তেতুলতোলা খেলার মাঠ শিশুদের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি
৮ মার্চ ২০২২ ১৭:১৩
ঢাকা: তেতুলতোলা খেলার মাঠ শিশুদের জন্য উন্মুক্ত করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সকাল ১১টায় তেতুলতোলা মাঠরক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলয়নাতনে এই দাবি জানানো হয়।
মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সৈয়দা রত্নার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাপার যুগ্ম-সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব, গ্রিন ভয়েস সমন্বয়ক আলমগীর কবির, এলাকাবাসী ও অভিভাবক ফারহানা নাসের, মো. জামির হোসেন ও এলাকার শিশু-কিশোরদের অভিভাবকরা, সামাজিক ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতারা।
মূল প্রবন্ধে সৈয়দা রত্না বলেন, আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এই ওয়ার্ডের ধানমন্ডি মৌজায় ২০৭৩ নম্বর খতিয়ান, ৩৫৮ নম্বর দাগে একটি উন্মুক্ত স্থান রয়েছে, যা তেঁতুলতলা মাঠ নামে আমাদের কাছে পরিচিত। ১৯৭১ সালের আগে থেকে এ উন্মুক্ত স্থানটি কলাবাগানের লক্ষাধিক বাসিন্দা বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব এ উন্মুক্ত স্থানেই করে আসছি। আমাদের এ ওয়ার্ডের শিশু-কিশোররা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এ মাঠে খেলাধুলা করে আসছে। এই মাঠটিই আমাদের এলাকার ঈদের জামাত ও লাশ গোসল করানো ও জানাযার নামাজের জন্য ব্যবহার করে আসছি।
তিনি বলেন, আমাদের শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা করার বিকল্প কোনো স্থান নেই। বিগত ৩১ জানুয়ারি এই মাঠে থানাভবন নির্মাণের লক্ষ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বেষ্টনি তৈরি করে সেখানে শিশু-কিশোরসহ আমাদের প্রবেশ বন্ধ করেছে পৃলিশ। আমরা জানতে পেরেছি স্থানটি কলাবাগান থানার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি আমরা একটি গণমাধ্যমে পুলিশের এক দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারে বলতে শুনেছি জায়গাটা নাকি কলাবাগান থানা করার জন্য ২৮ কোটি টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে। এই উন্মুক্ত স্থানটি কার কাছ থেকে ক্রয় করেছে তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বক্তব্যে বলেছেন যেখানেই খোলা জায়গা সেখানেই হবে খেলার মাঠ, একদিকে সরকার খেলার মাঠগুলি যখন সংরক্ষণ ও খোলা জায়গাগুলি মাঠের জন্য ঘোষণা দিচ্ছেন ঠিক তখনি তেতুলতলার এই মাঠটি কেন শিশু-কিশোরদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নহে।
স্থপতি ইকবাল হাবিব শিশু অধিকার রক্ষা নানা আইনের উল্লেখ করে বলেন, ২০০০ সালের ৩৪ নম্বর আইনে বলা আছে খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গায় শ্রেণি পরিবর্তন করা যাইবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবেনা বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না। অথচ এই আইনের কোনোরকম তোয়াক্কা না করে উন্মুক্ত এই খেলার মাঠটিকে ভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে যা সম্পূর্ণভাবে ২০০০ সালের জলাধার ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণ আইনের বরখেলাপ। তেঁতুলতলা মাঠটিকে প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০-এর অধীনে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করে আমাদের জন্য উন্মুক্ত করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
আলমগীর কবির বলেন, এলাকাবাসীরা প্রায় তিন বছর থেকে এই মাঠটি রক্ষার জন্য আন্দোলন করে আসছে। বহুবার মাঠটিকে দখল করার নানা অশুভ উদ্যোগ আমরা দেখেছি, কিন্ত এলাকাবাসীর আন্দোলনের মুখে তা বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি শিশু-কিশোররা যেন মাঠে ঢুকতে না পারে সে কারণে কাটা তারের বেড়া দিয়ে তা রূদ্ধ করা হয়েছে। কোমলমতি শিশুরা সে মাঠে খেলতে গেলেই নানা নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে যা শিশু অধিকার আইনের পরিপন্থী।
ফারহানা নাসের বলেন, আমরা গত প্রায় দেড় মাস ধরে মাঠ থেকে এই কাটা তারের বেড়া সরানোর আন্দোলন করে আসছি। কিন্ত এখন পর্যন্ত আমরা কোনো মহলের কোন উদ্যোগ দেখছি না এই কাটা তারের বেড়া সরিয়ে মাঠটি শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে।
জামির হোসেন বলেন, আমাদের একমাত্র ভরসার জায়গা এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমরা আশা করব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই কোমলমতি শিশু-কিশোরদের আকুতি শুনবেন এবং খেলার মাঠটি উন্মুক্ত করে দিবেন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে যেসব দাবি উত্থাপন করা হয় তা হলো-
১। কাঁটাতারের বেড়া সরিয়ে, পুলিশের সাইনবোর্ড খুলে নিয়ে গিয়ে অবিলম্বে মাঠটিকে মুক্ত করতে হবে
২। পুলিশের ছাউনি এখান থেকে সরাতে হবে
৩। সরাসরি ভাবে এটিকে শিশু কিশোরদের খেলার মাঠ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সেই লক্ষ্যে পাকাপোক্ত ভাবে
কলাবাগানবাসিকে দিয়ে দিতে হবে
৪। খেলার মাঠ ও পার্কগুলো রক্ষার জন্য স্থানীয় এলাকাবাসীদের নিয়ে কার্যকর নাগরিক কমিটি গঠন করা
৫। এলাকাভিত্তিক জনসংখ্যা অনুযায়ী পার্ক ও মাঠ নিশ্চিত করা নতুন আবাসন প্রকল্প গ্রহণের সময়
সংশিষ্ট নক্শায় বসতি অনুযায়ী খেলার মাঠ ও পার্ক তৈরী করা
৬। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের বর্তমান লোকসংখ্যা অনুযায়ী খেলার মাঠ ও পার্কের বর্তমান ব্যবস্থা
পুনর্বিবেচনা করা
সারাবাংলা/এসএসএ