Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলা একাডেমির উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ‘চৌর্যবৃত্তির’ অভিযোগ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ মার্চ ২০২২ ২০:৩৫

ঢাকা: ‘চৌর্যবৃত্তির’ অভিযোগে বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. তপন বাগচী সম্পাদিত ‘মাতাল রাজ্জাক: গীতিমালা’ গ্রন্থটি অমর একুশে বইমেলায় প্রবেশ, প্রদর্শন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

বাংলা একাডেমির পরিচালক (বিক্রয়, বিপণন ও পুনর্মুদ্রণ বিভাগ) এবং অমর একুশে গ্রন্থমেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, “লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ড. তপন বাগচী সম্পাদিত ‘মাতাল রাজ্জাক: গীতিমালা’ বইটি মেলায় প্রবেশ, প্রদর্শন, ও বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে।”

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, মাতাল রাজ্জাক নামে খ্যাত কবি আব্দুর রাজ্জাক দেওয়ানের সহধর্মিণী নাসিমা দেওয়ান গোধূলীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে দু’টি গ্রন্থ প্রকাশ করে ‘মরমী সাধক মাতাল কবি আব্দুর রাজ্জাক দেওয়ান ফাউন্ডেশন’। এ ফাউন্ডেশনের সংকলন ও সম্পাদনা পরিষদ দীর্ঘ সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে মরমী সাধক মাতাল কবি আব্দুর রাজ্জাক দেওয়ান স্মারক গ্রন্থ ‘যদি ভুল বুঝে চলে যাও’ প্রকাশ করে ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। এই গ্রন্থটির উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন ইকবাল জাফর এবং সম্পাদক ছিলেন মহসীন দেওয়ান লিটন।

এর পর নানা শ্রমসাধ্য পথ পেরিয়ে ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাতাল রাজ্জাকের লেখা গানের সংকলনের প্রথম খণ্ড ‘বাউল অঞ্জলী’ বের করে ‘মরমী সাধক মাতাল কবি আব্দুর রাজ্জাক দেওয়ান ফাউন্ডেশন’। এ গ্রন্থটির সংকলন ও সম্পাদনায় ছিলেন ইকবাল জাফর, মহসীন দেওয়ান লিটন, সুজন দেওয়ান, উম্মে সালমা মামণি ও কামাল দেওয়ান।

অভিযোগ উঠেছে ‘বাউল অঞ্জলী’র গান ও অন্যান্য বিষয় ‘নকল’ করে বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক ড. তপন বাগচী ‘মাতাল রাজ্জাক: গীতিমালা’ নাম দিয়ে এবার বাজারে এনেছেন। বইটি প্রকাশ করেছে ‘আলোকায়ন’ নামের একটি প্রকাশনী। এটির কর্ণধার জামাল নাসের মুকুল।

বিজ্ঞাপন

মরমী সাধক মাতাল কবি আব্দুর রাজ্জাক দেওয়ান ফাউন্ডেশনের অভিযোগ, ড. তপন বাগচী ও প্রকাশক জামাল নাসের মুকুলের যোগসাজসে ‘চৌর্য বৃত্তির’ কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। গ্রন্থ স্বত্ব দেখানো হয়েছে কবির বড়পুত্র ও তার পরবর্তী বংশধরকে। অর্থাৎ কবির দুই সন্তানের ভেতর যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছে, সেটাকে এখানে কাজে লাগানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. তপন বাগচী সারাবাংলাকে বলেন, “অভিযোগ থাকলেই সেটি যে সত্য হয়ে যায়, বিষয়টি তা না। মাতাল রাজ্জাকের প্রতি আগ্রহ আমার অনেক আগে থেকেই ছিল। তার প্রথম পুত্র বন্ধুবর কাজল দেওয়ান অনেক আগেই আমাকে অনুরোধ করেছিল। সেটা তাও ২০১৪ সালে অর্থাৎ ওই দু’টি বইয়ের (‘যদি ভুল বুঝে চলে যাও’ ও ‘বাউল অঞ্জলী’) আগেও। কাজল দেওয়ান আমাকে জানিয়েছিলেন যে, তার সংগৃহীত গানই তাদেরকে (ইকবাল জাফর ও মহসীন দেওয়ান লিটন) সরবরাহ করেছিলেন।”

‘এর দুই তিন বছর পর কাজল দেওয়ান তার সংগ্রহ আমার কাছে বলা যেতে পারে উজাড় করে দিয়েছেন। যা আমার সংগ্রহ এবং পরিশোধিত একটি সংকলন। এর আগে যে দু’টি সংকলন বেরিয়েছে তার থেকে অগ্রন্থিত নতুন গানেরও সংকলন আছে। আমি যেন একটা ভূমিকা লিখে দিই। সেই কাজটিই আমি করেছি। আমি মনে করি মাতাল রাজ্জাক যে পর্যায়ের গীতি কবি, তার তৃতীয় সংকলন আমাকে দিয়েছে, এতে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। আমি মনে করি এরকম আরও ১০টি সংকলন হওয়া উচিত’- বলেন ড. তপন বাগচী।

এই গ্রন্থে স্থান পাওয়া গানগুলো কি আপনি বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন, নাকি সব কাজল দেওয়ান দিয়েছেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব গান কাজল দেওয়ানই দিয়েছেন। ওরা (ইকবাল জাফর ও মহসীন দেওয়ান লিটন) যে সংকলনটা করেছিল, সেটা.. কাজল দেওয়ান আমার কাছে দাবি করেছে যে, শুধু গান সরবরাহ করেন না, পৃষ্ঠপোষকতাও দিয়েছেন। আমিও তারই (কাজল দেওয়ান) অনুরোধে করেছি। ওরা যে বলেছে কাজল দেওয়ান জানে না, বিষয়টা তা না।’

বিজ্ঞাপন

‘বাউল অঞ্জলী’ গ্রন্থের সম্পাদক ইকবার জাফর সারাবাংলাকে বলেন, “কাজল দেওয়ান আমাদের একটা গানও সরবরাহ করেননি। আমরা মাতাল কবির সহধর্মিণী ও তার ছেলে প্রয়াত সুজন দেওয়ানের কাছ থেকে বেশকিছু গান সংগ্রহ করেছি। বাকি গানগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মাতাল কবির শিষ্য, ভক্ত, অনুরাগীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এ কাজে আমাদের সময় ও শ্রম যেমন গেছে, তেমনি অর্থও খরচ হয়েছে প্রচুর। আর কাজের পুরো পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ‘মরমী সাধক মাতাল কবি আব্দুর রাজ্জাক দেওয়ান ফাউন্ডেশন’। এখানে কাজল দেওয়ানের কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই।”

দীর্ঘ আট বছর অক্লান্ত পরিশ্রমক করে আমরা গানগুলো সংগ্রহ করেছিলাম। ‘‘মাতাল রাজ্জাক: গীতিমালা’’ গ্রন্থে যে গানগুলো স্থান পেয়েছে সেগুলোর সংগ্রহের প্রমাণ তপন বাগচী, কাজল দেওয়ান বা আলোকায়নের জামাল নাসের মুকুল দেখাতে পারবে না। পারবে কেবল সেই অংশটুকু, যে অংশটুকু হাজার হাজার মানুষ দেখাতে পারবে। অর্থাৎ কবির অডিওর সামান্য কয়েকটি গান এবং অতি ক্ষুদ্র কয়েকটি পুস্তিকা। অতএব, তাদের এই অসততা ও নকল ঢাকার কোনো পথ নেই’বলেন ইকবাল জাফর।

অমর একুশে বইমেলায় ‘মাতাল রাজ্জাক: গীতিমালা’ বইটির খোঁজ-খবর নিতে আলোকায়ন প্রকাশনীর স্টলে গেলে বিক্রয়কর্মী মো. রবিউল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, “শুনেছি বইটা নিয়ে ‘ক্যাচাল’ হয়েছে। তাই স্যার (প্রকাশক) বলেছেন বইটি নামিয়ে ফেলতে। আমরা এটা নামিয়ে ফেলেছি। প্রদর্শন ও বিক্রি বন্ধ আছে।”

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

টপ নিউজ ড. তপন বাগচী বই মেলা. বাংলা একাডেমি

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর