‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব দরজায় কড়া নাড়ছে, দক্ষ মানবশক্তি গড়তে হবে’
৩ মার্চ ২০২২ ১৫:৩১
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। এখন উপযুক্ত দক্ষ মানবশক্তি আমাদের গড়ে তুলতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা আপনাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আপনাদের উদ্ভাবনী জ্ঞানের প্রয়োগ যেন মানুষের কল্যাণে হয়।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বিজ্ঞানী, গবেষক এবং বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’ এবং বিশেষ গবেষণা-অনুদান প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জনপ্রিয়করণের লক্ষ্যে আমরা ৪৯২টি উপজেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্লাব গঠন করেছি। আমাদের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ গত ১৩ বছরে ২১১টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে, ৯৪টি প্রযুক্তি বাণিজ্যিকীকরণের জন্য হস্তান্তর করেছে, ৫১টি প্রযুক্তির প্যাটেন্ট অর্জন করেছে এবং ৯৫টি’র জন্য প্যাটেন্ট আবেদন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের গৃহীত ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সক্ষমতা যাচাই করছি। জিনোমিক গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেছি। হাইড্রোজেন শক্তি গবেষণাগার, জাতীয় জিন ব্যাংক স্থাপনের কাজ দ্রুতই সম্পন্ন হবে।’ সব বিভাগীয় শহরে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে-বিদেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এমএস, এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি-উত্তর প্রোগ্রামের জন্য বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ প্রদান করছি। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত ৫৯৬ জনকে ২২৫ কোটি টাকা ৮২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি-উত্তর পর্যায়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ প্রদান করছি। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২২ হাজার ২২০জন ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষকদের মধ্যে ১৩৭কোটি ৫৩ লাখ টাকা প্রদান করেছি। ফেলোশিপের পাশাপাশি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে বিশেষ অনুদান প্রদান করছি। গত ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ৫ হাজার ২০টি প্রকল্পের অনুকূলে ১৭৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা প্রদান করেছি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের দেওয়া রাজস্ব থেকে আপনাদের ফেলোশিপ এবং গবেষণা অনুদান দিচ্ছি। আপনাদেরও সর্বোচ্চ শ্রম ও দায়বদ্ধতা নিয়ে জাতীয় উন্নয়নে কাজ করতে হবে। কারণ আমরা চাই, দক্ষ মানব সম্পদ গড়তে। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। কৃষিকেও যান্ত্রীকরণ করে উন্নতকরণ করতে হবে পাশাপাশি শিল্পায়নও আমাদের দরকার। আর এই শিল্পায়নের ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সেটা আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। তার উপযুক্ত দক্ষ মানবশক্তি আমাদের গড়ে তুলতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা আপনাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি এবং আপনাদের কাছ থেকেও যেন দেশের মানুষ সহযোগিতা পায়। আপনাদের উদ্ভাবনী জ্ঞানের প্রয়োগ যেন মানুষের কল্যাণে হয়। আমি মনে করি, এই মেধা কাজে লাগিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে পারব।’
বাংলাদেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্তত এখন আর আমাদের কারও কাছে হাত পেতে চলতে হয় না। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার ৯০ শতাংশ আমরা নিজেদের অর্থায়নে এখন বাস্তবায়ন করতে পারি। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করেছি। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছি। এছাড়া বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বা পদ্মাসেতুর মতো বড় বড় প্রজেক্টে আমাদের বহু ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে আমাদের দক্ষ জনবল সৃষ্টি হচ্ছে এবং জ্ঞান অর্জন হচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘কোভিড আমরা নিয়ন্ত্রণ করেছি। দেশের ৭০ভাগের কাছাকাছি মানুষ এখন ভ্যাকসিন পেয়েছে। ভ্যাকসিন সবাইকেই নিতে হবে। এর আগে অনীহা থাকলেও এখন মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। স্কুল-কলেজ খুলে দিয়েছি। সব স্বাভাবিকভাবে চলবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা বদ্বীপ। এই বদ্বীপ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে যাতে রক্ষা পায়, আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, উন্নত জীবন পায়- সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা ডেল্টা প্ল্যান-১০০ প্রণয়ন করে দিয়ে গেলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ২১০০ ডেল্টা প্ল্যান’র কাঠামো তৈরি করে দিয়েছি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগুলো সংশোধন করে এর উপর ভিত্তি করে যদি পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগুতে পারি তাহলে বাংলাদেশের মানুষকে কোনোদিন কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমি এটাই বলব, আত্মবিশ্বাস হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। আত্মবিশ্বাস নিয়ে চললে যেকোনো অসাধ্য সাধন করা যায়।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম