ভিটে হারানোর বেদনার সঙ্গী অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
৫ মার্চ ২০২২ ১০:৩৩
কক্সবাজার থেকে ফিরে: উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের ৮ নম্বর ব্লকে রাস্তার পাশে ছোট্ট এক মোবাইল সারাইয়ের দোকান। কাজ করছিলেন রোহিঙ্গা জাফর উল্লাহ। আট ছেলে-মেয়েসহ ১০ জনের পরিবার। মিয়ানমারের তামবাজার তিনিছিতে বসবাস ছিল তার। মাটির হলেও বড় বাড়ি, গাছপালা, গরু-ছাগল নিয়ে ভরা সংসার— গ্রামে সবই ছিল তার। পেশায় কৃষিজীবী জাফর উল্লাহ’র জমিও ছিল। কিন্তু তার অধিকাংশই দখলদারদের হাতে চলে যাওয়ায় অন্যের জমিতে আবাদ করতেন। দিনে আয় ছিল দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ভালোই চলছিল জীবন। কিন্তু সাড়ে চার বছর আগে যখন রাখাইনে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সেই নির্যাতন শুরু হয়, তখন অন্যদের সঙ্গে জাফর উল্লাহকেও পরিবার নিয়ে চলে আসতে হয় বাংলাদেশে।
ভিটেমাটি ছেড়ে আসা সেদিনের সেই দগদগে স্মৃতি এখনো কাতর করে জাফর উল্লাহকে। জানালেন, কোনোমতে আলাদা দুই নৌকায় পার হয়ে কক্সবাজারে এসেছিলেন তারা ১০ জন। জীবন বাঁচানোর তাড়ায় কিছুই আনতে পারেননি দেশ থেকে। মিয়ানমারে থাকতে মোবাইল সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকলেও এখানে এসে জীবিকার তাড়ায় সেটিও শিখেছেন আরেকজনকে দেখে দেখে। রোহিঙ্গা শিবিরে ছেলেমেয়ে নিয়ে বেঁচে আছেন। কিন্তু মাতৃভূমির কথা মনে পড়লেই ঘিরে ধরে বেদনা। কথা বলতে বলতেই স্বগতোক্তির মতো করে বললেন, ‘ভিক্ষা করে খেলেও সেটা ছিল নিজেরই দেশ।’ আল্লাহ কেন এমন করল— সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো খুঁজে বেড়ান তিনি।
পর্যটন নগরী কক্সবাজার। দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের অধিকারী বিশ্বের অন্যতম সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র। সাগর-পাহাড়ের মেলবন্ধন এই শহরকে দিয়েছে আলাদা বিশেষত্ব। সেই কক্সবাজারের একাংশের চিত্রই এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। একদিকে উখিয়া-কুতুপালং শিবিরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, অন্যদিকে একানব্বইয়ের ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে ভিটেমাটি হারানো মানুষদের নিয়ে সাগরের তীর ঘেঁষে কুতুবদিয়াপাড়ায় গড়ে ওঠা জেলেপল্লি— বাস্তুচ্যুত মানুষের অন্যতম বড় আশ্রয়স্থলও অন্যতম সুন্দর এই পর্যটন নগরী।
কক্সবাজার শহর থেকে অপরূপা মেরিন ড্রাইভ ধরে এগিয়ে গেলে উখিয়া। সেখানকার কুতুপালং ও নয়াপাড়ার ৩৪টি শিবিরে আশ্রয় মিয়ানমার থেকে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে নজিরবিহীন নির্যাতনের শিকার হয়ে ৬ লাখ ৭১ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে। আশ্রয় নেন কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়া এলাকায়। পরিমাণে কমলেও সেই ঢল অব্যাহত ছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। এই বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর উপস্থিতিতে কক্সবাজার পরিণত হয় বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ আশ্রয় শিবিরে। মাত্র পাঁচ মাসে গড়ে ওঠা এই শিবিরে বসবাস ছয় লাখ দুই হাজার চারশ মানুষের।
বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি এই এলাকায় তৈরি করেছে ভূমিধ্বসের শঙ্কা। সংক্রামক ব্যধির প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কাও রয়েছে। একইসঙ্গে স্থানীয় অধিবাসী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
উখিয়া-কুতুপালং ঘুরে দেখা গেল, পাহাড়ের ওপরে-নিচে চারদিকে শত শত কুঁড়ে ঘর। বাঁশ, প্লাস্টিক, টিন আর মাটি দিয়ে গড়ে তোলা একেকটি ঘরে বসবাস একেকটি রোহিঙ্গা পরিবারের। কুতুপালং শিবিরের বাসিন্দা জাফর উল্লাহ যেমন আট ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাস করছেন একটিমাত্র ঘরেই।
কুতুপালংয়েই কথা হয় রোহিঙ্গা নারী ফাতেমার সঙ্গে। তিনিও মিয়ানমারের তামবাজার থেকে এসেছেন ২০১৭ সালে। চার ছেলে আর ছয় মেয়ে নিয়ে তার রোহিঙ্গা শিবিরে সংসার তার। বড় সন্তানের বয়স ৩৭ বছর, সবার ছোটটির বয়স পাঁচ বছর। চার মাস আগে তার মৌলভি স্বামী মারা গেছেন ক্যানসারে ভুগে। ফাতেমা নিজেও অসুস্থ। কিছুদিন আগেই কক্সবাজার সদরে গিয়ে অপারেশন করিয়ে এসেছেন।
ফাতেমা জানালেন, অন্য রোহিঙ্গাদের মতোই তিনিও রাতের আঁধারে কোনোরকমে ডুবে ডুবে সাঁতার কেটে নাফ নদী পার হয়ে ১০ ছেলেমেয়ে নিয়ে এসেছিলেন উখিয়া। সবার ছোট সন্তানটি তখনো কোলে। বাড়িতে সব ফেলে এক কাপড়ে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল।
কুঁড়ে ঘরে ঢুকে দেখা গেল, ফাতেমার দুই মেয়ে বসে বসে সেলাই করছে। সাদা বালিশের কভারে রঙিন সুতোয় ফুটিয়ে তোলা ফুলের ওপর ইংরেজিতে লেখা ‘HAPPY’। এর অর্থ অবশ্য জানা নেই ফাতেমার কিশোরী মেয়ের। দেখতে সুন্দর বলে সে নকশায় জুড়ে দিয়েছে লেখাটি।
রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় পেলেও সন্তানদের নিয়ে ফাতেমার দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়। মেয়েদের বিয়ে দেবেন কীভাবে, কবে দেশে ফিরতে পারবেন, আদৌ আর কোনোদিন ফিরতে পারবেন কি না— জানা নেই কিছুই। ফাতেমার মেয়েরা জানাল, মিয়ানমার থাকলে এত দিনে বিয়ে হয়ে যেত তাদের। এখানে অবশ্য সে তাড়া নেই। তবে মিয়ানমারে আরবি পড়া ছাড়া আর কিছু শেখেননি। কারণ সেখানে ঘরের কাজ আর আরবি পড়া ছাড়া আর কিছুই শেখানো হয় না মেয়েদের। বাংলাদেশে এসে ইংরেজি শেখার চেষ্টা করলেও তাতে খুব একটা ফল আসেনি।
মেয়েদের নিয়ে আবার মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান ফাতেমা। কিন্তু একইসঙ্গে সেখানকার নাগরিকত্বের মর্যাদা ও আইন অনুযায়ী সব অধিকারও চান। তার শঙ্কা— এসব অধিকার না পেলে মিয়ানমারে ফিরতে পারলেও আবার সেই সাড়ে বছর আগের মতোই হয়তো কোনো এক দিন প্রাণ হাতে নিয়ে ছুটতে হবে আশ্রয়ের জন্য। সেই অধিকার বুঝে পাওয়ার আগ পর্যন্ত ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে কোনোরকমে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাতেই জীবনটা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে তাদের।
ফাতেমার ও তার মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই এলেন ফাতেমার ছেলে আবদুল্লাহ। জানালেন, মাসে এক-দেড় লাখ টাকা আয় ছিল তাদের পরিবারের। নিজে আরবি শিখেছেন, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্তও পড়ালেখা করেছেন। পরে আর পড়ালেখা করেননি কেন— জানতে চাইলে আব্দুল্লাহর জবাব, বেশি পড়ালেখা শিখলেই মেরে ফেলা হতো। তাছাড়া পড়ালেখা করলেও আমাদের জন্য মিয়ানমারে চাকরি পাওয়ার সুযোগ ছিল না। এখানে অবশ্য আমাদের অনেকেই চাকরি পাচ্ছে।
মিয়ানমারে ২০ কানি জমি ছিল ফাতেমার পরিবারের। সব হারিয়ে কপর্দকশূন্য হয়ে এসে এই পরিবারের ঠাঁই হয়েছে কুতুপালং ক্যাম্পে। এখানে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার সুযোগের জন্য স্রষ্টার কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছেন তিনি। তবে আক্ষেপ আর অনিশ্চয়তাও রয়েছে। ফাতেমা বলেন, ‘ভালো থাকার, ভালো খাওয়া-পরার ইচ্ছা হয়। কিন্তু এখন বেঁচে থাকাটাই অনেক বড় বিষয়। দেশে আদৌ ফিরতে পারব কি না, জানি না। এই অনিশ্চয়তা কবে কাটবে, তাও আমাদের কারও জানা নেই।’
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মতো দেশছাড়া হতে না হলেও বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারানোর বেদনা নিয়ে কুতুবদিয়াপাড়ায় বসবাস করছে প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবার। এখানেই কথা হলো শামসুল আলমের সঙ্গে। তাদের বাড়ি ছিল দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায়। ১২ কানি জমি ছিল তাদের। ১৯৮৮ সালে ভিটেমাটিসহ সব জমি সাগরে বিলীন হয়ে গেলে ১০ ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি সবাইকে নিয়ে চলে আসেন কক্সবাজার সদরে। এখানে আধা কানির কিছু বেশি জমিতে ছয় ছেলের পরিবারসহ থাকছেন তারা। আরও দুই ছেলেও পরিবার নিয়ে থাকছেন পাশেই। ছোট উঠোনের চারপাশে তিনটি ঘর— ছাদপাকা ঘর একটি, আরেকটি টিনের ছাউনি দেওয়া ইটের দেয়ালের, তিন নম্বর ঘরটি মাটি-বাঁশ-টিনে তৈরি।
পাকা ছাদওয়ালা ঘরে দুই ছেলের পরিবার থাকে। এই ঘরের বাসিন্দা এক ছেলে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সাগরে ঘূর্ণিঝড় নাডার কবলে পড়ে আর ফিরে আসেননি। পাকা ঘরটিতে এখন তার প্রথম স্ত্রী থাকেন দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর ছেলেকে নিয়ে। প্রথম স্ত্রী জানালেন, বিয়ের দীর্ঘদিন পরও সন্তান না হওয়ায় স্বামীকে আবারও বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সেই ঘরে এক সন্তান জন্ম নেয়। এর চার মাস পরই সাগরে গিয়ে আর ফিরে আসেননি তার স্বামী। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তান রেখে চলে যাওয়ায় সেই সন্তানকে লালন-পালন করছেন তিনি। ছন্নছাড়া পরিবারটির এখন দিন কাটছে অন্যের দয়ায় কোনোরকমে খেয়ে-পরে।
এরকম সাড়ে চার হাজার পরিবার নিয়েই কক্সবাজার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডে গড়ে উঠেছে কুতুবদিয়াপাড়া। ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিটেমাটি হারানো মানুষগুলোই এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের আগমন ঘটে ১৯৯১ সালের ভয়াবহ সেই ঘূর্ণিঝড়ের পরে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফাতেমা বেগম জানালেন, এখানকার ৮৫ শতাংশ মানুষ পেশায় জেলে। বাকিরা দিনমজুর বা অন্য ছোটখাটো চাকরি করছেন। ভিটে হারিয়ে নিজ দেশে ঠাঁই পেলেও জীবন-জীবিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মতোই সমান শঙ্কা ঘিরে রয়েছে এই পরিবারগুলোকে।
কথা বলে জানা গেল, এখানকার মানুষের কোনো স্থায়ী আবাস নেই। অধিকাংই পেশায় জেলে। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেকে স্কুল-কলেজে গেলেও পূর্ববর্তী প্রজন্মকে সাগরের সঙ্গে যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হয়েছে। যে যতটুকু জায়গা দখল করে রেখেছেন, সেটুকুতেই তাদের ঘরবাড়ি। কিন্তু এসব জমির কোনো দলিল নেই। জমি বিক্রি করতে হলে স্ট্যাম্প করে বিক্রি করেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে কুতুবদিয়াপাড়ায় আশ্রয় নেওয়া এই জনগোষ্ঠী রয়েছে আরও একবার বাস্তুচ্যুতির আশঙ্কায়। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সম্প্রসারণের কাজ শুরু হলে রানওয়ে এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করতে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কুতুবদিয়াপাড়ার একটি অংশও এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। ফলে এই এলাকা ছাড়তে হবে আশ্রয় নেওয়াদের। এর মধ্যে অবশ্য এখানকার জলবায়ু উদ্বাস্তু ছয়শ পরিবারকে নেওয়া হয়েছে খুরুশকুল আশ্রয়ন প্রকল্পে। বাকিদের জন্যও সেখানে আবাসনের ব্যবস্থা করার কথা রয়েছে। কিন্তু এখানকার অধিবাসীরা শঙ্কা জানিয়ে বলছেন, আশ্রয়ন প্রকল্পে প্রতিটি পরিবার পাবে একটি করে ফ্ল্যাট। এখানে কুঁড়েঘরে থাকতে হলেও হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল লালন-পালন করে কোনোমতে বেঁচে আছেন। আশ্রয়ন প্রকল্পে আয়ের কোনো উৎস থাকবে না তাদের জন্য। এখানকার সব পরিবার সেখানে জায়গা পাবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে তাদের।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টারের (আইডিএমসি) তথ্য বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে দুর্যোগের ফলে বাস্তুচ্যুতির মোট ঘটনা ঘটেছে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ৩ লাখ ৪৫ হাজার। আর ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ২৭ হাজার। এছাড়াও ২০২০ সালে সংঘাত ও সহিংসতাঘটিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে ২৩০টি। এসব ঘটনার মধ্যে একই ব্যক্তির একাধিকবার বাস্তুচ্যুতিও ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বাস্তুচ্যুতির শিকার দুই এলাকা উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প ও কক্সবাজার সদরের কুতুবদিয়াপাড়ার বাসিন্দাদের সবারই এক কথা— অনিশ্চয়তাই এখন তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য। দারিদ্র্য, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব, ন্যূনতম স্বাস্থ্যসুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকা, নারী স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার বেহাল দশা, লৈঙ্গিক বৈষম্য— এসবই ভিটেমাটি হারানো মানুষগুলোর এসব আশ্রয়স্থলের চরম বাস্তবতা।
বাস্তুচ্যুতি মানুষগুলোর এই মানবেতর পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী শাহীন আনাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বেচ্ছায় নিজের ভিটা-মাটি ছেড়ে আসে না কেউই। অসহায় অবস্থায় নতুন বাসস্থানে এসে আবারও শোষণের শিকার হয় তারা। ন্যূনতম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হন। আবার শিশুরাও কাজ করতে বাধ্য হয়। লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ পায় না অনেকেই।’ রাষ্ট্রের কাছে শাহীন আনামের দাবি— বাস্তুচ্যুতির শিকার এসব মানুষদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হোক।
জানতে চাইলে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার মানুষের অধিকাংশই শহরে চলে আসে জীবিকার খোঁজে। এসব মানুষ বেশিরভাগই বস্তি এলাকায় থাকে। আমি মনে করি, এসব মানুষকে যদি দক্ষ করে বিদেশে পাঠানো যায় তাহলে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসতে পারে।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর