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি এড়িয়ে চলে।
এ ব্যাপারে নানা সমালোচনা করেন নারীর প্রতি সম্মান ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি রাখা সচেতন লোকজন। তারা বলছেন, অজ্ঞতা-অবহেলা ও কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে এই অবস্থা। স্বাস্থ্যকর নগরী খ্যাত কক্সবাজারে এমন অব্যবস্থাপনা খুবই দুঃখজনক।
সাংস্কৃতিক কর্মী ইয়াছির আরাফাত জানান, পিরিয়ডে কারণে স্কুল-কলেজ জীবনে অনেক সহপাঠীকে লজ্জা আর বিভ্রান্ত হতে দেখেছি। অজ্ঞতা আর সচেতনতার অভাবে অনেকে তাদের সহযোগিতাও করেনি। তাই শুধু মাত্র রেস্টুরেন্ট আর আবাসিক হোটেলে নয় সকল স্কুল-কলেজ, অফিস ও যাত্রাবাহী বাসে নারীদের সুরক্ষায় স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখা আবশ্যক। তা বাস্তাবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।
সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থার (স্কাস) চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা জানান, কক্সবাজারের অনেক উন্নত হোটেল-রেস্টুরেন্টে এই ভাল উদ্যোগটি লক্ষ্য করা যায়নি, যেটি আল-গণি রেস্টুরেন্টে করা হয়েছে। আল-গণির এই কাজটি সবার জন্য শিক্ষণীয়। নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য আরও সচেতন হতে হবে। তখনই প্রতিষ্ঠা পাবে নারী বান্ধব একটি সমাজ ও জাতি।
এনজিও কর্মী হাজেরা খানম জানান, বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে— উন্নত দেশগুলোতে টিস্যুর মতোই নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই পর্যটন নগরীতে বিষয়টি দুর্লভ।
কক্সবাজার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপ-প্রকল্প পরিচালক জেসমিন আক্তার জানান, একজন নারীর জন্য এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল, কলেজ এবং অফিস ছাড়াও ঘর থেকে বের হওয়া নারীর যেকোনো মুহূর্তে পিরিয়ড হতেই পারে। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোকে নারীদের সহায়তায় স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখা আবশ্যক।
ওয়াশরুমে স্যানিটারি ন্যাপকিন রেখে প্রশংসা দাবিদার ঐতিহ্যবাহী আল-গণি রেস্টুরেন্টের মালিক মোহাম্মদ রুবেল উদ্দীন জানান, আমার বাবা মরহুম আব্দুল গণির নামেই এই আল-গণি রেস্টুরেন্ট। আল-গণির প্রত্যেকটা শাখার মূলমন্ত্র হলো মানুষের সেবার মধ্য দিয়েই ব্যবসা করা। এই ভাবনা থেকেই নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য ওয়াশরুমে স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপারসহ প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র রাখা হয়েছে। এছাড়া রেস্টুরেন্ট আলাদা রুমে শিশুদের দুধপান ও নারীদের নামাজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ব্যবসার জন্য সেবা নয় সেবার মধ্য দিয়েই ব্যবসা উচিৎ সবার।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রিপন চৌধুরী জানান, পিরিয়ড়ের সঠিক সময় স্বাস্থ্যসম্মত ন্যাপকিন ব্যবহার করা আবশ্যক। অজ্ঞতা, অসচেতনতা ও লজ্জার কারণে অনেকে বিষয়টাকে গুরুত্ব দেয় না। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্যানিটারি ন্যাপকিন নিশ্চিত করা উচিৎ। যাতে করে প্রতিষ্ঠা হয় নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সম্মান।
সারাবাংলা/এনএস