যশোর সীমান্ত দিয়ে দেশের সোনা পাচার হচ্ছে ভারতে
১১ মার্চ ২০২২ ১২:০৬
ঢাকা: প্রায়শই যশোরের বিভিন্ন স্থান থেকে সোনা ধরা পড়ার খবর গণমাধ্যমে উঠে আসে। মাঝে মাঝে এত সোনা ধরা পড়ে বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জব্দ কওে যে স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে কোথা থেকে আসে আর কারা জড়িত? তারা কেন ধরা পড়ে না? অভিযোগ রয়েছে সোনা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে পরিণত হয়েছে যশোরের বিভিন্ন সীমান্তের অবৈধ পকেট ঘাটগুলো। ভারতে সোনর চাহিদা এবং দাম বেশি হওয়ায় এ সীমান্ত পথে স্বর্ণ পাচার করছে আন্তর্জাতিক ও দেশি পাচারকারীরা। সীমান্তে সোনা পাচারে সবার উপরে রয়েছে শার্শা উপজেলার অন্তত ২৫টি সিন্ডিকেট। বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন পরিচয়ের প্রতিনিধিদের সব সোনার হিস্যা দিতে হয় অবৈধ ঘাট মালিকদের।
সীমান্তের সূত্রগুলো বলছে— প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনা যশোরের বিভিন্ন ঘাট দিয়ে ভারতে পাচার হয়। শার্শা উপজেলায় যে সব সিন্ডিকেট আছে তাদের অধিকাংশের মূল মালিক হচ্ছে আন্তর্জাতিক সোনা পাচার চক্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মূল হোতা আলোচিত নাসির, রমজান এবং দেব। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন পাচার হয় অধিকাংশ সোনা। এ ছাড়াও সাদীপুর, দৌলতপুর এবং বড়আঁচড়া রেল লাইন দিয়েও বিপুল পরিমাণ সোনা পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযান চললেও সোনা পাচারের এসব সিন্ডিকেটের অঘোষিত মালিকরা রয়েছে বহাল তবিয়তে। এই চক্রের খুঁটির জোর বেশি থাকার কারণে এদের টিকিটিও কেউ স্পর্শ করছে না বলে জোর মতামত রয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ার পাশাপাশি ঘাটে-ঘাটে বিপুল পরিমাণ হিস্যা দিতে পারার কারণে এবং সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকায় প্রতিদিন পাচার হচ্ছে কোটি-কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ সোনার বার।
পাচার হওয়া সোনার খুব কমই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। তবে যখন ধরা পড়ে তখন কেজি কেজিই ধরা পড়ে। কেজি কেজি সোনা একবার ধরা পড়ার পর এ কথা আলোচনায় আাসে যে এতটা ধরা পড়লে পাচার হয় কত? বিপুল পরিমাণ সোনা পাচারের কথা স্বীকার করেছেন বিজিবি ৪৯ ব্যটালিয়নের সিও। তার মতে তাদের তৎপরতা রয়েছে, ধরাও হচ্ছে তবে প্রতিনিয়তই পাচারকারীরাও রুট পাল্টিয়ে নতুন রুটে নতুনভাবে পাচার করে।
অভিযোগ রয়েছে— বিজিবি সোনা পাচার ধরার ব্যপারে যতটা উদগ্রীব পুলিশের তৎপরতা অতটা চোখে পড়ে না। অনেকের অভিযোগ পুলিশ দেখেও দেখে না।
তাদের দাবি, সোনা ১০ বার ধরলে প্রচারিত হয় ২০টি বার ধরে ১০টি হজম করে বাদ বাকি উদ্ধার দেখিয়েছে। এ কথার সত্যতাও কিছুটা মানতে রাজি সূত্রগুলো। সাধারণত যা উদ্ধার হয় প্রচার হয় আরো বেশি। পুলিশের ক্ষেত্রে এই প্রচার বেশি পায় বিজিবির ক্ষেত্রে ততটা পায় না।
৪৯ বিজিবি‘র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে— ২০২০ সালে তারা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মোট ৪১ কেজি ৭২২ গ্রাম যার মূল্য ২৭ কোটি ৯৩ লাখ ৮২ হাজার ৩৪০ টাকা, ২০২১ সালে উদ্ধার হয় ১৩ কেজি ১৪৩ গ্রাম যার মূল্য ৯ কোটি ৫ লাাখ ৬ হাজার টাকা, ২০২২ সালে এ পর্যন্ত উদ্ধার ১ কেজি ১৬৫ গ্রাম যার মূল্য প্রায় কোটি টাকা।
সূত্রের দাবি উদ্ধার হওয়া এসব চালান পাচারকারীরাই ধরিয়ে দেয়। সে সুযোগে সীমান্ত নিরাপদ রেখে পাচার করে একেক চালানে ১-২ মণ যাাতে ধরিয়ে দেয়া সেনার দামও লাভ যুক্ত করে উসুল করা যায়।
সীমান্তের বিভিন্ন সূত্র বিভিন্ন সময়ে এই পাচারকারী হিসেবে যাদের নাম সামনে এনেছে এবং যাদেও বিরুদ্ধে বার বার অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে সেগুলি উল্লেখ করা যেতে পারে।
সূত্রমতে জানা যায়— বিভিন্ন সময়ে আলোচিত নাসির, রমজান, দেবকুমার, জসিম এবং মহব্বত ছাড়াও সাদীপুরের আলোচিত বাবু মেম্বার ও কামাল, ছোট-আঁচড়ার মনি, হায়দার, রাকেশ, আশা ও জাকির, পুটখালীর রেজা ও জিয়া, রঘুনাথপুরের ফেন্সি সম্রাট বাদশা এখন মাদকের পাশাপাশি নাসির-রমজানের সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত। সম্রাট ও আখের, গাতী পাড়ার করিম ও শহিদুল, ছোট আঁচড়ার বকুল, পুটখালীর পলাশ, আরিফ, ইকবাল ও আলমগীর, কাঠুরিয়ার খোকা ও ছোট-আচড়ার খায়ের, বড়আঁচড়ার জসিম ও কামাল, পুটখালীর মিলন ও জামাল, দুর্গাপুর রোডের জিয়া, ধান্যখোলার বাচ্চু এবং ঘিবার শাহজাহানের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনা ভারতে পাচার হচ্ছে।
তবে যশোরের শার্শা, বেনাপোল ও চৌগাছার সবগুলো সীমান্ত দিয়ে যত সোনা যায়, পুটখালী সীমান্ত দিয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি সোনা ভারতে পাচার করা হয়। অভিযোগ রয়েছে— বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঘাটমালিক নাসির, রমজান ও দেবকুমার সিন্ডিকেট এবং তাদের অধীন অন্ততঃ ৭টি পকেট ঘাট দিয়ে প্রতিদিন তার দ্বিগুণ পরিমাণ সোনা পাচার করে।
আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আবার কখনও কখনও তাদের ম্যানেজ করে চলে সোনা পাচারের রমরমা ব্যবসা। ঢাকা থেকে থেকে অন্তত চার দফা হাত বদল হয়ে সোনার বারগুলো পাচার করা হয় ভারতে।
সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে ট্রেন অথবা বাসে করে একটি চক্র সোনার বার বিভিন্নভাবে নিয়ে আসে যশোরের বিভিন্ন পয়েন্টে। পরিবহন কাউন্টার অথবা তাদের নির্ধারিত স্থানে স্বর্ণের চালানটি হাত বদল হয়ে চলে যায় স্থানীয় এজেন্টের হাতে। এরপর স্থানীয় এজেন্টরা সেই স্বর্ণের চালান নিয়ে যায় পুটখালী, গাতীপাড়া, বড়আঁচড়া, রঘুনাথপুর, সাদীপুর, শিকারপুর, দৌলতপুর, ঘিবা সীমান্তের নির্ধারিত কোনও বাড়িতে। সেখান থেকে সীমান্ত পার হয়ে ভারতের সবচেয়ে বড়ডিলার অপু, বস্ গৌতম, ছোট গৌতম, পিন্টু, বরুণ, ডাকুসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের হাতে সোনার চালান পৌঁছে দেওয়া হয়।
সূত্রটি আরও জানায়, অদৃশ্য কারণে পুলিশ সচরাচর সোনার চালান আটক করে না। এব্যাপারে বিজিবি ও র্যাবের তৎপরতা বেশি। এরপরই রয়েছে র্যাবের অভিযানের ভয়। তাই পাচারকারী চক্রের সদস্যরা বিজিবি-র্যাবের হাত থেকে রক্ষা পেতে বেছে নিচ্ছে নতুন নতুন কৌশল। বিভিন্নভাবে সোনার চালান নিয়ে সীমান্তে পৌঁছে দিচ্ছে এই চক্রের ক্যাডাররা।
এর আগে, পাসপোর্টধারী যাত্রীরা ঢাকা থেকে স্বর্ণ নিয়ে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধের কারণে পাসপোর্ট যাত্রীদের মাধ্যমে বর্তমানে সোনা পাচার কমলেও থেমে নেই। মেডিকেল ভিসা নিয়েও সংঘবদ্ধ চক্রটির অনেক সদস্য পাচার করছে সোনার ছোট-বড় চালান। এ ছাড়া কিছু কিছু সিএন্ডএফ কর্মচারীও সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সিএন্ডএফ কর্মচারীর ও পাসপোর্ট যাত্রীর কাছ থেকে কয়েক দফায়-দফায় স্বর্ণেও চালান আটক হয়েছে। ঢাকার বড় কয়েকটি সোনার দোকান থেকে এসব স্বর্ণের চালান পাচারকারীদের কাছে বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে তুলে দেওয়া হয়। দুবাই থেকে বিভিন্নভাবে এসব সোনার চালান এসব ব্যবসায়ীদের ডেরায় পৌঁছায়। এরপর বিভিন্নভাবে পাচার করা হয় ভারতে। যশোরের বিভিন্ন সীমান্তবাসীর অভিযোগ, সোনা পাচারকারীরা সবাই পরিচিত। সব ঘাট ম্যানেজ করেই এই চক্র প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনা ভারতে পাচার করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ম্যানেজ যদি না হতো তা হলে সোননা চোরাচালান এত দিন বন্ধ হয়ে যেতো। সূত্রের মতে, তাদের আটকের কোনো উদ্যোগ নেই বলেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সোনা পাচারকারীরা।
একাধিক সূত্র আরও জানায়, পুলিশ সচরাচর সোনার চালান আটক করে না। বিজিবি এ ব্যাপারে বেশি তৎপর। যশোরের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা খেকে যত সোনা আটক হয়েছে তার অধিকাংশ আটক করেছে বিজিবি। সর্বশেষ সোনার চালান আটক হয় শার্শা উপজেলার বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী সীমান্ত থেকে ২০ পিস স্বর্ণের বারসহ নাসির-জসিম সিন্ডিকেটের ২ পাচারকারীকে আটক করেন বিজিবি সদস্যরা।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে তাদের আটক করা হয়। আটককৃরা হলো, নাসিরের ক্যাডার বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে লিটন হোসেন (২৫) ও একই এলাকার আজিজুর রহমানের ছেলে হাফিজুর রহমান (২৮)।
বিজিবি জানায়, স্বর্ণ পাচারের গোপন খবরে, বেনাপোল বালুন্ডা কেষ্টপুর গ্রামস্থ পাকারাস্তার উপর থেকে বিজিবি সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ২০ পিস স্বর্ণের বার (ওজন ৩.৮৯১ কেজি), ১টি মোটর সাইকেল, ৩টি মোবাইল ফোন ও নগদ ৬,৩৯০ টাকাসহ তাদেরকে আটক করা হয়।
এর আগে, গত ১৩ জানুয়ারি। এদিন যশোরের শার্শার শ্যামলাগাছি এলাকা থেকে এক কেজি ১৬৫ গ্রাম ওজনের ১০টি স্বর্ণের বারসহ ইসমাইল হোসেন (৩৮) নামের এক পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি সদস্যরা। ইসমাইল বেনাপোল পোর্ট থানার নামাজ গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর যশোর-বেনাপোল সড়কের নতুনহাট এলাকায় চালিয়ে বিজিবি সদস্যরা বেনাপোলগামী একটি মোটরসাইকেলের দু’চালকের শরির তল্লাশি করে উদ্ধার করে পাঁচ কেজি আটশ’ ৪০ গ্রাাম ওজনের ৫০টি সোনার বার। এসময় সোনার বারসহ তৌহিদুল ইসলাম (৪৩) ও ইমরান হোসেন (৩৫) নামে দুই পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি।
একই দিন পুটখালী সীমান্তের মসজিদ বাড়ি পোস্ট থেকে ১২টি সোনার বারসহ কামরুল হাসান (২০) নামে একজনকে আটক করেন ২১ বিজিবি সদস্যরা। আটক কামরুল হাসান বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী উত্তরপাড়া গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর যশোরের বেনাপোল পুটখালী সীমান্ত থেকে মোটরসাইকেল সহ এক কেজি ৪০২ গ্রাম ওজনের ১২ পিচ সোনার বার দুই পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি।
আটককৃতরা হলো, বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের মোক্তার আলীর ছেলে লিটন মিয়া (২৮) ও একই এলাকার আলী কদর মন্ডলের ছেলে শাহজাহান মন্ডল (৩২)।
গত বছরের ১৭ মে যশোরের চাঁচড়া পুলিশ চেকপোস্টের সামনে বেনাপোলগামী যাত্রী বাসে অভিযান চালিয়ে এক কেজি ১৬৩ গ্রাম ওজনের ১০টি সোনার বার উদ্ধার করে। এ সময় সুমন মিয়া (৩০) নামে এক পাচারকারীকে আটক করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সদস্যরা।
গত ১ এপ্রিল দুপুরে যশোরের পুটখালী সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় দুই কেজি ওজনের ১৫টি সোনার বারসহ রানা হামিদ (২৬) নামের একজনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটক রানা হামিদ বেনাপোল পোর্ট থানার খলসী গ্রামের আব্দুল গফফারের ছেলে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি যশোর-মাগুরা সড়কের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সামনে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা গামী একটি যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে ৩২ পিস সোনার বিস্কুটসহ দুই যুবককে আটক করেছে র্যাব-৬ খুলনার সদস্যরা।
গত ২২ ডিসেম্বর ভারতে পাচারের সময় ২০ পিস সোনারবারসহ এক সোনা পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি। যশোর শহরের পৌরপার্কের সামনে থেকে ওই পাচারকারীকে আটক করা হয়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের মূল্য এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর যশোর শহরের পৌর পার্ক এলাকা থেকে ২০টি সোনার বারসহ ইমাদুল হোসেন (২৬) নামে এক যুবককে আটক করে বিজিবি। আটক ইমাদুল বেনাপোলের উত্তর কাগজপুকুর এলাকার মো. আসলাম হোসেনের ছেলে।
একই বছরের ২০ ডিসেম্বর যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের জন্য ঢাকা থেকে আনা প্রায় ১১ কেজি ওজনের ৯৪টি সোনার বার উদ্ধার এবং তিনজনকে আটক করে বিজিবি।
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের নতুনহাট ইটভাটা সংলগ্ন এলাকা থেকে এসব সোনার বার এবং প্রাইভেটকারসহ তাদের আটক করা হয়। আটকরা হলো-যশোরের শার্শা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৩৮), আমলায় গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে ইয়াকুব আলী (২৮) ও কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার নলচক গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২৩)।
এর আগে, গত ১ ডিসেম্বর যশোর শহরতলীর বাহাদুরপুর থেকে সাড়ে তিন কেজি ওজনের ৩০টি সোনার বারসহ ৩জনকে আটক করে বিজিবি। বেনাপোলগামী ফেম পরিবহনের একটি বাস তল্লাশি করে তাদের আটক করা হয়।
সাম্প্রতিককালের সব চেয়ে বড় সোনার চালান আটক হয় ২০১৮ সালের ৯ ও ১০ আগস্ট। এই দু’দিনে পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে শার্শার নারিকেলবাড়িয়া ও শিকড়ি এলাকা থেকে প্রায় ৭৫ কেজি সোনার বারসহ ৩ ব্যক্তিকে আটক করা হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৪৯ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা এই অভিযান চালায়। উদ্ধার হওয়া সোনার দাম ৩৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আটক ৩ ব্যক্তি হলো শার্শা উপজেলার শিকারপুর গ্রামের মো. মহিউদ্দিন, বেনাপোলের সফুরা খাতুন ও ইসরাফিল।
এসব অভিযানের কারণে পাচারকারী চক্রের সদস্যরা বিজিবির ফাঁকি দিতে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। সূত্র বলছে, বিভিন্ন সময় স্বর্ণের এসব চালান ধরা পড়ায় পাচারকারীরা কৌশল বদল করে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ভারতে সোনার দাম বেশী হওয়ায় এ সীমান্ত পথে পাচার করছে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালানীরা। ফলে এ সুযোগে চোরাচালানীরা প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনা পাচার অব্যাহত রেখেছে। তবে রাঘব-বোয়ালরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ারবাইরে। সীমান্তের সূত্রগুলোর দাবি— এ সব সোনার অধিকাংশের মালিক রমজান, নাসির, দেব এবং মহব্বতসহ সীমান্তের বিভিন্ন সিন্ডিকেট।
এ ব্যাপারে শার্শা থানার ওসি মামুন খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ সোনার চালান আটক করে না এ কথা ঠিক নয়। তবে, বদনামের ভয়ে পুলিশ সোনার চালান ধরতে উৎসাহ দেখায় কম। কারণ, একটি সোনার চালান আটকের পর প্রচার হয় আটককৃত সোনার চেয়ে অনেক বেশি। এতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। কখনও কখনও অপরাধ না করেও শাস্তির খড়্গ নেমে আসে সোনা আটককারী কর্মকর্তাসহ থানা কর্তা উপর। বিনা দোষে শাস্তিও ভোগ করতে হয়। এ কারণে, পুলিশ সোনার চালান আটকে বেশি আগ্রহ দেখায় না।’
৪৯ বিজিবি যশোরের সিও লে. কর্ণেল শাহেদ মিনহাজ জানান, বিজিবি সীমান্ত রক্ষায় সব সময় চেষ্টা করছে-করছে পাচার রোধ। তারপরও নিরঙ্কুশ ও নিশ্চিত করা যায়নি। করোনার সময় বেশ কিছুদিন সীমান্ত বন্ধ থাকায় চোরাচালান কম ছিলেঅ। তাছাড়া ধরা পড়ার পর পাচারকারীরা কৌশল বদলায়, নতুন রুট তৈরি করে। ব্যবসায় তাদেও লাভ বেশি তাই ঝুঁকিও তারা নেয়। তারপরও বিজিবি কাজ করছে। তিনি আশা করেন এক সময় চোরাচালান বন্ধ হবে।
কেনো গডফাদার ধরা পড়ে না বা আলোচিত হোতারা বাইরে থাকে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অনেক সময় পরিত্যক্ত অবস্থায় সোনর বার পাওয়া যায়। বিজিবির অভিযান বুঝতে পেরে পালিয়ে যায়। যারা ধরা পড়ে তারা বাহক মাত্র। তারা নানা কৌশলে হাত বদল করে। একেটা গ্রুপ একেক অংশে দায়িত্ব পালন করে, যার কাছ থেকে তারা গ্রহণ করে তাদেও যেমন তারা চেনে না তেমনি যার কাছে দেয় তাদেকেও চেনে না। কিছু সাংকেতিক, কিছু সিম্বল তারা ব্যবহার করে একে অপরের কাছে বদল করে। এ কারণে যেমন শিকড়ের গোড়ায় যাওয়া যায় না। তেমনি আটকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে দিতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে রিমান্ডের ব্যবস্থা করা হলে হয়ত ভেতরে যাওয়া সম্ভব।’
সারাবাংলা/একে