Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘প্রাথমিকভাবে শিশুদের কিডনি রোগ শনাক্ত করা গেলে প্রতিকার সম্ভব’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১০ মার্চ ২০২২ ০০:২১

ঢাকা: বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ২০২১ সালে এক হাজার ৪৫৯টি শিশু কিডনি রোগ নিয়ে ভর্তি হয়। এর মধ্যে দুই শতাংশ শিশু মারা গেছে। এছাড়াও ৯ শতাংশ শিশুর কিডনি তুলনামূলক কম কাজ করে। তবে বাকিরা নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে। এ তথ্যের বরাত দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে শিশুদের কিডনি রোগ শনাক্ত করা গেলে প্রতিকার সম্ভব।

বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে শিশু হাসপাতালের সভাকক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানান। বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বিশ্ব কিডনি দিবস সামনে রেখে এ আয়োজন করা হয়। পরে আলোচন সভা শেষে কিডনি রোগে আক্রান্ত শিশুদের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, প্রাথমিকভাবে শিশুর কিডনি রোগ শনাক্ত করা গেলে তার প্রতিকার সম্ভব। কিডনিতে কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে আসবেন। শিশু হাসপাতালে বর্তমানে বিষয়ভিত্তিক বিভাগ থাকলেও সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। দ্রুত সময়ে তা কার্যকর করা হবে। এখান থেকে শিশুদের কিডনি ট্রান্সফার কার্যক্রমও চালু করা হবে।

তিনি বলেন, শিশুদের কিডনি জটিলতা দেখা দিলে তাদের মধ্যে কেউ কেউ মারা যায়, আবার কেউ কেউ রোগ নিয়ে বেঁচে থাকে। এবারের বিশ্ব কিডনি দিবসের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোই আমাদের মূল লক্ষ্য। সে জন্য এবারের বিশ্ব কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘কিডনি সুরক্ষায় প্রয়োজন জ্ঞানের সেতুবন্ধন’ নির্ধারণ করা হয়েছে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি শিশু হাসপাতালে কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের পরিসংখ্যানটি তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে শিশু হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শিরীন আফরোজ বলেন, শিশুদের কিডনির জটিল সমস্যা হলে নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সুস্থ থাকা সম্ভব। এতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। সচেতনতার ফলে শিশু ভালো থাকবে। এতে চিকিৎসা ব্যয় কমে যাবে।

তিনি বলেন, সচেতন না হলে কিডনি রোগের চিকিৎসায় শিশুর জন্য বছরে সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা ব্যয় হবে। আর কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। সবার পক্ষে এ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব নয়। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে।

সভায় কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হানিফ বলেন, দেশে প্রতি বছর ১৫ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। একটি সময় পর্যন্ত তাদের কিডনি, লিভারসহ অন্যান্য অর্গান ভালো থাকে। সেগুলো দান করা হলে দুঃস্থ রোগীদের জন্য কিডনি পাওয়া সহজ হবে।

তিনি বলেন, মায়েরা প্রসবের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে। তখন শিশুর কিডনি পরীক্ষা করা দরকার। শিশুর জন্মের আগে সেটি চিহ্নিত করা সম্ভব হলে দ্রুত তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. সমীর কুমার সাহা বলেন, দেশে কিডনি রোগের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। এটি কমাতে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট-ট্রাক্স কমাতে হবে।

আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিডনি অনাবশ্যক দ্রব্য বা পদার্থ মূত্র হিসেবে শরীর থেকে বের করে রক্তের পরিশোধন করে এবং শরীরে ক্ষার এবং অম্লের ভারসাম্য বজায় রাখে। এভাবে কিডনি শরীরকে স্বচ্ছ এবং সুস্থ রাখে। এছাড়া রক্ত তৈরি করা, হাড় শক্তিশালী করার মতো আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে আমাদের কিডনি। তাই শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে কিডনি সম্পর্কে সচেতনতা খুব জরুরি।

আলোচকরা কিডনি রোগের উপসর্গগুলো তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে— প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া, ঘনঘন প্রস্রাব, প্রস্রাব লাল হওয়া, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, কোমরের দুই পাশে ও তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা, শরীর ও মুখে ফোলা ভাব ইত্যাদি। তারা বলেন, তিন মাসের চিকিৎসায় কিডনি রোগ ভালো না হলে এটিকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হিসেবে ধরা হয়। শরীরে এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. রঞ্জিত রঞ্জন রায়, অধ্যাপক ডা. নওশাদ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. আফরোজা বেগম এবং শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

কিডনি দিবস কিডনি রোগ সচেতনতা শিশু হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কোস্ট গার্ডের নতুন ডিজি জিয়াউল হক
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩২

সম্পর্কিত খবর