ভিসা জটিলতায় বেনাপোল দিয়ে কমছে যাত্রীদের যাতায়াত
১১ মার্চ ২০২২ ১৭:০৩
বেনাপোল: ভিসা জটিলতায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রীদের যাতায়াত কমে গেছে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ রোধে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াতে বিভিন্ন শর্তারোপ করে ভারত। বর্তমানে ওমিক্রনের প্রকোপ কমলেও যাত্রীরা সড়ক পথে ভারত যেতে ভিসার আবেদন করলেও দূতাবাস দিচ্ছে আকাশ পথ। ফলে বন্দর দিয়ে যাত্রীদের যাতায়াত কমছে প্রতিনিয়ত।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সকাল থেকে সারাদিন বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে গেছে ৬৭৭ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী। আর ভারত থেকে এসেছেন ৪৯৮ জন। ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য সুরক্ষা জোরদার রয়েছে বেনাপোল বন্দরে।
বাংলাদেশি যে সমস্ত যাত্রী ভারতে যান তার অধিকাংশই রোগী। বিমানে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব। বর্তমানে আকাশ পথে বিমান ভাড়া ৩ গুণেরও বেশি তারপরও এক সপ্তাহের আগে মিলছে না কোনো টিকিট। এতে জরুরি প্রয়োজনে সময় মতো যাতায়াত করতে না পেরে চিকিৎসা ও ব্যবসাখাত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত মাসেও প্রতিদিন যাত্রী যাতায়াত ছিল প্রায় দুই হাজারের মতো। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজারের নিচে।
জানা গেছে, চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা আর ভ্রমণখাতে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় ২০ লাখ পাসপোর্ট যাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করতেন। ভারতে করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত। এতে জরুরি প্রয়োজনে ভারতে যেতে না পেরে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যাত্রীরা।
সবশেষ নতুন ধরণ ওমিক্রন ছড়িয়েছে বিশ্বের ১৩৫টির বেশি দেশে। করোনা প্রাদুর্ভাব সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ও যাত্রী যাতায়াত নিরুৎসাহিত করতে দেখা গেছে ভারতীয় দূতাবাসকে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের ব্যবসা, চিকিৎসা বা শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভারত যাত্রা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চিকিৎসা ভিসায় ভারত গমনে ইচ্ছুক পাসপোর্টধারী যাত্রী পূর্ণিমা জানান, ভিসায় সড়ক পথের আবেদন করলেও দূতাবাস দিচ্ছে আকাশ পথের ভিসা। তারপরও তিনগুণ বেড়েছে বিমান ভাড়া। এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের আগে মিলছে না কোনো টিকিট। এত টাকা খরচ করে সাধারণ যাত্রীদের ভারতে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশে যদি চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত থাকতো তাহলে এতো টাকা খরচ করে ভারত যাওয়ার দরকার হতো না।
যাত্রী অঞ্জনা আক্তার লিপি জানান, একবার ভারতে যেতে দুই বার করোনা পরীক্ষা করাতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। বেড়েছে নানা ভোগান্তিও। পরীক্ষার খরচ কমলে সাধারণ যাত্রীরা উপকৃত হতেন।
ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, ‘ব্যবসায়ীক কাজে মাঝে মধ্যে ভারত যেতে হয়। এখন ভারতীয় ইমিগ্রেশনের কড়াকড়িতে ইচ্ছে মত যাওয়া যাচ্ছে না। এতে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী জানান, ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে ভারতফেরত সন্দেহভাজন যাত্রীদের করোনার র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। গত ১৫ দিনে ভারত ফেরত সন্দেহভাজন ৬৪ জন বাংলাদেশিকে পরীক্ষা করে ৪ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের রাখা হয়েছে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা রেড জোনে।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বলেন, ‘বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্থলপথে যাত্রী সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। ভিসা জটিলতার সমাধান ও বিধিনিষেধ প্রত্যাহার না করলে যাত্রী যাতায়াত আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে।’
সারাবাংলা/এমও