ঢাকা: ‘আমার পড়ালেখার খরচ কে চালাবে ভাই, ও ভাই, আমার ভাইরে। আমারে বিসিএস কে দেওয়াবে ভাই। আমার স্বপ্নগুলো আর কে পূরণ করবে ভাই? আমার সাথে ভাই আর কথা বলবে না। আমি মরে যাব। আমার ভাইরে আইনা দেন কেউ।’
বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালের সামনে এভাবেই আহাজারি করছিলেন ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজে হামলায় নিহত ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে বিমানবন্দরের ভিআইপি গেইটের সামনে সিআইপি প্রবেশের গেইটে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন প্রিন্স। এরপর বলে ওঠেন, ‘আমার ভাই কই।’ কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রিন্স মাটিতে গড়াগড়ি শুরু করেন। সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান প্রিন্স।
এ সময় প্রিন্স বার বার বলছিলেন, ‘আমার ভাইয়ের লাশটা কই। আমি দেখব। লাশ না এলে এ জীবনের আর কি দাম। নিজেই মরে যাব। ভাই আমার বিয়ে করেনি। বাড়ি করিনি এখনো। আমরা ভাই-বোনরা মিলে ভাইকে কতো ভালোবাসতাম। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল। আমাদের এখন কে দেখবে ভাই। কেউ তো আর রইল না। আমি বিসিএস ক্যামনে দেব। আমার পড়ালেখার টাকা কে দেবে ভাই। তুমি তো চলেই গেলে।’
প্রিন্স আহাজারি করে বলছিলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মেসেজে কথা হতো। আমারে বলতো, এবার দেশে এলেই বিয়ে করবে। আমি অনার্সে পড়ি। ভাই আমারে বলতো, ভালো করে পড়তো। আমাকে বলতো, যত টাকা লাগে ভাই দেবে। এখন আমাকে কে টাকা দিবে। আমার ভাইরে কেউ দেন। ও ভাই তুমি কেন চলে গেলে। আমার আব্বা না খেয়ে ভাইরে টাকা দিতো পড়ালেখার জন্য। ভাইয়ের জন্য আব্বা জমি বিক্রি করেছিল। এখন তো সবকিছু শেষ হয়ে গেল।’
উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রাশিয়ার হামলার শিকার হয় জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’। ওই হামলায় মারা যান থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর। কিন্তু ওই হামলায় বেঁচে যাওয়া জাহাজে থাকা ২৮ নাবিক বুধবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে দেশে আসেন। হাদিসুরের পরিবারও ভেবেছিল, হয়তো ছেলের মরদেহ আসবে। কিন্তু এদিন হাদিসুরের মরদেহ আসেনি। মৃতদেহটি আসতে আরও সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে বলে জানা গেছে।