Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩ বছরে ৬৫ প্রাণহানি: চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পাহাড়ে

মো. ইসহাক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৯ মার্চ ২০২২ ১০:৩০

বান্দরবান: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বান্দরবানে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে হানাহানি ও রক্তপাতের ঘটনা ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। এসব সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অপহরণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু এবার তারা রক্তের খেলায় মেতে উঠেছে। পরস্পর দ্বন্দ্বে একের পর খুন হচ্ছে এসব গ্রুপের সদস্যরা। এতে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যে।

পুলিশের হিসেবের খাতা বলছে, এসব সন্ত্রাসী গ্রুপে আক্রোশ ও দ্বন্দ্বে গত তিন বছরে এই জেলায় ঝরেছে ৬৫টি প্রাণ। এর মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণও। সবশেষ শনিবার (৫ মার্চ) রোয়াংছড়ি-রুমা সীমান্তের ফালংক্ষ্যং পাড়ার সাঙ্গু নদীর চরে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও মগ ন্যাশনাল লিবারেশন পার্টির (এমএনএলপি) মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন চার জন। তারা সবাই এমএনএলপির সদস্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার বেলা ১২টায় রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা নোয়াপাড়া থেকে মগ ন্যাশনাল লিবারেশন পার্টির অস্ত্রধারী সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সশস্ত্র শাখার অন্যতম রোয়াংছড়ি এরিয়া কমান্ডার উনুমং মারমাকে গুলি করার পর তাকে বস্তাবন্দি করে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়।
ওই ঘটনার পর এমএনএলপির সদস্যরা দুপুরের ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে রুমায় যাওয়ার পথে রোয়াংছড়ি-রুমা সীমান্তের ফালংক্ষ্যং পাড়ার সাঙ্গু নদীর চরে পৌঁছালে পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের ওপর থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে জেএসএস সদস্যরা। এমএনএলপির সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে শুরু হয় বন্দুকযুদ্ধ। ঘণ্টাব্যাপী এই যুদ্ধ চলে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

বিজ্ঞাপন

তারা আরও জানান, সন্ধ্যা থেকে গুঞ্জন শুরু হয় রোয়াংছড়ি-রুমা সীমান্তের ফালংক্ষ্যং পাড়া সংলগ্ন সাঙ্গু নদীর চরে চার ব্যক্তির লাশ পড়ে আছে। ঘটনাস্থল দুর্গম এলাকা হওয়ায় রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাশ উদ্ধারের কার্যক্রম চালাতে পারেনি। রোববার (৬ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে চার জনের লাশ উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলাটি দুর্গম ও রাঙ্গামাটির রাজস্থলী সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ায় এমনিতেই সন্ত্রাসপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত। চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসী তৎপরতা এসব এলাকার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। পুরো উপজেলাটিতে জেএসএস সন্তু লারমা গ্রুপের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও গত কয়েকবছর ধরে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে আরও কয়েকটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে ঘাঁটি গেড়ে বসে নতুন মগ লিবারেশন পার্টি নামে একটি সশস্ত্র গ্রুপ। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জেএসএস, মগ লিবারেশন পার্টি ও জেএসএস সংস্কার এমএন লারমা গ্রুপের মধ্যে ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের জেরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ কমপক্ষে ৬৫ জন নিহত হন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সম্পাদক লক্ষীপদ দাশ বলেন, জেলার শান্তি সম্প্রতি বিনষ্ট এবং সরকারে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত করতে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি অপহরণ, গুম ও চাঁদাবাজিসহ নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে জেএসএস সশস্ত্র গ্রুপ।

বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, জেএসএসের সশস্ত্র সদস্যরা টার্গেট করে করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম ও অপহরণ করছে। এছাড়াও তারা আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায়ের নেতাদের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। এরই মধ্যে বিষয়টি আমরা জানতে পেরে পুলিশ ও সেনা বাহিনীকে অবহিত করেছি।

জানতে চাইলে বান্দরবান পুলিশ সুপার জেরিন আক্তার বলেন, প্রতিটি হত্যার ঘটনায় পুলিশ মামলা নিয়েছে এবং কারা এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও দুর্গম এলাকায় বসবাসরতদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এলাকাগুলোতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা পুলিশ।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, বান্দরবান জেলায় কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠনের তৎপরতা অব্যাহত আছে। আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে একদল অন্যদলের ওপর চড়াও হচ্ছে। তাই প্রায় সময় এই হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

সারাবাংলা/এএম

চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) পার্বত্য চট্টগ্রাম

বিজ্ঞাপন

নতুন বার্সেলোনায় মুগ্ধ মেসি
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৫

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর