Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চিঠি চালাচালিতে আটকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ মার্চ ২০২২ ২২:৩৮

ফাইল ছবি

ঢাকা: কথা ছিল মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। সরকারের নিবন্ধিত সব রিক্রুটিং এজেন্সিই তিন বছর পর খুলতে যাওয়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠাতে পারবে। পুত্রজায়ায় সমঝোতা স্মারক সই করে এসে এমন কথাই জানিয়েছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।

কিন্তু বিপত্তি বাঁধালো মালয়েশিয়া সরকার। চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিল সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে তারা। আর এই সমস্য না মিটতেই সামনে এলো জনশক্তি রফতানিতে দুই দেশের মধ্যে কারিগরি সহায়তার বিষয়। সেখানেও এক মত হতে পারেনি দুই দেশ। ফলে ঘটা করে সমঝোতা সই করেও দ্রুত কর্মী পাঠানোর বিষয়টি ঝুলে যাচ্ছে। যদিও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিগগিরই প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগে ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের অন্যতম জনশক্তি রফতানির বাজার মালয়েশিয়া। জানা যায়, ওই সময়ে মাত্র ১০টি এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেওয়া হয়। ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেড, রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, আল ইসলাম ওভারসিজ, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, ক্যারিয়ার ওভারসিজ কনস্যালট্যান্টস লিমিটেড, আইএসএমটি হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস, শানজারি ইন্টারন্যাশনাল এই দশ এজেন্সি সিন্ডিকেট তৈরি করে কর্মী পাঠানো শুরু করে।

এই সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়া যেতে কয়েক বছর আগেও একেকজন কর্মীকে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে বলে জানা গেছে। অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় আর নানাধরনের দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় জনশক্তি রফতানি বেশি দূর এগোয়নি। ২০১৮ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর কেটে গেছে তিন বছরেরও বেশি সময়। নানা দেন-দরবার করে ফের শ্রমবাজারটি খোলার প্রক্রিয়ার দ্বারপ্রান্তে এসে জানা গেল, এবারও সিন্ডিকেট ছাড়া কর্মী পাঠানো যাবে না।

বিজ্ঞাপন

নতুন করে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর দেশটির রাজধানীতে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং মালয়েশিয়ার পক্ষে দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারভানান নিজ নিজ দেশের পক্ষে সই করেন। চুক্তি শেষে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, জানুয়ারি থেকেই দেশটিতে কর্মী পাঠানো যাবে। কিন্তু গত ১৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারভানান বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদেক চিঠি দেন।

সেই চিঠিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের ২৫ এজেন্সির সঙ্গে সহযোগী আরও ২৫০ এজেন্ট কর্মী পাঠাতে পারবে। মালয়েশিয়ার ওই প্রস্তাবে তখনই আপত্তি জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। চার দিন পর গত ১৮ জানুয়ারি ফিরতি চিঠিতে আপত্তি জানানোর পাশাপাশি সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাইয়ের প্রস্তাব দেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী। সেই চিঠির জবাবে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী কিছু কারণ ও ব্যাখ্যাসহ আরেকটি চিঠি দেন বাংলাদেশকে। কিন্তু মালয়েশিয়ার ওই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি বাংলাদেশ। এরপর নিজেদের কিছু প্রস্তাবনা দিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশি হাইকমিশনারের মাধ্যমে ফের আরেকটি চিঠি পাঠায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কুয়ালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে দেশটির পররাষ্ট্র ও মানবসম্পদমন্ত্রী মন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে এবারও রিক্রুটিং এজেন্সি অর্থাৎ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর যে প্রস্তাব দিয়েছিল তার জবাব দিয়ে লেখা হয়, তাদের ওই প্রস্তাব সমঝোতা স্মারকের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়া সরকারের কেন্দ্রীয় অনলাইন পদ্ধতি বা ডিজিটালাইজেশনে বাংলাদেশকে যুক্ত করার। কিন্তু এই বিষয়টিতে মালয়েশিয়ার আপত্তি রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ওই চিঠির জবাব আসেনি। তাই এসব ইস্যুর কারণে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে একরকম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে জানান, এসব ইস্যু সমাধানে দ্রুত একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক আয়োজন করতে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

এদিকে, এই পরিস্থিতির মধ্যেই ভারত, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কর্মী নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার। দেশটির বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে বনায়ন খাতে কর্মী নিতে সমঝোতা স্মারকে সই করার জন্য একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্মী নিয়োগ ইস্যুতে মালয়েশিয়ার ভারত ও ইন্দোনেশীয় কর্মীদের প্রতি আগ্রহ দেখানো অন্যরকম বার্তা দিচ্ছে। এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী সারাবাংলা বলেন, ‘এই সমস্যার সমাধান এখনই না করলে বাজারটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। কারণ, করোনা মহামারি পর কাজের ক্ষেত্র যেমন তৈরি হবে, তেমনি কর্মীদেরও চাহিদা বাড়বে। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে দ্রুত এগোতে হবে।’

এই পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে ইতোমধ্যে প্রক্রিয়া শেষ করে এনেছে মালয়েশিয়া। তবে বাংলাদেশের অংশে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া এখনো দৃশ্যমান হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। কোন প্রক্রিয়ায় কর্মী নেওয়া হবে, কত টাকা দরকার হবে- এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ চলছে। কারণ অভিবাসন ব্যয় কমানোর লক্ষ্য রয়েছে এবার।’

কবে থেকে কর্মী পাঠানো যাবে?- এমন প্রশ্নের উত্তরে বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এসব বিষয় নিয়েই কাজ চলছে। শ্রমিকদের স্বার্থ বজায় রেখেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

জনশক্তি রফতানি মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর