কলা গাছের সুতায় তৈরি পণ্য যাচ্ছে বিদেশে
৯ মার্চ ২০২২ ০৯:০৭
চুয়াডাঙ্গা: পরিত্যাক্ত কলা গাছের বাকল থেকে উৎপন্ন সুতা দিয়ে পাপশ, টেবিলম্যাট ও বাজারের ব্যাগসহ বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব পণ্য তৈরি করছেন কৃষি উদ্যোক্তা শাহিন আলী। তৈরি পণ্যগুলো শুধু দেশের বাজারে নয় বিদেশেও রফতানি করছেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার ও দামুড়হুদা উপজেলা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে পাটাচোরা গ্রাম। এ গ্রামের যুবক শাহিন আলীর ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক পরিবেশ বান্ধব পণ্য ব্যবহারের প্রতি। তার এ আগ্রহ আরও বেড়ে যায় মালোয়েশিয়া ও ভারতের কোলকাতায় অবস্থানের সময়। সেখান থেকে ফিরে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে গ্রামের ক্ষেত থেকে কলা পেড়ে নেওয়ার পর পরিত্যাক্ত গাছের বাকল সংগ্রহ করেন তিনি। পরে সেই বাকলগুলো মেশিনে দিয়ে বের করেন সুতা। এরপর তা পানিতে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করেন তিনি। সুতা তৈরি শেষে কলা গাছের বর্জ্য থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সারও তৈরি করেন তিনি। এ কাজের সঙ্গে যুক্ত করেছেন ওই গ্রামের ছাত্রী, বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা, প্রতিবন্ধীসহ শতাধিক নারীকে। এমনকি তাদের দক্ষ করে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে দামুড়হুদা উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতর।
উপজেলার পাটাচোরা গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা হিরা মনি, দেওলী গ্রামের গৃহবধূ রত্না ও রুনা এবং কলেজ ছাত্রী পাপিয়া বাড়ির উঠানে বসে রকমারি পণ্য তৈরি করতে করতে জানান, উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিত্যাক্ত কলা গাছের সুতা দিয়ে বিভিন্ন রকম পণ্য তৈরি করছেন তারা। এ পণ্যগুলো তৈরি করে অর্থ উপার্জন করছেন। এর ফলে তারা আজ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে।
কৃষি উদ্যোক্তা শাহিন আলী বলেন, কলা গাছের সুতা থেকে বেনুনি করে পাপোশ, টেবিলম্যাট, বাজারের ব্যাগ, ওয়ালম্যাট, ভ্যানিটিব্যাগ, শোপিস, ট্রে, পুরুষ-মহিলাদের অলংকারসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছেন। এছাড়া পরিত্যাক্ত কলা গাছ থেকে সুতা এবং এর বর্জ্য থেকে ভার্মি কম্পোাস্ট সার, জৈব সার তৈরি করে হচ্ছে।
সরকারের সহায়তা দাবি করে তিনি বলেন, ‘সহায়তা পেলে তার কর্মক্ষেত্রে আরও বেকার জনবল নিয়োগ করা সম্ভব হবে। ওই বেকার জনগোষ্ঠী আর্থিভাবে স্বচ্ছল অর্জন করবে।’
দামুড়হুদা উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতরের প্রশিক্ষক নাসরিন খাতুন জানান, গ্রামের অসহায় দরিদ্র নারী এবং ছাত্রীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য এদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে। প্রশিক্ষিত হয়ে এরা পরিত্যাক্ত কলা গাছ থেকে তৈরি সুতা ব্যবহার করে অত্যন্ত সুন্দর করে নানা রকমের ব্যবহৃত পণ্য বানাচ্ছে। এই পণ্যগুলো মান সম্মত করে প্রস্তুত করার জন্যই যুব উন্নয়ন এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, যুব মহিলাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছে যুব উন্নয়ন অধিদফতর। সেই ফলশ্রুতিতেই এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এ প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পাটাচোরা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা শাহিন আলীকে সহায়তা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কারণ তিনি সফল হলে গ্রামীণ জনপদের আর্থ মানবতার উন্নয়ন সম্ভব হবে। কাজ করে অনেক বেকার নারীরা নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ‘পরিত্যাক্ত কলা গাছ থেকে সুতা থেকে তৈরি করছেন শাহিন। আর এই সুতা থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছে স্থানীয় নারীরা। ওই সকল নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেই পণ্য দেশের বাজারে বিক্রির পাশাপাশি স্পেন, ফ্রান্স, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে রফতানির চেষ্টা করা হচ্ছে। কুরিয়ারের মাধ্যমে এ গুলো পাঠানো হচ্ছে। এসব দেশে পণ্যের চাহিদা দেখা দিলে আরও পাঠানো হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার বিশেষ প্রয়োজন।’
সারাবাংলা/এনএস