কুয়াকাটায় জেলিফিশের ‘অস্বাভাবিক’ উপস্থিতির কারণ খোঁজার তাগিদ
৯ মার্চ ২০২২ ২৩:২৯
ঢাকা: পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গত বছর উদ্বেগজনকহারে ডলফিনের মৃতদেহ ভেসে এসেছিল। এবার সেখানে প্রতিদিন ভেসে আসছে হাজারও জেলিফিশ। জেলিফিশের সৈকতে ভেসে আসার ঘটনা অস্বাভাবিক না হলেও এখন যে হারে আসছে, সেটি অবশ্যই উদ্বেগজনক। এর পেছনে সমুদ্রের আভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা রয়েছে কি না, তা অনুসন্ধানে বৈজ্ঞানিক গবেষণার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় কুয়াকাটা পৌরসভার হলরুমে সমুদ্র বিষয়ক পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ আওয়ার সি আয়োজিত সমুদ্র সুরক্ষা ও সুনীল অর্থনীতি শীর্ষক কোস্টাল সিম্পোজিয়ামে বক্তারা এ আহ্বান জানান।
কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, জেলিফিশের মৃত্যু অস্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছেছে। এই সৈকতে মৃত জেলিফিশ আগেও এসেছে। কিন্তু এবার যে পরিমাণে আসছে, একে কোনোভাবে স্বাভাবিক বলা যায় না। অবশ্যই এ নিয়ে সরকারের বিজ্ঞানীদের দিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন।
ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্য কে এম বাচ্চু বলেন, এই সৈকতে গত বছরে আমরা দেখেছি একে একে ২২টি ডলফিনের মৃতদেহ উঠে এসেছিল। সেগুলোর অধিকাংশ জেলেদের জালে আটকে মারা গেছে বলে প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন হঠাৎ করে প্রতিদিন হাজার হাজার জেলিফিশের মরদেহ আসতে শুরু করেছে। আগেও আসত, কিন্তু এখন যে হারে আসছে তাকে স্বাভাবিক বলার কোনো সুযোগ নেই। দ্রুত এই ঘটনার কারণ খুঁজতে সরকারকে তৎপর হতে হবে।
সেভ আওয়ার সি’র রিসার্চ ফেলো ও প্রাণপ্রকৃতি সাংবাদিক কেফায়েত শাকিলের সঞ্চালনায় সংগঠনের মহাসচিব মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক সভাপতিত্ব করেন সিম্পোজিয়ামে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। আরও বক্তব্য রাখেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের পরিদর্শক বদরুল কবীর, মহিপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন, কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব, পর্যটন ও পরিবেশকর্মী কে এম বাচ্চু, দৈনিক কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার শাহাদাৎ স্বপনসহ অন্যরা।
আলোচনায় প্রধান অতিথিসহ বক্তারা বলেন, কুয়াকাটা দেশের অন্যতম সুন্দর পর্যটন নগরী। এখানে হাজার হাজার পর্যটক আসেন। কিন্তু এখানকার পরিবেশ-প্রতিবেশ নিয়ে সচেতনামূলক কার্যক্রমের পরিমাণ কম। সম্প্রতি হাজার হাজার জেলিফিশের উপস্থিতির উদাহরণ টেনে তারা বলেন, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এসব জেলিফিশ আসতে সৈকতে। তারা মারা গিয়ে সৈকতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
সমুদ্র সচেতনতায় সেভ আওয়ার সি’র কার্যক্রমের প্রসংশা করে ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের পরিদর্শক বদরুল কবীর বলেন, পর্যটন ও জেলেসহ সমুদ্র সম্পৃক্তদের সচেতন করতে এই আয়োজন অনেক বেশি প্রয়োজন। জনগণ প্রাণ-প্রকৃতির বিষয়ে সচেতন থাকলে পুলিশ লাগে না। আর তারা না জানলে পিটিয়েও খুব একটা কাজ হয় না।
সভাপতির বক্তব্যে মু. আনোয়ারুল হক বলেন, কুয়াকাটার সৈকতের জীববৈচিত্র্য রক্ষা না করলে এখানকার পর্যটন ও মৎস্য সম্পদ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সৈকতের লাল কাঁকড়ার কারণে এখানে আসতে উৎসাহিত হন পর্যটকরা। এরা মারা গেলে পর্যটক এসে কী দেখবেন?
তিনি বলেন, এই সৈকতে সম্প্রতি একের পর এক জেলিফিশ মরে আসছে। আমরা জানি, মাঝে মাঝে জেলিফিশ ডাঙায় এসে আটকা পড়ে মারা যায়। কিন্তু এত বেশিসংখ্যক হারে মৃত্যু আগে দেখিনি। তাছাড়া আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, সৈকতে আসার আগেই এগুলো মরে আসছে। কয়েকদিন ধরেই আমরা দাবি করছি, এই মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করা হোক। ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স থাকলে মরলেও এরা সৈকতে আসত না। সৈকতে এত সংখ্যায় আসা বলে দিচ্ছে, এখানে প্রতিবেশ ভেঙে পড়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র বলেন, কুয়াকাটায় আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন সড়কব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে ট্যুরিস্ট আরও বেশি আসবে। এসব মাথায় রেখেই আমরা শহরের উন্নয়ন করছি। আমরা চাচ্ছি এখানে টেকসই পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। কিন্তু দুঃখজন বিষয় হলো, বিচের কোনো নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই। আমি চাইলেও ওখানকার কিছু পরিবর্তন করতে পারব না।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে হাইপ্রোফাইল ট্যুরিস্ট আসেন না বিমানবন্দর না থাকায়। এ কারণে এখনো কুয়াকাটা সেভাবে সেজে উঠেনি। আমি অনুরোধ করব এবং আহ্বান জানাব, অতিদ্রুত এখানে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হোক। তাহলে কুয়াকাটার পর্যটন ঘুরে দাঁড়াবে।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর