‘১৩ বছরে দেশকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে আ.লীগ’
৫ মার্চ ২০২২ ২১:৩৪
ঢাকা: আওয়ামী লীগ গত ১৩ বছর ধরে এ দেশকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
শনিবার (৫ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সেমিনারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
‘দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখা এবং গণতন্ত্র রক্ষায় রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ভূমিকা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি প্রফেশনাল ম্যানেজমেন্ট অব বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন আয়োজন করে।
সেমিনারে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্না বলেন, ‘গত ১৩ বছর ধরে এ দেশকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগ। আমি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে দিতে বলছি না, আওয়ামী লীগের সহযোগীদের নির্বাচনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিতে বলছি না। কিন্তু জনপ্রশাসনকে নতুন করে সাজাতে হবে। যাতে স্বচ্ছ নির্বাচন হতে পারে। তার ব্যবস্থা না করে আগামী নির্বাচন করলে আর যাই হোক মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের সামনে বিকল্প একটাই। সমস্ত পেশাজীবীরা রাস্তায় নামেন। গতকাল রেজা কিবরিয়া সাহেবদের মিটিংয়ে বাধা দিল, হামলা করা হলো। কিন্তু আমরা কেউ প্রতিবাদ করলাম না। আমি যখন ভাটারায় মিটিং করতে গেছি, আ স ম আব্দুর রব ভাই ছিলেন আরও অনেক নেতা ছিলেন, কাউকে কথা বলার জন্য কাছেই যেতে দেওয়া হলো না, মারপিট করে কতগুলো লোককে আহত করা হয়েছে। একইসঙ্গে মামলা করা হয়েছে। তখন কেউ এগিয়ে আসেনি। এখন সবাইকে একসঙ্গে নামতে হবে। এবং এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।’
মান্না বলেন, ‘আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা আছে। এরশাদের আমল থেকে যেসব ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হয়েছে তা বিজয়ের মুখ না দেখে শেষ হয়নি। এই কাজটা করার জন্য বিএনপি আগের চেয়ে স্পষ্ট করে কথা বলছে। এর জন্য তারা কীভাবে রোডম্যাপ করেছে তা আমি বলতে পারব না। আমার সঙ্গে বিএনপির একজনের কথা হয়েছে। তবে তিনি এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে কোনো কথা বলেননি।’ এ সময় তিনি বিএনপিকে হোম ওয়ার্ক বাদ দিয়ে রাস্তার ওয়ার্ক করার তাগিদ দেন।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকারের আমলেই তো দু’বছর জেল খাটলাম। মামলা আমার নামে মাত্র দু’টি। আমার কাছে পাসপোর্ট নেই। পাসপোর্ট রেখে দিয়েছে, দেওয়া হয় না। সরকার চাপ দিয়ে নির্যাতন করে আন্দোলন বন্ধ করতে চাইবে, সেই ভাবনায় পেশাজীবীদের বসে থাকলে চলবে না। কোনো সন্দেহ নেই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং ১২টি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে জাতিসংঘে চিঠি দেওয়া, তারপর জাতিসংঘের সেটা বিবেচনায় নিয়েছে বলে বলেছে। এরপরে এখন হয়তো প্রধানমন্ত্রীকে ছুটাছুটি করতে হবে। আগামীতেও করবে, তা হয়তো আমরা জানব না। জানলেও হয়তো তা বলবে না।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যে গরম দেখিয়েছেন গত ১৩ বছরে; ১৩ দিনে সেই গরম ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। শুধু অপেক্ষা করার সময় এখন। এবং এখন আমাদেরও প্রস্তুত হতে হবে। আমরা যদি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পাঁচ বছর পার করে না দিতাম, তাহলে শেখ হাসিনার সরকার দ্বিতীয় টার্মে তো আসতেই পারতো না। এখনো বলছি, সময় শেষ হয়ে যায়নি।’
পেশাজীবী নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বলেনতো, এই পার্লামেন্টে বিএনপি কী করে? কিছু করতে পারছে? পার্লামেন্টে বসে থাকলে বিএনপি কিছু করতে পারবে? আমি মনে করি, বিএনপি এখনো রাস্তার আন্দোলনের শক্তি। শরীর বড় থাকলেই যে রাজত্ব করতে পারবেন তা কিন্তু নয়। এটা বোঝা উচিত। সেটা বুঝেই, সেই রকম রোডম্যাপ করেন, সেই রকম প্ল্যান করেন। আমরা যদি সবকিছু একসঙ্গে করতে পারি, তাহলে তাদের পরাজিত করতে পারব।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বিজয় আমাদের সন্নিকটে। যদি তাড়াতাড়ি যেতে পারি। আর যদি খাবি খেতে থাকেন, ঝিমাতে থাকেন, তাহলে সেটা সুদূর পরাহত হতে পারে। এমনকি মরীচিকার মতো হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।’
আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি রেজা কিবরিয়া, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, অধ্যাপক নূরুল আমিন ব্যাপারী, বিএনপি নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, গণ অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক এ কে এম আশরাফুল হক, আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মেজবাহ প্রমুখ।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম