ঢাবির বঙ্গবন্ধু হলে ‘গেস্টরুমে’ নির্যাতনের অভিযোগ
১১ মার্চ ২০২২ ১৪:৫৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত ‘গেস্টরুমে’ স্টাম্প দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে চার ছাত্রলীগকর্মীর বিরুদ্ধে। এছাড়া সংগঠনটির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকার অভিযোগে ১০-১২ জন শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ২০১(ক) নম্বর রুমে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম আবু তালিব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্তরা হলেন— সমাজকল্যাণ বিভাগের শেখ শান্ত আলম, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শাহাবুদ্দিন ইসলাম বিজয়, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ইমদাদুল হক বাঁধন ও আইন বিভাগের নাহিদুল ইসলাম ফাগুন। তাদের সবাই তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত চার জনই বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদি হাসান শান্তর সক্রিয় অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এদিকে, মেহেদি হাসান শান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের অনুসারী।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তৃতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবু তালিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ— তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে হলের সমাজকল্যাণ বিভাগের সিনিয়র শেখ শান্ত আলমের সামনে ধূমপান করেছেন। এই অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে আবু তালিবকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন অভিযুক্ত চার ছাত্রলীগকর্মী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী সারাবাংলাকে বলেন, এক পর্যায়ে আবু তালিবকে তারা নির্দেশ দেন হাত ব্যবহার না করে সিগারেট আগুন ধরাতে। পরে তালিবকে একাধিকবার স্টাম্প দিয়ে আঘাত করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আবু তালিব বর্তমানে হলের বাইরে অবস্থান করছেন।
এদিকে, ঘটনার সত্যতা নেই বলে দাবি করেছেন অভিযুক্তদের একজন শেখ শান্ত আলম। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, আমি তো ‘গেস্টরুমে’ই যাই না। আপনি অভিযোগকারীকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করুন। এ ধরনের কিছু হয়নি।
অভিযুক্ত আরেক ছাত্রলীগকর্মী ইমদাদুল হক বাঁধন বলেন, অভিযোগটি সত্য নয়। আপনি ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলুন।
বাকি দুই অভিযুক্ত নাহিদুল ইসলাম ফাগুন ও শাহাবুদ্দিন বিজয়কে একাধিকবার ফোন করাও হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদি হাসান শান্তকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনিও রিসিভ করেননি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আকরাম হোসেনের মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
হলের বিভিন্ন বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর থেকে বঙ্গবন্ধু হলে ‘গেস্টরুম’ সংস্কৃতির ‘বাড়বাড়ন্ত ’ অবস্থা। হল শাখা ছাত্রলীগের মেহেদি হাসান শান্তর গ্রুপে সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই রাজনৈতিক এই গেস্টরুম কালচারে উপস্থিত হতে হয় প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদেরও।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘গেস্টরুম’ মূলত ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন পরিচালিত একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। ‘গেস্টরুম’ প্রক্রিয়ায় সাপ্তাহিক দুই থেকে তিন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসেন দ্বিতীয় বর্ষের সেসব শিক্ষার্থী, যারা ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের কর্মী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে এখন ‘গেস্টরুম’ পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের হল শাখার নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সংকটকে পুঁজি করে ছাত্রলীগ ‘গেস্টরুম’ কালচার নামে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ করায় বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর