ঢাবি অ্যালামনাইয়ের মিলনমেলা ঘিরে উচ্ছ্বাস, আছে অভিযোগও
১০ মার্চ ২০২২ ২২:৪১
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ, মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ‘শতবর্ষের মিলনমেলা’র প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে আয়োজক কমিটি। এই মিলনমেলায় অংশ নিতে এরই মধ্যে নিবন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ৯ হাজার ৩৩৭ জন শিক্ষার্থী। তাদের অনেকের পরিবারের সদস্যরাও এ আয়োজনে অংশ নেবেন। সব মিলিয়ে এই আয়োজন ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছড়িয়েছে উচ্ছ্বাসের আবহ। তবে এরই মধ্যে মিলনমেলার প্রস্তুতি পর্যায়ে উপহার সামগ্রী বিতরণে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা।
আগামী শনিবার (১২ মার্চ) দেশের অন্যতম শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এই মিলনমেলা হওয়ার কথা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বিকেলে ওই ভেন্যুতেই মিলনমেলা বিষয়ে সার্বিক তথ্য জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সভাপতি এ কে আজাদ, সিনিয়র সহসভাপতি মোল্লা আবু কাউসার, মহাসচিব রঞ্জন কর্মকারসহ অন্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, শতবর্ষে যেখানে পৌঁছানোর কথা ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। আমরা দেখেছি বিশ্বের এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র ১০০ র্যাংকিংয়ের ভেতরে আনতে আমাদের সংগঠন কাজ করছে। ৩০-৪০ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সুযোগ-সুবিধাগুলো ছিল, সেগুলো দিন দিন কমে আসছে। আপনারা দেখবেন, ষাটের দশকের পাঠাগার, মেডিকেল সেন্টার কিন্তু এখনো আগের মতোই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাড়লেও সেগুলোর ধারণক্ষমতার ও সক্ষমতা বাড়েনি।
তিনি আরও বলেন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বছরে সাড়ে তিন কোটি থেকে চার কোটি টাকার বৃত্তি দিয়ে থাকে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য যে বাজেট প্রয়োজন, তা সরকার থেকে আসছে না। আমরা সেখানে অনুদান দিতে চাই। ঢাবিকে র্যাংকিংয়ে বিশ্বের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনতে আমরা ১০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের লক্ষ্য নিয়েছি। অ্যালামনাই প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আগামী দুয়েক বছরের মধ্যে বাকি তহবিল সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্বের ২৫টি দেশের সাবেক শিক্ষার্থীরা এই মিলনমেলায় যুক্ত হবেন। এরই মধ্যে ৯ হাজার ৩৩৭ জন সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যসহ ১১ হাজার ৩২৭ জন নিবন্ধন করেছেন এই আয়োজনে অংশ নেওয়ার জন্য। তারা এখনো নিবন্ধন করেননি, তাদের নিবন্ধন সম্পন্ন করার আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
উচ্ছ্বাসের সঙ্গে রয়েছে অভিযোগও
ঢাবি অ্যালামনাইয়ের এই ‘শতবর্ষের মিলনমেলা’ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ-উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূরণের সঙ্গে সঙ্গে মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই আয়োজনে অংশ নিতে মুখিয়ে রয়েছেন সবাই। এই আয়োজনে অংশ নিতে ৯ হাজারেরও বেশি সাবেক শিক্ষার্থীর নিবন্ধন তারই প্রমাণ দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীদের গ্রুপগুলোতেও পুরনো মুখগুলোর ফের এক আয়োজনে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ দেখা গেছে। তবে এই উচ্ছ্বাসের মধ্যেও এই আয়োজনের উপহার সামগ্রী বিতরণসহ কিছু বিষয় নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। উপহার সামগ্রীর নিম্ন মান, বিভিন্ন সামগ্রী না পাওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের গ্রুপ ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়শনে শফিকুল আলম রাসেল নামে একজন লিখেছেন, শতবর্ষের মিলনমেলা উপলক্ষে আজ আমার সিরিয়াল অনুযায়ী উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করতে গিয়ে একইসঙ্গে হতাশ ও লজ্জিত হয়েছি। দুপুর ৩টার পর বুথের সামনে গিয়ে দেখি, উপহার সামগ্রীর সংকটের কারণে তা ঠিকমতো বিতরণ করা হচ্ছে না। আমার মতো আরও অনেককেই বলা হয়, একটু অপেক্ষা করুন। উপহার চলে আসবে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সেগুলো পেলেও এর মধ্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের এই মিলনমেলা হওয়ার কথা ছিল দুই দিনব্যাপী। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে এই আয়োজন পিছিয়ে যায়। সপ্তাহ দুয়েক আগে ঘোষণা দেওয়া হয়, দুই দিনের পরিবর্তে এই মিলনমেলা হবে একদিনের। সাবেক শিক্ষার্থীরা বলছেন, দুই দিনের বদলে আয়োজন একদিনের হওয়ায় এটি আরও জাঁকজমকপূর্ণ হওয়ার কথা ছিল।
ঢাবির আরেক সাবেক শিক্ষার্থী আনোয়ার আজিম লিখেছেন, আজ উপহার সামগ্রী গ্রহণ করলাম। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তির এই অনুষ্ঠানের উপহার সামগ্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি বলেই আমার বিশ্বাস। কালো রঙের চটের ব্যাগে পানি লাগলেই রঙ উঠে নষ্ট হবে এবং ব্যবহারকারীর পোশাক নষ্ট করবে। সর্বোপরি দুই দিনের পরিবর্তে অনুষ্ঠান একদিন করায় বাকি একদিনের উদ্বৃত্ত অর্থ থেকেও ভালো কিছু উপহার দেওয়া যেত। হতে পারত টি-শার্ট, ক্যাপ বা মগ, যা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যেত। এ বিষয়ে অ্যালামনাই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও মিলনমেলার আয়োজন নিয়ে অব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অভিযোগের কথা উঠে আসে। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে সংগঠনটির মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার বলেন, ‘যেসব অব্যবস্থাপনার কথা বলছেন, সেগুলো প্রথম দিন হয়েছিল। আগামীকালের মধ্যে সবাই সবকিছু পেয়ে যাবে।’
শনিবার যত আয়োজন
ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার সংবাদ সম্মেলনে মিলনমেলার অনুষ্ঠানসূচি ঘোষণা করেন। তিনি জানান, অনুষ্ঠানের ভেন্যু ঢাবি কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ অ্যালামনাই ও অতিথিদের জন্য খুলে দেওয়া হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ ও শোক প্রস্তাবের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ১০টায়। ১০টা ৫০ মিনিটে মিলনমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত বিভিন্ন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হবে। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ শিল্পীর ১০০ ছবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রপ্রদর্শনীরও উদ্বোধন করা হবে। এ পর্যায়ে বক্তব্য রাখবেন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথিরা।
দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে শুরু হবে ‘বাংলাদেশের পদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে সভাপতিত্ব করবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এরপর বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ জন্য গুণীজনকে মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হবে। এরপর সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের এই মিলনমেলা।
সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা