Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পোশাক খাতে যুদ্ধের প্রভাব, স্থগিত হচ্ছে ক্রয়াদেশ

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৯ মার্চ ২০২২ ২৩:০০

ফাইল ছবি

ঢাকা: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে দেশের পোশাক খাতে এরই মধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। নতুন করে এই দুই দেশ থেকে ক্রয়াদেশ (অর্ডার) নেওয়া যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, রাশিয়ায় রফতানির জন্য দেশের একটি কারখানাতে চলমান কাজও (ক্রয়াদেশ) স্থগিত করেছে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম। আর পোশাক খাতের বেশ কয়েকটি ব্রান্ড রাশিয়াতে তাদের আউটলেটও বন্ধ করে দিয়েছে। সবমিলিয়ে দেশের পোশাক রফতানিতে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিজ্ঞাপন

ধারণা করা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে রাশিয়ায় যে ১ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা অর্জন কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে দেশের নিটওয়্যার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে দেশের পোশাক রফতানিতে তেমন প্রভাব পড়ত না। কিন্তু রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সুইফটের লেনদেন স্থগিত হওয়ায় প্রভাব কিছু পড়বে। এখন রাশিয়ায় যে পোশাক রফতানি করব সেই অর্থপ্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রাশিয়ায় দুইভাবে পোশাক রফতানি হয়ে থাকে— সরাসরি রাশিয়ার ক্রেতারা পণ্য কেনন এবং অন্য দেশ (সাব -কান্ট্রি) বা ব্র্যান্ডের মাধ্যমে (এইচএমএম) তারা কিনে থাকে। সাব-কান্ট্রি হয়ে যেসব পোশাক রফতানি হয়, সেসব পোশাকের অর্থপ্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা নেই। তবে রাশিয়ায় সরাসরি যে পোশাক রফতানি হতো, সেই অর্থপ্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।’

পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘নতুন করে রাশিয়া থেকে কোনো অর্ডার আমরা নিতে পারছি না। নতুন করে সেখানে কাজ নেওয়াও বুদ্ধিমানের পরিচয় হবে না। কারণ পেমেন্ট সিস্টেম নিয়ে ঝামেলা রয়েছে। আর আন্তর্জাতিক অনেক ব্র্যান্ড এখন রাশিয়া তাদের আউটলেট বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে তারা পণ্য বিক্রি করছে না।’

তিনি বলেন, ‘রাশিয়ায় গত বছর ৮০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। এ বছর এক বিলিয়ন ডলার পণ্য রফতানির লক্ষ্য ছিল। এটি অনেক বড় একটি অঙ্ক। যুদ্ধের প্রভাব এই রফতানিতে কিছুটা হলেও পড়বে। যেহেতু নতুন করে অর্ডার নিতে পারছি না। তাই বলাই যায়, যুদ্ধের প্রভাব কিছুটা হলেও পড়েছে।’

বিজ্ঞাপন

মন্তব্য জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাবিশ্বের অর্থনীতিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়ছে। পোশাক খাতের অনেকেই সরাসরি রাশিয়ায় পণ্য বিক্রি করে থাকে। অনেক ব্র্যান্ডের ক্রেতাই দেশটিতে (রাশিয়া) আছে। এই যুদ্ধ যদি দীর্ঘমেয়াদি হলে এর বিরূপ প্রভাব সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশে আরও বেশি হারে পড়বে।’

তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এতে উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যাবে। ছোট ছোট দেশ যারা বিশেষত উন্নত দেশগুলোতে রফতানি করে, আমাদের মতো সেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশেনের (বিজিবিএ) সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেন নতুন করে কোনো ক্রয়াদেশ দিচ্ছে না। পুরোনো আদেশই এখন তারা স্থগিত করছে। আমরা বায়িং হাউজগুলোকে আগামী সপ্তাহে চিঠি দিয়ে জানতে চাইব এখন পর্যন্ত কার কী পরিমাণ অর্ডার স্থগিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরে রাশিয়ায় ৪৮০ মিলিয়ন ডলার ও ইউক্রেনে ১১১ মিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি হয়েছিল। দুই দেশ মিলিয়ে রফতানি হয়েছে প্রায় ৫৯১ মিলিয়ন ডলার। দেশ দু’টিতে রফতানি ২০ শতাংশের মতো করে প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, যেসব ক্রয়াদেশ ছিল তার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ স্থগিত হয়েছে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাজ করছিলাম। কাজ করা অবস্থায় ক্রয়াদেশ স্থগিত হচ্ছে। পেমেন্ট সিস্টেম, পরিবহন ব্যবস্থা (শিপমেন্ট) ও কুরিয়ার ব্যবস্থা রাশিয়ার সঙ্গে না থাকায় দেশের পোশাক রফতানিতে এর প্রভাব পড়েছে।’

তথ্যমতে, রাশিয়ায় নিজেদের পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বখ্যাত পোশাকের খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম। রাশিয়ার রফতানির জন্য দেশের কয়েকটি পোশাক কারখানায় কাজ চলছিল— এমন ক্রয়াদেশও স্থগিত করেছেন এই ব্র্যান্ড। এর ফলে রাশিয়ার পোশাক রফতানি করে এমন কারখানাগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে রাশিয়ায় রফতানি হয়েছে ৫৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, দেশীয় মুদ্রায় যা ৫ হাজার ৭৪ কোটি টাকার সমান। অন্যদিকে ইউক্রেনে রফতানি হয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ ডলারের বা ১০০ কোটি টাকার তৈরি পোশাক। চলতি অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্য আরও বেশি ধরা হয়েছিল। চলমান যুদ্ধের কারণে এই লক্ষ্য অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পোশাক মালিকরা।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম সারাবাংলাকে বলেন, রাশিয়ার বাজারে আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে থাকি। যদি যুদ্ধ প্রলম্বিত হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনে, দেখা যাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে পারে, জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সবমিলিয়ে শঙ্কার অবশ্যই কারণ আছে। আমাদের দেশ থেকে শিপমেন্ট অন্যান্য দেশে যেতে বাধাগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে পোশাকের বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে যাবে। এর ফলে আমাদের দেশের পোশাক কারখানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যুদ্ধ অবশ্যই কাম্য না, যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না। আমরা আশা করি এই যুদ্ধ ক্ষণস্থায়ী হবে। আমরা আশা করি যুদ্ধ থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন দ্রুতই বেরিয়ে আসতে পারবে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

ইপিবি পোশাক খাত বিকেএমইএ বিজিএমইএ যুদ্ধের প্রভাব রাশিয়া-ইউক্রেন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর