Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চুরি করেই বদল মোটরসাইকেলের সব নম্বর, সিন্ডিকেট হোতাসহ গ্রেফতার ৩

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১০ মার্চ ২০২২ ১৯:৪১

মোটরসাইকেল চোর চক্রের হোতা লিটন দেওয়ানসহ গ্রেফতার ৩, ইনসেটে জব্দ করা ৩ মোটরসাইকেল

ঢাকা: লিটন দেওয়ান। মোটরসাইকেল চুরির সিন্ডিকেটের মূল হোতা। তার সিন্ডিকেটের সদস্য প্রায় একশ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন রাজধানীজুড়ে। এই চক্রটির সদস্যরা কোনো মোটরসাইকেল চুরি করার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ির নম্বর, নম্বর প্লেট ও বডিতে লেখা সব নম্বর মুছে ফেলেন। এরপর অবৈধ উপায়ে পাঞ্চ করে দেন নতুন নম্বর। এর মাধ্যমে গাড়ির পরিচয়ই বদলে দেন তারা।

মোটরসাইকেল হারানো কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়েই লিটন দেওয়ানের এই মোটরসাইকেল চোর চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দুপুরের দিকে মিরপুর শাহ আলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে লিটন দেওয়ানসহ চক্রের তিন সদস্যকে। শাহ আলী থানার পুলিশ কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

শাহ আলী থানা পুলিশ জানিয়েছে, চোরাই মোটরসাইকেল কিনে প্রতারিত এবং কারাবরণ করা কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ নিয়ে আসেন শাহ আলী থানায়। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেন এসআই রাকিব খান। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে চোরাই মোটরসাইকেল কিনে প্রতারিত এক ভুক্তভোগীকে দিয়ে লিটন দেওয়ানকে ফোন করান।

পুলিশ বলছে, চোরাই মোটরসাইকেল ফেরত নিয়ে তার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দেন ওই ভুক্তভোগী। পরে দুপুরে লিটন দেওয়ান তাকে শাহ আলী থানার অদূরে একটি বাসার ঠিকানা এসএমএস করেন। বলেন, সেখানে মোটরসাইকেল দিয়ে টাকা ফেরত নিয়ে যেতে হবে। এসময় সঙ্গে কাউকে নিয়ে যেতে নিষেধ করেন লিটন।

এই তথ্যের ভিত্তিতে শাহ আলী থানা পুলিশ সাদা পোশাকে লিটন দেওয়ানের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী সেই বাড়ির আশপাশে অবস্থান নেয়। প্রতারিত ব্যক্তি মোটরসাইকেল গেটের কাছে রেখে বাসার ভেতরে যান। এরপরই পুলিশ বাড়িটি ঘিরে ফেলে অভিযান শুরু করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখান থেকে কয়েকজন পালিয়ে যান। তবে এই চোর সিন্ডিকেটের প্রধান লিটন দেওয়ান পালাতে পারেননি। তার দেহরক্ষী হিসেবে সঙ্গে থাকা মিঠুন ও মানিককেও এসময় গ্রেফতার করে পুলিশ।

শাহ আলী থানা পুলিশ বলছে, অভিযানে লিটনের সহযোগীরা এসআই রাকিব খানের ওপর হামলা চালালে তিনি সামান্য আহত হন। খবর পেয়ে শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান গিয়ে রাকিব খানকে উদ্ধার করেন এবং আসামিদের থানায় আনতে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠান ঘটনাস্থলে। এসময় পুলিশ লিটনের দখলে থাকা তিনটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করে।

শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, মোটরসাইকেল চুরির এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা খুবই ভয়ংকর। একটি মোটরসাইকেল চুরি করার পর তারা নিমিষেই তার নম্বর অপসারণ করে ফেলে। এরপর অবৈধভাবে নতুন নম্বর পাঞ্চ করে মোটরসাইকেলের বডিতে। সেই নম্বর দিয়ে নতুন নম্বর প্লেট তৈরি করে বসিয়ে দেওয়া হয় মোটরসাইকেলে। বদলে দেওয়া হয় মোটরসাইকেলের প্রকৃত পরিচয়।

ওসি বলেন, চুরি বা ছিনতাইয়ের পর নতুন নম্বর প্লেট বসিয়ে বিক্রির সঙ্গে যুক্ত রাজধানীর একটি বড় সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের প্রধানের নাম লিটন দেওয়ান। রাজধানীজুড়ে শতাধিক সদস্য রয়েছেন এই সিন্ডিকেটে। এদের ধরতে ডিএমপির বিভিন্ন থানা-পুলিশ বেশ সজাগ থাকলেও এরা অনেক ধূর্ত। একই এলাকায় এক দিনের বেশি সময় থাকত না। স্থান পরিবর্তন করতো ঘণ্টায় ঘণ্টায়।

ওসি আসাদুজ্জামান আরও বলেন, গ্রেফতার তিন জনকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে। অনেক ভুক্তভোগী থানায় এসে অভিযোগ করেছেন। আরও কতগুলো মোটরসাইকেল তাদের জিম্মায় আছে, তা উদ্ধার করা হবে। কীভাবে কোন কোন এলাকায় মোটরসাইকেলগুলো চুরি করেছে এবং আর কোথায় কোথায় বিক্রি করেছে, এগুলো জানতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

জানতে চাইলে মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে নিশ্চিত হই, মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান আমারই এলাকায় অবস্থান করছে। এরপরই শাহ আলী থানার ওসিকে অবহিত করে সিন্ডিকেট প্রধানসহ সহযোগীদের পাকড়াওয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই অভিযানের সিদ্ধান্ত হয় এবং সিন্ডিকেটের প্রধান লিটন দেওয়ানকে তার দুই সহযোগীসহ গ্রেফতার করা হয়।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

টপ নিউজ মোটরসাইকেল চোর চক্র মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেট লিটন দেওয়ান


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর