Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শত কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি: কাস্টমসের ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ মার্চ ২০২২ ২৩:২২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মিথ্যা ঘোষণায় সিগারেট আমদানি করে ১০৫ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা সরকারি শুল্ক ফাঁকি ও আত্মসাতের অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় পৃথকভাবে কাস্টমসের সাত জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারীসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শনিবার (৫ মার্চ) দুদকের প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-১-এর উপ পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলা তিনটি দায়ের করেন। দুদক সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক নাজমুস সাদাত মামলাগুলো রেকর্ড করেন।

বিজ্ঞাপন

দুদক কর্মকর্তা নাজমুস সাদাত সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুল্ক ফাঁকির যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলোর অনুসন্ধান হয়েছে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় কমিশনের অনুমতিক্রমে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। যেহেতু ঘটনাস্থল চট্টগ্রাম কাস্টমস, সেজন্য মামলাগুলো দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে দায়ের হয়েছে।’

দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) এবং দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ এবং ১০৯ ধারায় তিনটি মামলাতেই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানান দুদকের এই কর্মকর্তা।

তিনটি মামলার মধ্যে একটি দায়ের হয়েছে ৫৬ কোটি ৬৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৭৫ টাকা শুল্ক ফাঁকি ও আত্মসাতের অভিযোগে। ২০১৮ সালের ২৪ মে থেকে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঁচটি চালানে টায়ারের ঘোষণা দিয়ে উচ্চশুল্কের সিগারেট আনার অভিযোগে দায়ের হওয়া এ মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে সাত জন চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এরা হলেন- চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারি প্রোগ্রামার কামরুল হক, শুল্কায়ন গ্রুপ-৮/এ এর সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার জনি, সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা বর্তমানে রাজশাহীর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাটে কর্মরত মো. হাবিবুল ইসলাম, কাস্টমসের এআইআর (অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিচার্স) শাখার রাজস্ব কর্মকর্ত সুলতান আহম্মদ, এআইআর শাখার কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহম্মদ, উচ্চমান সহকারী মো. আবদুল্লাহ আল মাছুম ও অফিস সহায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার গুলশানের মের্সাস জারার এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহবুবুর রহমান, সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান মেসার্স চাকলাদার সার্ভিসের মালিক হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার, অনুপ্রবেশকারী আব্দুল গোফরান, জহুরুল ইসলাম ও আবুল কামালকে একই মামলায় আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে জহুরুল ইসলামকে হামীম গ্রুপের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় মামলাটি করা হয়েছে ২০১৮ সালের ১১ জুন থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তিনটি চালানে সেফটি পিন ও বোতামের ঘোষণা দিয়ে উচ্চশুল্কের সিগারেট আমদানি করে ৩২ কোটি ২৭ লাখ ১ হাজার ৬৪৫ টাকা শুল্ক ফাঁকি ও আত্মসাতের অভিযোগে। মামলায় আসামি করা হয়েছে আটজনকে।

এর মধ্যে আগের মামলার আসামি পাঁচ কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। এরা হলেন- কামরুল হক, সুলতান আহম্মদ, ফিরোজ আহমেদ, আবদুল্লাহ আল মাছুম ও সিরাজুল ইসলাম। এছাড়া আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার গুলশানের সিফাত ট্রেডিংয়ের মালিক মো. সালাউদ্দিন টিটো, সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান মেসার্স চাকলাদার সার্ভিসের মালিক হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার এবং অনুপ্রবেশকারী মো. আবুল কামালকে আসামি করা হয়েছে।

তৃতীয় মামলাটি হয়েছে ২০১৮ সালের ২৪ মে থেকে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে দুইটি চালানে জিপার ও চীনা টায়ার আমদানির ঘোষণা দিয়ে উচ্চশুল্কের সিগারেট এনে ১৬ কোটি ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৭৫০ শুল্ক ফাঁকি ও আত্মসাতের অভিযোগে ১১ জনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে পাঁচজন চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তা, যারা দ্বিতীয় মামলায়ও আসামি হিসেবে আছেন।

এছাড়া তিন আমদানিকারক ঢাকার মুক্তি ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের যৌথ অংশীদার মিজানুর রহমান চাকলাদার, মফিজুল ইসলাম লিটন ও আব্দুল হান্নান দেওয়ান এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স চাকলাদার সার্ভিসের মালিক হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার, অনুপ্রবেশকারী আব্দুল গোফরান ও জহুরুল ইসলাম আসামির তালিকায় আছেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেরা লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে পরস্পর যোগসাজশে বিশ্বাসভঙ্গ ও জালিয়াতির মাধ্যমে ১০টি পণ্য চালানে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি করেছেন। অবৈধভাবে সেটা খালাস করে সরকারের শুল্ক বাবদ পাওনা ১০৫ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। অভিযুক্ত কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেরা লাভবান হওয়ার উদ্দেশে শুল্ক ফাঁকি ও আত্মসাতে সহযোগিতা করেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

কাস্টমস চট্টগ্রাম মামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর