‘বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন— জয় বাংলা নিয়ে মাঠে যাও’
৩ মার্চ ২০২২ ১৬:০৩
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগানের স্বীকৃতি পেয়েছে উচ্চ আদালতের রায়ে। এই স্লোগানটা কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকেই নেওয়া। এই ‘জয় বাংলা স্লোগানটাও কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই নিয়েছিলেন। এবং প্রথম ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তোমরা এটা মাঠে নিয়ে যাও। ‘জয় বাংলা’ ধীরে ধীরে আমাদের জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে। এটা আমাদের বিরাট অর্জন।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বিজ্ঞানী, গবেষক এবং বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’ এবং বিশেষ গবেষণা-অনুদান প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনপ প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইয়াহিয়া খান তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন হয়। সমগ্র পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। সমগ্র পাকিস্তানে একজন বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করবে- এটা পাকিস্তানের তখনকার নেতা ভুট্টো সাহেব মানতেই পারেননি। কারণ, তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে মাত্র ৭০টা সিট পেয়েছেন। আর বাকি সব সিট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পান।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুরু হয় ষড়যন্ত্র। ইয়াহিয়া খান মিলিটারি ডিকটেটর আইয়ুবের পতনের পর ক্ষমতা দখল করে। ৩ মার্চ সংসদ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। একটা বিষয় লক্ষণীয়- ডিসেম্বরে ইলেকশন হয়, জানুয়ারি মাস যায়, ফেব্রুয়ারি মাস যায় এরপর ৩ মার্চ ডাকা হয় সংসদ অধিবেশন। পূর্ব পাকিস্তানে অর্থাৎ ঢাকায় হওয়ার কথা সেই অধিবেশন। পাকিস্তান থেকে অনেক সদস্যও চলে এসেছিলেন। কিন্তু ভুট্টো সাহেবের সেখানে আপত্তি। সে ঘোষণা দিয়েছিল, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কেউ যদি পূর্ব পাকিস্তানে আসে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য তাহলে তাদের খুন করে দেবে, হাত-পা ভেঙে দেবে এবং সমগ্র পাকিস্তানে ধর্মঘট ডাকবে, দোকান-পাট বন্ধ করে দেবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ইয়াহিয়া খান তার সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে ভুট্টোর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সেই অধিবেশন বন্ধ করে দেন ১ মার্চ। ওই দিন স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলা হচ্ছিল। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। সেখান থেকে সব মানুষ রাস্তায় চলে আসে। স্কুল, কলেজ, প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত সবকিছু থেকে মানুষ রাস্তায় নেমে যায়। আর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ছাত্র নেতারাও কিন্তু রাস্তায় নেমে পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের সংসদ সদস্য, প্রাদেশিক পরিষদ এবং জাতীয় পরিষদের সদস্যদের শপথ পাঠ করান। সেইসঙ্গে তখন নিজেরা বৈঠক করেন। ইয়াহিয়া খানের ঘোষণার প্রতিবাদ করে ৭ই মার্চ তিনি ভাষণ দেবেন বলে ঘোষণা দেন। ৭ই মার্চের ভাষণ ঐতিহাসিক ভাষণ। যেখানে তিনি বলেছেন যে, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আর সেই ভাষণেই তিনি বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। যে ভাষণ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। কাজেই এই দিনটিও আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেইসঙ্গে মার্চের প্রতিটি দিন। ৭১-এর মার্চের প্রতিটি দিন ছিল বাংলাদেশের জন্য এক একটা উত্তাল তরঙ্গের মতো। তখন সকলেই মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পরিকল্পনা অনুযায়ীই আমাদের পতাকার ডিজাইন করা হয়। এই পতাকার সঙ্গে জাপানের পতাকার মিল আছে। কারণ, জাপান হচ্ছে উদিত সূর্যের দেশ। সাদার মধ্যে লাল। আর বাংলাদেশ সবুজ দেশ। সেই সবুজের মাঝে লাল। এই পতাকার চিন্তাটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭০ সালের ৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যেদিন সোহরাওয়ার্দীর সাহেবের মৃত্যুবার্ষিকীতে ভাষণ দিচ্ছিলেন- সেই সময় তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই ভূখণ্ডের নাম হবে বাংলাদেশ। আজ আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি, জাতি পেয়েছি, একটা স্বাধীন জাতিসত্ত্বা পেয়েছি। সেই অর্জনের মাসই হচ্ছে মার্চ মাস।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে চলতি বছরে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’ এবং বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে বিশেষ অনুদান প্রাপ্ত গবেষকদের হাতে সম্মাননার চেক তুলে দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম